অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে অপর্ণাচরণ স্কুলের পুর্ণমিলনীর উদ্বোধন

0
.

বর্ণাঢ্য আয়োজনে চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহি অপর্ণাচরণ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রথম দুদিন ব্যাপী পুর্ণমিলনীর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়েছে।

পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে আজ শুক্রবার নগরীর নন্দন কাননস্থ স্কুল প্রাঙ্গনে হাজার খানের প্রাক্তন ছাত্রীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে।

বেলা সাড়ে ৩টায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধম্যে দুদিন ব্যাপী প্রাক্তন শিক্ষাথীদের পূর্ণমিলনীর উদ্বোধন করেন।

পরে শিক্ষাথীদের অংশ গ্রহনের মধ্য দিয়ে স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে বের হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। রং বেরং এর ব্যানার, প্লেকার্ড, ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে এবং বাঙ্গালী ঐতিহ্যের প্রতীক রিকশা সাজিয়ে শোভাযাত্রাটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণকালে হাজারো মানুষ অবলোকন করেন।

শোভাযাত্রাটি স্কুল আঙ্গিনা থেকে শুরু হয়ে নন্দন কানন, বোস ব্রাদাস, ডিসি হিল, এনায়েত বাজার, জুবলী রোড় হয়ে পুণ:রায় স্কুল প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।

অগ্নিযুগের বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের স্মৃতি বিজড়িত ৯০ বছরের পুরনো এ বিদ্যালয়টির প্রায় দেড় হাজার মত ছাত্রী শৈশবের স্কুল আঙ্গিনায় পা রেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।

.

চট্টগ্রাম মহিলা কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল (১৯৭৫ ব্যাচ) শাহীন ফেরদৌস তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন- “বহু বছর পর স্কুল বান্ধবীদের সবাইকে এক সঙ্গে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। এটা প্রকাশ করে বুঝানো যাবে না। যেন আবার সেই স্কুল জীবনে ফিরে গেলাম। তিনি বলেন, বার বার যেন এমন আয়োজন হয় সেই আমি আয়োজকদের কাছে অনুরোধ জানাবো।”

অপর্ণাচরণ স্কুলের ছাত্রী ছিলেন অভিনেত্রী চিত্রলেখা গুহ। তিনি ১৯৮২ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, এমন একটি আয়োজনের জন্য অনেক দিন অপেক্ষায় ছিলাম। স্কুল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরএ প্রথম বহু বছর পর স্কুল জীবিনের সব বান্ধবী এক সঙ্গে হলাম। আশা করি ৩ বছরর পর পর এমন আয়োজন হবে।

এদিকে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দুদিনের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে আগামীকাল শনিবার রয়েছে আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ, বিদ্যালয়ের বর্ষীয়ান শিক্ষকদের সম্মাননা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠানমালা হবে নগরীর লাভ লেইনের স্মরণিকা কমিউনিটি সেন্টারে। অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন বিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক খালেদা হানুম।

ওইদিন স্মৃতিচারণের পাশাপাশি বর্ষীয়ান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্মাননা দেওয়া হবে। এছাড়া অনুষ্ঠানে গান, কবিতা পরিবেশন করবেন স্কুলের সাবেক ছাত্রীরা।

জানাযায়, ১৯২৭ সালে চট্টগ্রামের শিক্ষানুরাগী কালীতারা দেবী নগরীর গোলাপ সিং লেইনে আটজন ছাত্রী নিয়ে নন্দনকান এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

পরবর্তীতে ছাত্রী সংখ্যা বেড়ে গেলে তৎকালীন অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট অপর্ণাচরণ রায়ের অর্থানুকূল্যে অপর্ণাচরণ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে এটি উচ্চ বিদ্যালয় এবং সাম্প্রতিক সময়ে এটি কলেজে উন্নীত হয়। ১৯৯৭ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশন এ স্কুলটিকে অধিগ্রহণ করে।

চট্টগ্রামের নারী শিক্ষার বিস্তারে অপর্নাচরণ স্কুল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে আত্মোদানকারী প্রথম নারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এ স্কুলের প্রধান শিক্ষিক ছিলেন। পরবর্তীতে প্রণতি সেন দীর্ঘ ৩৪ বছর প্রধান শিক্ষিকের দায়িত্ব পালন করেন।

এ স্কুলে পড়ালেখা করেছেন অনেক কৃতী শিক্ষার্থী। প্রফেসর সালমা খান, প্রফেসর নাজমা সিদ্দিকী, প্রফেসর মালেকা আজিম খান, সাহিত্যিক ফাহমিদা খানম, প্রফেসর হান্নানা বেগম, প্রফেসর ড. জয়নব বেগম, নায়ার সুলতানা, প্রফেসর রওশন আক্তার হানিফ, প্রফেসর রীতা দত্ত, হামিদা বেগম, রাশেদা বেগম, ডা. তামান্না জাফর, খুরশীদা আজিম খান, প্রফেসর শুক্লা ইফতেখারসহ আরো অনেকেই।