অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধি, রাঙ্গামাটি

0

চোখ ধাঁধানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। চারদিকে কাপ্তাই লেকের অথৈ নীল পানির মাঝে ছোট্ট একটি দ্বীপের উপর মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধি। একজন ‘বীরশ্রেষ্ঠ’এর জন্য শ্রেষ্ঠতম সমাধি স্থান। ফরিদপুরের জন্ম নেয়া সিংহ হৃদয়ের মানুষটি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসে কাজ করতেন। যুদ্ধ শুরু হলে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।


পার্বত্য চট্টগ্রামে রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি জলপথ প্রতিরোধ করার জন্য ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক কোম্পনী সৈন্যের সাথে বুড়িঘাটে দায়িত্ব পালন অবস্থায় হঠাৎ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো ব্যাটেলিয়নের দুই কোম্পানী সৈন্য, বেশ কয়েকটি স্পীড বোট এবং দুটি লঞ্চে করে বুড়িঘাট দখলের জন্য আক্রমন করে ও মর্টার এবং অন্যান্য ভারী অস্ত্র দিয়ে অবিরাম গোলা বর্ষণ শুরু করে।

অতর্কিত আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে ও এই সুযোগে কিছু পাকিস্তানি সৈন্য তীরে নেমে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান ঘিরে ফেলে। তীব্র ও ভারী অস্ত্রের আক্রমন প্রতিরোধ করার মতো সক্ষমতা ও প্রস্তুতি না থাকায় মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার সৈন্যদের নিয়ে পেছনে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য কভারিং ফায়ার ছাড়া সম্ভব ছিল না।

মুন্সী আবদুর রউফের এলএমজির কাভারিং ফায়ারে সৈন্যরা নিরাপদে পেছনে সরে যেতে সক্ষম হন। তার ছোড়া গুলিতে স্পিডবোটগুলো ডুবে যায় এবং বেশ কিছু পাকিস্তানি সৈন্য হতাহতের পর লঞ্চ দুটিতে করে নিরাপদ দুরুত্তে সরে যায়।

পাকিস্তানি সৈন্যরা এলএমজির রেঞ্জের বাইরে গিয়ে লঞ্চ থেকে মর্টারে গোলা বর্ষণ করতে থাকে। অকস্মাৎ একটি গোলার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় মুন্সী আবদুর রউফের দেহ। সহযোদ্ধারা পরে তার লাশ উদ্ধার করে নানিয়ারচরের চিংড়ি খাল সংলগ্ন এই টিলার উপর সমাহিত করেন।

বাংলাদেশ সরকার মুন্সি আব্দুর রউফকে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব প্রদর্শন ও আত্মদানের জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাব প্রদান করেছেন এবং বাংলাদেশ রাইফেলস ১৯৭৩ সালে সিপাহী মুন্সী আবদুর রউফকে অনরারি ল্যান্স নায়েক পদে মরনোত্তর পদোন্নতি প্রদান করেছেন।

নানিয়ারচরে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধি যেতে রাঙ্গামাটি ফিসারিঘাট থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা নৌপথে যেতে হয়। আমরা এই বিজয় দিবসে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলাম।