অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

আজ মহান স্বাধীনতা দিবস

0
.

আজ ২৬ মার্চ, আমাদের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। হাজার বছরের শোষণ, বঞ্চনা ও পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ১৯৭১ সালের এদিনে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে সেদিন থেকে দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের জাতীয় স্বাধীনতার চূড়ান্ত পরিণতি। সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের গৌরব ও অহঙ্কারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন আজ। : আমাদের জাতীয় জীবনের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের মহান এই স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন দমনের জন্যই পরিকল্পিতভবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঘুমন্ত নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা চালায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত এই বর্বর হামলায় ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, আরমানিটোলা ও পিলখানায় নির্মম গণহত্যা চালায়। অসহায় নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করায় বিপন্ন মানুষের আর্তচিৎকার সেদিন আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হলেও হানাদার বাহিনীর হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারেনি। মুহুর্মুহু গোলাবারুদের বিস্ফোরণে রাজধানী ঢাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এই কঠিনতম অবস্থায় জাতিকে কোনো দিক-নির্দেশনা না দিয়েই ৭০’র নির্বাচনের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন। দেনদরবার চলে সংসদ অধিবেশন ও ক্ষমতার। : হানাদাদের হামলায় মুহূর্তের মধ্যেই নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে জনগণ। এমনি এক অনিশ্চয়তা ও শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্যে ৫৫,৫৯৮ বর্গমাইলের মানুষেরা যখন বাকরুদ্ধ, হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গুনছে, জীবন নিয়ে পালিয়ে বাঁচবে নাকি জীবন দিয়ে প্রতিরোধ করবে-বুঝে উঠতে পারছে না। আশা দেবার, ভরসা দেবার, সান্ত্বÍনা দেবার যখন আর কেউ এগিয়ে আসছে না, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঠিক এমনি এক অমানিশার ঘোর অন্ধকারে বিদ্যুৎ চমকের মতো ঝলসে উঠলো প্রকৃতি ও মানুষ। বাতাসের প্রতিটি তরঙ্গে কানপেতে সবাই শুনলো -‘উই রিভোল্ট’ আমি মেজর জিয়া বলছি। হানাদারদের প্রতিরোধের মশাল জ্বলে ওঠে চট্টগ্রামের ষোল শহরের অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকদের প্রাণপ্রিয় নেতার ডাকে। একমাত্র আল্লাহকে ভরসা করে এবং নিজের ও সহকর্মীদের জীবনকে বাজি রেখে সমগ্র ব্যাটালিয়নের কর্তৃত্ব নিজ হাতে গ্রহণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ জিয়া জানিয়ে দিলেন যে, তারা এই মুহূর্ত থেকে বিদ্রোহ ঘোষণা করছেন এবং স্বদেশকে স্বাধীন করার জন্যে যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছেন। এই ঘোষণার মুহূর্তটি ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে। ২৬ মার্চ সেই ঘোর অমানিশার মধ্যে, অত্যন্ত আকস্মিকভাবে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো উদয় হলেন জিয়াউর রহমান, কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে। বেতার কেন্দ্রের কর্মীদের সহযোগিতায় তিনিই স্বাধীনতার ঘোষণা উচ্চারণ করলেন। এই ঘোষণাই স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা। : চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তিনি দেশের প্রভিশনাল প্রেসিডেন্ট এবং লিবারেশন আর্মির কমান্ডার ইন চিফ হিসাবে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন…..আমি মেজর জিয়া প্রভিশনাল প্রেসিডেন্ট এবং লিবারেশন আর্মির কমান্ডার ইন চিফ হিসাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। তিনি এ স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহবান জানান। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে অবনত চিত্তে স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের। পাশাপাশি গোটা দেশ আজ মেতে উঠবে স্বাধীনতার উৎসবের আমেজে। : কিন্তু এবারে এমন এক অস্বাভাবিক পটভূমিতে আমাদের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এসেছে যখন ফ্যাসিবাদী এক শক্তি ক্ষমতা দখল করে গণতন্ত্রকে নির্বাসনের পর দেশে গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, পাইকারী গ্রেফতার অবাধে চলছে। সীমাহীন দুর্নীতি, লুণ্ঠন, অপশাসন, উৎপীড়নে আজ সকল সুবচন নির্বাসিত। ভোটাধিকারসহ প্রায় সকল সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার হারিয়েছেন দেশবাসী। ৫ জানুয়ারি কলঙ্কিত নির্বাচনের পর থেকেই দেশে চলছে একদলীয় শাসন। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বিএনপির মহাসচিব পৃথক বাণী প্রদান করেছেন। : আজ সরকারি ছুটি। প্রত্যুষে রাজধানীর তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। সূর্যোদয়ের ক্ষণ ভোরে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন অমর শহীদদের প্রতি রাষ্টপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এরপর শ্রদ্ধা জানাবেন সংসদের স্পিকার ও সরকারি কর্মকর্তারা। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে দলের সিনিয়র নেতারা শ্রদ্ধা জানাবেন শহীদদের প্রতি। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি-বেসরকারি ভবন শীর্ষে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় ও রঙিন পতাকায় সজ্জিত করা হবে। বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাদক দল বাদ্য পরিবেশন করবে। দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বাণী : মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বাণী দিয়েছেন। : বিএনপি মহাসচিবের বাণী : মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আমি দেশবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। কামনা করি তাদের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। আজকের এই মহান দিবসে আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের অধিনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে-যার ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে এদিনে গোটা জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই সকল জাতীয় নেতার প্রতি, যারা দেশ ও জাতির জন্য অসামান্য অবদান রেখেছেন। : মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য আজও দেশি-বিটেশি চক্রান্তকারীরা নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে যাত্রা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শুরু করেছিলেন তাও আজকে বিনষ্ট করে গণতন্ত্রের নামে কর্তৃত্ববাদী অপশাসন চালু করা হয়েছে। কেউ যাতে মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার নিয়ে কথা না বলে, নাগরিক স্বাধীনতার জন্য আওয়াজ না তোলে সেজন্যই বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। : বিএনপি মহাসচিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করার অর্থ গণতন্ত্রকেই তালাবদ্ধ করে রাখা। নতুন করে ফ্যাসিবাদের বিস্তার লাভ করেছে। তাই স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক শক্তির এ মুহূর্তে গড়ে তুলতে হবে ইস্পাত কঠিন ঐক্য। আর এজন্যই বিপুল জনসমর্থিত নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সাহসী সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে। তাই সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে অপহৃত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। : মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচি : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজ ২৬ মার্চ সোমবার সকাল ৯টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে এবং স্মৃতিসৌধ থেকে ঢাকায় ফিরে বেলা ১১টায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের মাজারে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে বিএনপির সিনিয়র নেতারা দলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে। মাজার প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উদ্যোগে দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় জাসাসের উদ্যোগে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়াও ২৬ মার্চ সোমবার ভোর ৬টায় বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। ২৭ মার্চ সোমবার বিকাল ৩টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিএনপির উদ্যোগে বর্ণাঢ্য স্বাধীনতা র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনসমূহ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পোস্টার প্রকাশ করবে। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহ সম্মিলিতভাবে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সারাদেশের জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌর শাখায় স্থানীয় সুবিধানুযায়ী সময়ে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য স্বাধীনতা র‌্যালির আয়োজন করবে। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে সকল দলীয় কার্যালয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমানের ছবিসহ আলোকসজ্জা। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির উদ্যোগে দেশব্যাপী রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে দৈনিক পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ৩১ মার্চ বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা।