অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ব্রেইন টিউমারের নীরব ৮ লক্ষণ

0

ভালো খবর হচ্ছে, ব্রেইন ক্যানসার বিশ্ব জনসংখ্যার ১ শতাংশেরও কম লোককে আক্রমণ করে। কিন্তু খারাপ খবর হচ্ছে, ব্রেইন টিউমার প্রায়সময় খুব কম সংখ্যক উপসর্গের সঙ্গী হিসেবে থাকে এবং এ উপসর্গসমূহ প্রতিদিনকার অসুস্থতা থেকে মাথাব্যথা ও ক্লান্তির মতো ছদ্মবেশ ধারণ করে।

এ প্রতিবেদনে আলোচিত ব্রেইন টিউমারের বা মস্তিষ্কের টিউমারের ৮টি নীরব কিন্তু মারাত্মক উপসর্গ সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।

অনবরত মাথাব্যথা
মাথাব্যথা বা মাইগ্রেন কি ব্রেইন টিউমারের কারণে হচ্ছে নাকি অন্য কোনো কারণে হচ্ছে, তার পার্থক্য নির্ণয় করা ডাক্তারদের পক্ষেও কঠিন হতে পারে। সিটি অব হোপের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাইক চেন বলেন, ‘ব্রেইন টিউমারের সবচেয়ে জোরালো নির্দেশক হচ্ছে দৈনন্দিন নতুন মাথাব্যথা চলে যাবে বলে মনে হয় না।’ তিনি বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব মাথাব্যথা আরো খারাপ হতে থাকে এবং আপনি যখন সকালে ঘুম থেকে জাগেন প্রায়ক্ষেত্রে তা উপস্থিত থাকে, যখন কয়েক ঘণ্টা শায়িত থাকার কারণে ইন্ট্রাক্রেনিয়াল প্রেসার বা স্কালের মধ্যে চাপ বেশি থাকে।’ এই ব্যথা টিউমারের আকার বা বৃদ্ধির হারকে অগ্রাহ্য করে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।

ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান্টা মনিকায় অবস্থিত জনওয়েন ক্যানসার ইনস্টিটিউটের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সলেশনাল নিউরো-অনকোলজি অ্যান্ড নিউরোথেরাপিউটিকসের প্রধান এবং নিউরো-অনকোলজিস্ট স্যান্টোশ কেসারি বলেন, ‘একটি ক্ষুদ্র ও দ্রুত বর্ধনশীল টিউমার একটি বড় ও ধীর বর্ধনশীল টিউমারের মতো তীব্র মাথাব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।’ একজন মানুষের ব্রেইন টিউমার আছে কি নেই, এটা অনুমান করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট প্রকারের মাথাব্যথা নেই। এটি বোঝার জন্য চাবিকাঠি হচ্ছে, নতুন অনবরত মাথাব্যথা হয় কিনা লক্ষ্য রাখা যা সাধারণত কোনো চিকিৎসায় (যেমন- ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ) সারে না।

সামান্য দৃষ্টিশক্তি হ্রাস
এই বিশেষ উপসর্গটি যাদের মধ্যে আছে তারা এটি সম্পর্কে মোটেই সচেতন নাও হতে পারে- এটি শুধুমাত্র ব্রেইন টিউমারের সঙ্গেও জড়িত হতে পারে। তারা তাদের দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারে না যতক্ষণ না পর্যন্ত বারবার কোনো কিছুতে ধাক্কা খায় কিংবা পৌনঃপুনিক গাড়ি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। মেড স্কুল টিউটরসের মেডিক্যাল এডুকেশনের সহ-পরিচালক ক্রিস্টোফার ক্যারুব্বা বলেন, ‘বাইটেম্পোরাল হেমিয়ানোপসিয়া নামে এই বিশেষ উপসর্গ বা ইম্পেয়ারড পেরিফেরাল ভিশন পরিচিত। আমরা প্রায়ক্ষেত্রে পিটুইটারি টিউমারের সঙ্গে এই উপসর্গটি দেখি যা অপটিক কায়াজম বা ভিজুয়্যাল প্যাথওয়ে বা দৃষ্টিপথকে সংকুচিত করে।’ অনেক বিস্ময়কর রোগের একটি হচ্ছে, ব্রেইন ক্যানসার যা চক্ষু ডাক্তাররা প্রথমে নির্ণয় করতে পারে।

দুর্বলতা ও ঝিমানো
ব্রেইনের মোটর কর্টেক্স সারা শরীরে পেশী আন্দোলন সূচনা করে এবং নিয়ন্ত্রণ করে। ডা. চেন বলেন, ‘ডান মোটর কর্টেক্স আপনার শরীরের বামপাশ এবং বাম মোটর কর্টেক্স শরীরের ডানপাশ নিয়ন্ত্রণ করে।’ এই পথের কোথাও টিউমার হলে এসব সংকেত সম্পূর্ণরূপে বিঘ্নিত হবে এবং এর ফলে কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি আপনার ব্রেইন টিউমার থাকে, আপনি আপনার হাত বা পায়ে ব্যথা অনুভব নাও করতে পারেন, কিন্তু আপনার বাম বা ডান পা বা হাত স্বাভাবিকভাবে আংশিক বা পুরোপুরি সাড়া নাও দিতে পারে। ভিটামিন ডি ঘাটতির জন্যও পা দুর্বল হতে পারে।

তোতলামি বা অস্পষ্ট উচ্চারণ
ডা. ক্যারুব্বা বলেন, ‘কথা ও ভাষা বোঝার মোটর ফাংশনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্রেইনের অংশ ফ্রন্টাল লোব বা টেম্পোরাল লোবে টিউমারের প্রধান উপসর্গ হচ্ছে ভাষাগত সমস্যা, যেমন- তোতলামি, বিভিন্ন জিনিসের নাম বলতে অসুবিধা কিংবা অন্যরা কি বলছে তা বুঝতে সমস্যা হওয়া।’ তিনি বলেন, ‘ব্রেইনের মধ্যে দুটি স্পিচ সেন্টার বা কথা কেন্দ্র রয়েছে যা বামপাশে অবস্থিত- একটি হচ্ছে ওয়ের্নিকে’স এরিয়া, যা আমাদেরকে কথা বুঝতে সাহায্য করে এবং অন্যটি হচ্ছে ব্রোকা’স এরিয়া, যা শব্দ সৃষ্টিকারী পেশীকে সক্রিয় করে।’ যখন ব্রেইনে টিউমার থাকে, উভয় ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয়।

মেজাজি অনুভূতি এবং ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া আরভিনের নিউরো সার্জন সুমিত ভাদেরা বলেন, ‘ব্রেইন টিউমারে ভোগা রোগীদের মধ্যে বিষণ্নতা, ক্রোধ কিংবা উদ্বেগ বিকশিত হতে পারে, এমনকি তারা এসব মানসিক অবস্থা সাধারণভাবে প্রকাশ নাও করতে পারে।’ এটি টিউমার ইরিটেশন কিংবা আমাদের ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী ফ্রন্টাল লোবের অংশের সংকোচনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। রোগীদের আচরণেও পরিবর্তন আসতে পারে, যেমন- অধিক রেগে যাওয়া কিংবা উত্তেজিত হওয়া, অধিক ঝুঁকিপূর্ণভাবে অনধিকারচর্চা করা, প্রকাশ্যে যৌনাচরণ করা। ডা. চেন বলেন, ‘ফ্রন্টাল লোবে একটি বড় ও ধীর বর্ধনশীল টিউমার ব্যক্তিত্ব ও বিবেচনাবোধকে পরিবর্তন করতে পারে যা অপরাধমূলক আচরণ বা মানসিক সমস্যার আচরণের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে।’

শ্রবণশক্তি হ্রাস অথবা ভোঁ ভোঁ শব্দ
কপালের পেছনে কর্টেক্সের গোড়ার মধ্যখানে অবস্থিত টেম্পোরাল লোব শব্দ শোনার ক্ষমতা এবং ভাষা ও কথাবার্তা বোঝার ক্ষমতা প্রসেসিং করার জন্য দায়ী। ডা. ক্যারুব্বা বলেন, ‘যদি আপনি একপাশে না শুনেন বা কম শুনেন, অথবা অবিরত রিং বা ভোঁ ভোঁ শব্দ শুনেন, তাহলে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিবেন যিনি একজন নিউরোলজিস্টকে দেখানোর জন্য আপনার লক্ষণগুলো যথেষ্ট তীব্র কিনা তা নির্ধারণ করতে পারেন।’

বন্ধ্যাত্ব
ব্রেইন হরমোন উৎপাদনসহ আমাদের শরীরের প্রায় সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। ডা. চেন বলেন, ‘এটি তা করে থাকে ব্রেইনের তলদেশে অবস্থিত মটর-আকৃতির পিটুইটারি গ্ল্যান্ড নামক একটি এক্সটেনশনের মাধ্যমে।’ তিনি বলেন, ‘টিউমার দ্বারা প্রভাবিত পিটুইটারি গ্ল্যান্ড উচ্চ পরিমাণে হরমোন নিঃসরণ করতে পারে, অথবা টিউমার স্বাভাবিক গ্ল্যান্ডের কাজে বাধা দিতে পারে।’ এ কারণে ব্রেইন টিউমারে ভোগা নারীরা কনসিভ করতে বা সন্তান জন্মদানের পর দুধ উৎপাদনে অসমর্থ হয়।

ভারসাম্যহীনতা
যেখানে ব্রেইনস্টেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এমন অনেক অংশের একটি হলো মোটর ফাংশন। যদি আপনার হাঁটতে অসুবিধা হয়, বিশেষ করে অন্ধকারে এবং আপনি একপাশে হেলে পড়েন, তাহলে এটি ভারসাম্য ও সমন্বয় সাধনের জন্য ব্রেইনের অংশ সেরেবেলাম বা লঘুমস্তিষ্কে টিউমারের উপসর্গ হতে পারে। ভারসাম্য সমস্যা বহুবিধ স্কেলেরোসিসের নীরব উপসর্গও হতে পারে।