মিরসরাইয়ে অন্তঃস্বত্তা গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যু
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৬ মাসের অন্তঃস্বত্তা এক গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম ফাতেমা আক্তার (২০)।
রবিববার সকালে উপজেলার ২ নম্বর হিঙ্গুলী ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের নজিম উদ্দিন ভূঁঁইয়া বাড়ীতেথেকে পুলিশ ফাতেমার লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে।
নিহতের স্বামী শহিদুল ইসলামকে (৩০) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
জোরারগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত আনোয়ারুল্লাহ বলেন, গৃহবধূর আত্মহত্যার খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না ন্তদন্তের পর জানা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা। প্রাথমিক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামী শহিদকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। তবে নিহতের পরিবার মামলা করলে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয়রা জানায়, দেড় বছর পূর্বে মোবাইলের মাধ্যমে তাদের পরিচয় হওয়ার পর তাদের বিয়ে হয়। এরপর ফাতেমাকে যৌতুকের জন্য শারিরীকভাবে নির্যাতন শুরু করে তার স্বামী, শাশুড়ী ও ননদ।
রবিবার দুপুরে সরেজমিন এলাকায় গিয়ে জানাযায়, গত দেড় বছর পূর্বে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নোয়াখালী জেলার নোয়াখালী সদর থানার উত্তর সুল্লিয়া গ্রামের খুরশিদ আলমের মেয়ে ফাতেমার সাথে মিরসরাইয়ের হিঙ্গুলী ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মুন্সি মিয়ার ছেলে শহিদুল ইসলামের পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তারা একে অপরকে ভালোবেসে পরিবারের অমতে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ীতে বিয়ে করেন।
বিয়ের পর থেকে শহিদের পরিবার তা কোনভাবে মেনে নেয়নি। গত ৬ মাস পূর্বে পরিবারের মতামতে শহীদ বৌকে নিয়ে বাড়ী ফিরে আসে। এ সময় ফাতেমা ৬ মাসের অন্তঃস্বত্তা ছিলো বলে জানা যায়।
এদিকে ফাতেমা বাড়ীতে থাকলেও স্বামী শহিদ ঢাকায় একটি দোকানে চাকরি করেন। মাঝে মধ্যে ছুটিতে বাড়ীতে আসেন। বাড়ীতে শহিদের মা এবং বোন যৌতুকের জন্য তার স্ত্রীর উপর বিভিন্ন সময় নির্যাতন করতেন। পরে এনিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য আদালত ও থানায় শালিসও হয়েছিল।
জানাগেছে, ঈদের ছুটিতে শহীদ বাড়ী আসলে ঘটনারদিন শনিবার বিকেলে ফের পারিবারিক বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে বাড়ীর সবাই এসে তা সমাধান করেন। এর পর প্রতিদিনের ন্যায় রাতে ফাতেমা ঘুমাতে যায়।
শশুর পরিবারের লোকজন জানায়, রবিবার সকাল ৯ টার দিকে শহীদ এবং ফাতেমা ঘুম থেকে না ওঠায় তাদেরকে ঘুম ভাঙ্গাতে দরজায় কড়া নাড়েন শহীদের মা। এসময় শহীদের ঘুম ভাঙ্গলে তিনি দেখতে পান স্ত্রী কক্ষে থাকা সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে। তিনি ফাতেমাকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে খাটে শুয়ে দেখতে দেন। এর পরপরই বাড়ীর সবাইকে বিষয়টি জানান। একপর্যায়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে জোরারগঞ্জ থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল করে লাশটি ময়না তদন্তের জন্য থানায় নিয়ে যায়।
এদিকে নিহত ফাতেমার বাবা খুরশেদ আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমাদেরকে না জানিয়ে তারা নিজেদের ইচ্ছায় বিয়ে করার পর থেকে ঢাকায় বসবাস করে আসছিলো। গত ৬ মাস পূর্বে আমার মেয়েকে নিয়ে তার গ্রামের বাড়ীতে নিয়ে যায়। বাড়ী নেয়ার পর শহিদের মা এবং বোন আমার মেয়ের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করেন। তাদের দাবী মেটাতে না পারায় তারা বিভিন্ন সময় আমার মেয়েকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করতো। এ নিয়ে আমার মেয়ে জোরারগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিাযোগ করেছিল।
পরে থানায় বৈঠকের মাধ্যমে যৌতুক দাবী ও নির্যাতন করবে না মর্মে মুছলেকা দিয়ে মেয়েকে ঘরে নিয়ে যায় শ্বশুর শাশুড়ি। ঘটনার ২ দিন পূর্বেও মেয়ে আমাকে ফোনে জানায়, তারা টাকার জন্য আগের মত নির্যাতন করছে।