অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

আজ তিন পার্বত্য জেলায় বৈসাবি’র আনন্দ

0

গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে গেছে মূল পাহাড়ের আনাছে কানাছে অনুষ্ঠানমালা। সকালে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে সূচনা হয়েছে উৎসবের।

এ উৎসবটি ত্রিপুরাদের কাছে বৈসুক, বৈসু বা বাইসু, মারমাদের কাছে সাংগ্রাই এবং চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের কাছে বিজু ও বিষু নামে পরিচিত, যা সমতলের মানুষের কাছে বৈসাবি উৎসব নামে পরিচিতি পেয়েছে। পাহাড়িদের উৎসব হলেও বৈসাবি হয় সর্বজনীন। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর এ ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব বৈসাবি উপলক্ষে রাঙ্গামাটির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনস্টিটিউটে চলছে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিহু, মেলা, নাটকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি।

বৈসাুিব নামকরণও করা হয়েছে এই তিনটি উৎসবের প্রথম অক্ষর নিয়ে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর এ বর্ষবরণ উৎসব খুব জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করে পাহাড়ের মানুষ। এটি তাদের প্রধান সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোরও একটি।

চৈত্রের শেষের আগের দিন তথা ১২ এপ্রিল বৈসাবিতে ফুল বিজুর মাধ্যমে উৎসবের সূচনা হয়। ১৩ এপ্রিল চৈত্রের শেষ দিনে পাহাড়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে ভাসানো হয় ফুল। রঙিন বাহারি পোশাকে তরুণ-তরুণী ও শিশু-কিশোররা বিজু ফুল, মাধাবী লতা, অলকান্দ, জবা, নয়নতারাসহ বিচিত্র সব ফুল নদীতে ভাসায়। বৈসাবির অন্যতম আকর্ষণ পানিখেলা বা জলকেলি উৎসব। এ উৎসব মারমাদের। এ উৎসব হয় ১ বৈশাখ তথা ১৪ এপ্রিল থেকে। এ ছাড়া বর্ণাঢ্য র‌্যালি, গড়িয়া-নৃত্যসহ থাকে নানা সব খেলাধুলার আয়োজন। উৎসবের রং ছড়ায় পাহাড়ের দর্শনীয় এলাকাগুলোতেও।

বিজু/ বিষু : চাকমা জনগোষ্ঠীর কাছে উৎসবের প্রথম দিন ‘ফুল বিজু’, দ্বিতীয় দিন ‘মূল বিজু’ এবং তৃতীয় দিন ‘গোজ্যাপোজ্যা’ নামে পরিচিত। চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যারা এ উৎসবটি ৩ দিন ধরে পালন করে। এ ৩ দিন হলো চৈত্রের শেষ ২ দিন ও বৈশাখের প্রথম দিন। এর মাঝে চৈত্রের শেষ দিনটি এই উৎসবের মূল আকর্ষণ। এ দিন ঘরে ঘরে পাঁচ প্রকারের সবজি সহকারে বিশেষ খাদ্য পাচন রান্না করা হয়। সাংগ্রাই : মারমারা উৎসবের প্রথম দুই দিনের নাম দিয়েছে ‘পাইং ছোয়াই’ ও ‘সাংগ্রাইং’। তৃতীয় দিন ‘সাংগ্রাইং আপ্যাইং (তাকখীং)’। তাকখীং হলো মারমা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস। মারমারা বর্ষবরণের এই উৎসব পালন করে সাংগ্রাই নামে। এ উৎসব চলে ৪ দিন ধরে। মারমারা সবাই বুদ্ধের ছবি সহকারে নদীর তীরে যায় এবং দুধ কিংবা চন্দন কাঠের জল দিয়ে এ ছবিটিকে স্নান করায়।

বৈসুক : ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বৈসাবি উৎসবের নামগুলো হচ্ছে- হারি বৈসুক, বৈসুকমা ও বিসিকাতাল। নাম ভিন্ন হলেও উৎসবের রূপ অভিন্ন। উৎসবের প্রথম দিনে পাহাড়ের ছেলেমেয়েরা খুব ভোরে উঠে ফুল সংগ্রহ করে আনে বিভিন্ন জায়গা থেকে। বাড়িঘর বিভিন্ন রকমের ফুল, পাতা দিয়ে সাজানো হয়। মূলত, অতিথিকে বরণের জন্যই এ আয়োজন। পাহাড়িরা দল বেঁধে নদীতে স্নান করে। এ ছাড়া গৃহপালিত পশু-পাখিদের খাবার দেয়া হয়। কিয়াঙে (বৌদ্ধবিহার) প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেমন- গান, কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ত্রিপুরাদের ভাষায় বৈসুক মানে নবজন্ম।

উৎসবের নগরী খাগড়াছড়ি : আজ ১২ এপ্রিল থেকে পাহাড়ে শুরু হয়েছে প্রাণের উৎসব বৈসাবি। চাকমাদের ফুল বিজু। ভোরে চেঙ্গী নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে বৈসাবির আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হবে। চৈত্র সংক্রান্তির শেষ দুই দিন ও বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন, এই তিন দিন মূলত বিজু পালন করে চাকমা আদিবাসীরা। একই সময় ত্রিপুরাদের বৈসু উৎসব। এ ছাড়া নববর্ষের দিন থেকে মারমা আদিবাসীদের সাংগ্রাইং উৎসব শুরু হয়।

ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি উপলক্ষে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দিতে গতকাল বুধবার সকালে পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে বৈসাবির বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। হাজার হাজার পাহাড়ি-বাঙালির স্বতঃস্ফ‚র্ত অংশগ্রহণে সেটি হয়ে ওঠে সর্বস্তরের মানুষের মিলনমেলা। উৎসবের নগরীতে পরিণত হয় খাগড়াছড়ি। পরিষদ কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে টাউন হল মাঠে গিয়ে শেষ হয় বর্ণিল শোভাযাত্রা। সেখানে জেলা পরিষদের উদ্যোগে মারমাদের জলকেলি, ত্রিপুরাদের ‘গরয়া’ নৃত্যসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।