অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

জীবিত নবজাতকের বদলে মৃত নবজাতক দিয়ে প্রতারনা

0
.

জীবিত নবজাতকের বদলে মৃত নবজাতক দিয়ে প্রতারনার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের চাইল্ড কেয়ার ক্লিনিকের বিরুদ্ধে। নবজাতকের মা রোকসানা আকতার (২১) নগরীর পাঁচলাইশ থানায় এ অভিযোগ দায়ের করেন।

বিয়ের পাঁচ বছর পর মুখ দেখল সন্তানের। তাও আবার তার উপর কালো শকুনের দৃষ্টি! শংকায় আছেন নবজাতকের মা। শেষ পর্যন্ত তাদের প্রিয় নারী ছেড়া ধন শকুনের কালো থাবা থেকে রেহাই পাবে তো ?

প্রবাদ আছে, চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পরে ধরা! কিন্তু সেই বড় বিদ্যায় সিদ্ধহস্ত না হওয়ায় চুরির মাশুল গুনতে হচ্ছে নগরীর পাচঁলাইশস্থ চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালকে।

মূলত নাম চাইল্ড কেয়ার হলেও কেয়ারের বিপরীতে যে চুরির অপরাধে জড়িয়ে পড়তে হবে হাসপাতালটিকে কে জানতো! যে চুরির প্রমান মিললো মঙ্গলবার রাতে। সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যা সন্তানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চাইল্ড কেয়ার হাসাপাতালে ভর্তি করালে দুই দিন পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় মৃত ছেলে সন্তান। অতঃপর থানা,পুলিশ,হাসপাতাল ঘুরে নানান টালবাহানার পর চুরি করা কন্যাশিশুকে ফেরত দিলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ১২ এপ্রিল বিয়ের ৫ বছর পর বাপের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসব করেন প্রবাসী মহিউদ্দিনের স্ত্রী রোকসানা আক্তার।

.

বাচ্চা প্রসবের ১ঘন্টা পর অসুস্থ হলে দ্রুত নোয়াখালীর মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানে প্রায় ৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বাচ্চার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন।

গত ১৫ এপ্রিল সকালে চট্টগ্রামে এসে চট্টগ্রাম মেডিকেলের এক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে, তাঁর পরামর্শে দুপুর ১২ টায় নগরীর চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভর্তি করার কিছুক্ষণ পর চাইল্ড কেয়ারের কয়েকজন চিকিৎসক শিশুকন্যাটিকে আইসিইউ’তে রাখার পরামর্শ দেন।  ২ দিন চিকিৎসার পর ১৭ এপ্রিল সকাল ৮ টায় কন্যা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন চাইল্ড কেয়ার কর্তৃপক্ষ। দুদিনে ক্লিনিকের বিল করা হয় সাড়ে ১৪ হাজার টাকা।

বাচ্চাটি মৃত ঘোষণার পর অভিভাবকদের ডেকে চাইল্ডকেয়ারের ব্যবস্থাপক সৈকত হোসেন জানান, বাচ্চাটির প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। তাই তার বিভৎস চেহারা না দেখাই ভাল। সে পরামর্শ দিয়ে তড়িঘড়ি করে বাচ্চাকে কাফনে মুড়িয়ে দেন ব্যবস্থাপক সৈকত। পরে ছাড়পত্র দিয়ে মৃত বাচ্চাটিকে ২ ঘন্টার মধ্যে দাফন করার পরামর্শ দেন ওই ব্যবস্থাপক।

পরে বাচ্চাটিকে নোয়াখালীর গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় দাফনের জন্য। সেখানে গোসল করানোর সময় দেখতে পান মেযের বদলে ছেলের মরদেহ। তারপর পূনরায় নিয়ে আসেন চট্টগ্রাম শহরে। মধ্যরাতে নগরীর পাঁচলাইশ থঅনায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ উল্টো নবজাতকের অভিভাবককে শাসানো শুরু করে। এক পর্যায়ে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ করেন রোকসানা। সর্বশেষ নানা চাপের মুখে পুলিশ রাতে মামলা না নিয়ে অভিযোগ গ্রহন করেন পাঁচলাইশ থানা।

