অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চমেকে পুলিশের বর্বর হামলায় ছাত্রলীগ নেতা রনক মৃত্যুর মুখে

1
.

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশের অমানুষিক নির্যাতনে গুরুত্বর আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে নগরীর ওমরগনি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগ নেতা আওয়াজ ভূইয়া রনক। এ ঘটনা তদন্তপূর্বক বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ মহাপরিদর্শক ও সিএমপি কমিশনারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন রনকের পরিবার।

আজ সোমবার বিকালে পরিবারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রনকের মা রাহেনা বেগম।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ নেতা রওনকের ভাই ইয়াছিন সাখাওয়াত ভূইয়া বলেন, ‘গত শনিবার এলাকার কয়েকজন ছেলের সাথে চমেক পুলিশ ফাঁড়ির এক সদস্যের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় সেখানে মানুষ জড়ো হতে দেখে সেখানে কি ঘটনা ঘটছে তা জানতে ঘটনাস্থলে যান রনক।

ঘটনা বেগতিক দেখে সেখান থেকে চলে যাওয়ার সময় পুলিশ ফাঁড়ির কিছু সদস্য তাকে ধরে ফেলে। পরে পাঁচলাইশ থানার অন্য সদস্যরা এসে রনককে উপর্যপুরি মারধর করে ফাঁড়ির ভিতর নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে গিয়ে তারপর উপর অমানবিক নির্ডাতন চালায় পুলিশ সদস্যরা।

.

এ ঘটনা দেখেও পাঁচলাইশ থানার ওসি (তদন্ত) ওয়ালীউল্লাহ আকবর ও পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম পুলিশ সদস্যদের বাধা না দিয়ে সেখানে উসকানি দিয়েছেন। পুলিশ সদস্যরা হাতুড়ি দিয়ে রনকের হাতের আঙ্গুলের নখগুলো তুলে ফেলার চেষ্টা করে। এছাড়া লোহার রড দিয়ে পুরো শরীরের খুবই জখম করে,হাত পা ভেঙে দেয় এবং মাথায় প্রচন্ড আঘাত করে। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা নির্যাতনের পর তার অবস্থা অবনতি হলে পুলিশ সদস্যরা তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। ভর্তির পর সেখানেও তাকে মারধর করা হয়। রনকের অবস্থা দেখে ঘটনা অন্য দিকে মোড় নিবে বলে পুলিশ দুই কনস্টেবলকে আহত হওয়ার ঘটনা সাজান।’

এদিকে এ অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে চমেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জহিরুল ইসলাম ঘটনার সময় নিজে ঘটনাস্থলে ছিলেন না জানিয়ে বলেন, শনিবার রাত ৯টার দিকে ইমাজেন্সির সামনে দুই যুবকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে দায়িত্বরত এক কনেস্টেবল তাদের মান পরিচয় জিজ্ঞেস করে।

এতে দুই যুবক পুলিশের সাথে বির্তক জড়িয়ে পড়ে। পরে তারা চলে যায়। এর একঘন্টা পরে ৬টি মোটর সাইকেল যোগে এসে নিজেদের ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে দুই পুলিশ সদস্যের উপর হামলা চালায়। তখন উপস্থিত লোকজন এবং চিকিৎসকরা ছুটে এসে তাদের ধাওয়া করলে মোটর সাইকেল নিয়ে যুবকরা পালিয়ে গেলেও জনতা রনক নামে একজনকে ধরে ফেলে। এবং তাকে মারধর করে। বরং জনতার হাত থেকে পুলিশ তাকে বাঁচিয়েছে। পুলিশ তাকে না বাঁচালে গন পিঠুনীতে তার মৃত্যু হতো।

এসআই জহিরুল ইসলাম আরো বলেন, তাদের হামলায় আহত দুই পুলিশ সদস্য ফিরোজ ও মাহমুদের অবস্থা আরো বেশী খারাপ। তারা চমেকের ১৮ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে তিনি জানান।

এখানে পুলিশ তার উপর হামলা করেনি। ঘটনার খবর পেয়ে পাঁচলাইশ থানার পুলিশ টিমও ছুটে আসে। তাছাড়া ঘটনার সময় আমি মেডিকেলে ছিলাম না। আমি অন্যকাজে বাইরে ছিলাম।

.

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে কান্না জর্জরিত কন্ঠে রনকের মা রাহেনা বেগম বলেন, ‘রনকের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। তাকে হাসপাতালে ভালো কোন চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। তার পরীক্ষা নিরিক্ষার কাজে পুলিশ সদস্যরা বাঁধা দিচ্ছে। রনকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এটি কি পুলিশী রাষ্ট্র প্রশ্ন করেন রনকের মা?

তিনি বলেন, ‘পুলিশ সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করে। কারো উপর অন্যায় অবিচার হলে মানুষ পুলিশের কাছে ছুটে যায়। যখন পুলিশ অন্যায় করে আমরা কার কাছে যাবে? সব পুলিশতো খারাপ না। তবে কিছু খারাপ পুলিশের জন্য পুরো বাহিনীর কেন সুনাম ক্ষুন্ন হবে। শুধু পুলিশ বাহিনী নয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন করছে তারা।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের সদস্যরা রনকের পরিবারকে বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। অবিলম্বে ঘটনা তদন্ত করে সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ না করলেও এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সামনে অনশন করার ঘোষণা দেন রনকের পরিবারের সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলন রওনকের উপর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যদের নির্যাতন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে উল্লেখ করে তার মা রাহেনা বেগম এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার, রনকের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, রনকের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা ও পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি প্রদান থেকে বিরত থাকা সহ বিভিন্ন দাবি জানান।