অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

বোয়ালখালী-রাঙ্গুনিয়ার সড়ক যোগাযোগে প্রায় ২৪ হাজার একর পাহাড়ি ভূমি

0
.

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী-রাঙ্গুনিয়ার সাড়ে সাত কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের ফলে প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার একর পাহাড়ি ভূমি আসছে যোগাযোগের আওতায়। প্রায় অসম্ভবকে সম্ভাবনায় রূপান্তর করা হয়েছে বলে দাবি দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষজনের। এ সড়ক নির্মাণের ফলে কর্ণফুলীর নদী ঘেরা দূর্গম পাহাড়ি এ অঞ্চলে দেখা দিয়েছে কৃষি, পর্যটনসহ ব্যাপক সম্ভাবনার।

জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর উপর সড়কসহ রেল সেতু নির্মাণ ও ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প এ সড়কের সাথেই যুক্ত হবে। ফলে চক্রকারে নগরের সাথে বোয়ালখালী-রাঙ্গুনিয়ার অবহেলিত জনপদসহ বান্দরবান জেলা পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগের দূরত্ব কমে আসবে বহুলাংশে।

.

বোয়ালখালী উপজেলার কালুরঘাট থেকে জ্যৈষ্ঠপুরা ভান্ডালজুড়ি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৫ কিলোমিটার সড়ক পথ। রাঙ্গুনিয়া অংশে গুদামঘর থেকে পূর্বমুখী ১১ কিলোমিটার সড়ক। যা পূর্বে থেকে নির্মাণ ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। এর মাঝে পাহাড় আর নদীর কারণে বোয়ালখালী জ্যৈষ্ঠপুরা থেকে রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়নের গুদামঘর যাতায়াতে কোনো সড়কই ছিলো না। যোগাযোগের বাইরে রয়েছে যায় বিশাল পাহাড়ি অঞ্চল।

ফলে পাহাড়ের বিশাল অংশে চাষাবাদ করা হয় না। যাও হয় দূর্গম পাহাড়ি পথ পেড়িয়ে লেবু, পেয়ারা, আদা, পেঁপেসহ নানান সবজি বাজারজাত করতে হিমশিম খেতে হতো কৃষকদের। চলে যেতো পরিবহন ও মজুরিতেই লাভের অংশ। অথচ জ্যৈষ্ঠপুরা থেকে রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়নের গুদামঘর পর্যন্ত মাত্র ৩ কিলোমিটারের পথ। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে তা সাড়ে ৭ কিলোমিটারে গিয়ে ঠেকেছে।

.

শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোকারম বলেন, সড়ক যোগাযোগের কারণে অবহেলিত ছিলো এ বিশাল সম্ভাবনাময় অঞ্চল। কখনো এ অঞ্চলে উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন হবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। প্রায় অসম্ভব এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে তাও ভাবতে পারেনি এ অঞ্চলের মানুষ। ফলে অনেকেই পাড়ি জমিয়েছে শহরে। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪০ বছর পর এ অসম্ভবকে সম্ভব করেছে আওয়ামীলীগ সরকার। ভান্ডালজুড়ি ও কর্ণফুলী নদীর ভাঙ্গরোধে ব্লক বসানো থেকে শুরু করে ব্যাপক পরিবর্তন ও উন্নয়ন হয়েছে এ অঞ্চলে। ভাঙ্গরোধে আরো কয়েকটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

.

এ সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে বোয়ালখালী উপজেলার জ্যৈষ্টপুরা, আমুচিয়াসহ প্রায় সাড়ে ৫ হাজার একর ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার প্রায় ১৯ হাজার একর দূর্গম পাহাড়ি এলাকা যোগাযোগের আওতায় আসবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পাহাড়ে উৎপাদিত ফসল স্বল্প খরচে বাজারজাত করা যাবে। এ অঞ্চলে যদি সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে হিমাগার করা যায় তবে কৃষকরা লাভবান হবেন।

এ সড়ক ঘিরে চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ এ বছরের শেষ নাগাদ শুরু হবে ও কর্ণফুলী নদীর উপর সড়কসহ রেল সেতু নির্মাণ কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া সড়ক ঘেঁষে মালেশিয়ার এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানান তিনি।

.

২০১৭ সালের জানুয়ারী মাসে জ্যৈষ্ঠপুরা ভান্ডাজুড়ি-গুদামঘর সড়ক তৈরির কাজ শুরু হয়। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সাবেক মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এমপি নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্থরের উদ্বোধন করেন।

সড়ক নির্মাণ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কামাল এসোসিয়েটসের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ রায়হান উদ্দিন পাঠক ডট নিউজকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আরটিআইপি-২ প্রকল্পের আওতায় এ সড়ক নির্মিত হচ্ছে। প্রস্থে ২৪ ফুট ও ৭.৫৮৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ কাজে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা। আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহারের মাধ্যমে গত বছরের জানুয়ারি মাসে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বর্তমানে এ সড়ক প্রায় দৃশ্যমান হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।

.

উপজেলা প্রকৌশলী সুজিত কান্তি মজুমদার জানান, এ সড়কের জ্যৈষ্ঠপুরা ভান্ডালজুড়ি খালের উপর বেইলী সেতুর জায়গায় প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক সেতু নিমার্ণ করা হচ্ছে। ৬৩ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়ক সেতুটি নির্মাণ কাজ পেয়েছে কাশেম কন্সট্রাক্টশন নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।