এ বিষয়ে কন্যা শিশুটির চাচা মো. আলমগীর জানান, চাইল্ড কেয়ারের পরামর্শ অনুযায়ী বাচ্চাটিকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাই। গ্রামের বাড়িতে বাচ্চাটিকে দাফন করার পূর্বে গোসল করাতে গিয়ে দেখা যায়, এটা আমাদের কন্যাশিশুটি নয়, আরেক মৃত ছেলেশিশু। এতেই সবাই চমকে উঠি। পরে তাড়াতাড়ি করে ছেলেশিশুটিকে নিয়ে চট্টগ্রামে রাত দু’টায় পাঁচলাইশ থানায় চলে আসি।

থানায় সাধারণ ডায়েরি নেওয়ার পর রাত ৪ টার দিকে জানায় আমাদের বাবুটি জীবিত রয়েছে। কোনো ধরনের গোলযোগ ছাড়া চাইল্ড কেয়ার থেকে বাবুকে নিয়ে আসতে বলা হয়। আমি সকালে যাই এবং মৃত বাচ্চাটি তাদের কাছে ফেরত দিই।  তিনি আরো বলেন, বাচ্চা ফেরত পেলাম কিন্তু আমাদের হয়রানির বিষয়টির দায়ভার কে নিবে? আমি মামলা করতে চাইলে পাঁচলাইশ থানা মামলা নেয় নি।  কেন নেয়নি তারও কোন সদুত্তর নেই।

আলমগীর আরো বলেন, রাতে বাচ্চা সনাক্ত করার পর,সকাল ৭টায় আবার মৃত বাচ্চাটিকে নিয়ে যায়। তারপর তাদের সাথে অনেক বাকবিতন্ডার পর সকাল সাড়ে ৯টায় রয়েল হাসপাতালে বাচ্চা নিয়ে আসি। তারপরও ভয়ে আছি বাচ্চাটি সুস্থ আছে কিনা। কেননা যারা জীবিত বাচ্চা নিয়ে মৃত বাচ্চা দিতে পারে, তারা যে আমার বাচ্চার শরীরে কোনো কিছু প্রবেশ করিয়ে দেয় নি, তা আমি কিভাবে বিশ্বাস করবো। বাচ্চা ফেরত পেলাম কিন্তু আমাদের বাচ্চা নিয়ে অন্যজনের মৃত বাচ্চা দিয়ে যে ঘৃন্যতর অপরাধ করলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার বিচার কে করবে? যদি আমরা খেয়াল না করতাম তাহলে আমার বাবুকে হারাতে হতো।  আমি এ ব্যাপারে মামলা করতে চাইলেও পুলিশ মামলা নেয়নি।

এ বিষয়ে চাইল্ড কেয়ারের ম্যানেজার সৈকত হোসেনের সাথে কথা বলতে হাসপাতালে গেলে প্রথমে তার কক্ষে গিয়ে বসতে বলা হয়। তারপর প্রায় ঘন্টাখানেক পর জানান, আমি আরো ১ ঘন্টা পর আপনার সাথে দেখা করতে পারবো।  পরে দুই ঘন্টা পর প্রতিবেদক ফোন করলে জানান, ব্যাপারটি একটি ভুল বুঝাবুঝির কারণে হয়েছে। এটি এখন সমাধান হয়ে গেছে বলে ফোন কল কেটে দেন।
তবে এ ব্যাপারে হাসপাতালের কোন পরিচালককেই তাদের মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

নবজাতকের মা রোকসানা বলেন, আমার বাচ্চা ফের পেয়েছি এতে আমি খুশি। কিন্তু যারা আমার পাঁচ বছরের সাধনার ফসল আমার বুক থেকে কেড়ে নিতে চেয়েছিল তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। বিশেষ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের শাস্তি দাবী করেন তিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি আমিনুল হক বাবু বলেন,এ ধরনের গর্হিত কাজ ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এই ঘটনার সাথে যারাই জড়িত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দায়ী ব্যাক্তিরা যাতে কোনভাবেই পার না পায় সে ব্যাপারে মানবাধিকার কমিশন সর্বদা সচেষ্ট থাকবে।