অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

“শারমিন আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে না, তাকে হত্যা করা হয়েছে”

0
.

বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:

“শারমিন আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে না, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে” অভিযোগ করে সুষ্ঠ্যু তদন্তের মাধ্যমে খুনিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছে তার পরিবার।

আজ সোমবার (৩০ এপ্রিল) সকালে বোয়ালখালী উপজেলার একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে কথাগুলো বলেছেন শারমিনের পিতা আবদুল মালেক। তিনি বলেন, আমার মেয়েটা চা খেতে ভালোবাসতো বলে ঘরে চায়ের বাজার করতো না স্বামী। বিয়ের পর থেকে নানা অজুহাতে মারধরসহ অত্যাচার করে আসছিল মেয়েটার ওপর। এসব নিরবে সহ্য করে আসছিল মেয়েটা। তারপরও হাসি মুখে থাকতো, সহজে বুঝতে দিতো না স্বামীর অত্যাচার নিপীড়নের কথা।

গত ১৮ এপ্রিল বিকেলে স্বামীর বাড়ি থেকে শারমিনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে বোয়ালখালী থানা পুলিশ। পটিয়া উপজেলার কোলাগাঁও বাণী গ্রামের আবদুল মালেকের দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে শারমিন সবার ছোট। শারমিনের সাথে প্রায় তিন বছর আগে বোয়ালখালী উপজেলার কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নের লুধুরি পাড়ার গিয়াস উদ্দিনের সাথে সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে জান্নাত আকতার নামে দেড় বছরে একটি সন্তানও রয়েছে।

শারমিনের মা রোকেয়া বেগম ও চাচী হাসিনা বেগম জানান, শারমিনের মৃত্যুর ১৫দিন আগে প্রচ- মারধর করে গিয়াস উদ্দিন। সেদিন স্থানীয় ইউপি সদস্যের সহায়তায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছিল। এরপর স্বামী ঘরই তো মেয়েদের শেষ ঠিকানা। এতো অত্যাচারের পরও স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসে শারমিন। তবে বাপ-ভাইয়ের কাছে চায়ের বাজারের আবদার করে বসেছিল মেয়েটা। চা পাতা, চিনি, চাল-ডালসহ প্রায় একমাসের বাজার করে দেয় ভাইয়েরা।

ভাইদের দেওয়া সদাইপাতি নিয়ে ১৭এপ্রিল দুপুরে অটো রিকশা করে স্বামীর ঘরে ফিরেন পটিয়া উপজেলার কোলাগাঁও বাণী গ্রামের মেয়ে শারমিন আকতার (২২)। মনে করেছিল স্বামী খুশি হবেন। খুশি তো দূরের কথা, ঘরেই ঢুকতে দেয়নি পাষ- স্বামী। অটো-চালক ও সাথে আসা চাচাতো ভাইয়ে অনেক আকুতি মিনতির পর এবং স্থানীয় ইউপি সদস্যের অনুরোধে শারমিন ঘরে ঢোকার অনুমতি মিলে সন্ধ্যায়।

শারমিনের বড় ভাই শহীদুল বলেন, ওইদিন রাত দুইটার দিকে খবর আসে শারমিন আত্মহত্যা করেছে। দ্রুত শারমিনের স্বামীর বাড়িতে গিয়ে দেখি শাড়ি দিয়ে ঘরের ছাদ বিমের সাথে ঝোলানো মরদেহ। শারমিনের শরীরের অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন, হাতে-পায়ে ধূলা বালি, পা’দুটো চায়ের বাজার রাখা চোকির উপরে লেগে আছে।

তিনি জানান, বিয়ের পর গিয়াসের দাবি অনুযায়ী সেমিপাকা ঘর করার সময় নিজের ঘর ঠিক না করে বোনের সুখের জন্য ৩০হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এরপর আরো ১০টাকা হাজার টাকা দাবি করেছিল গিয়াস।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, যথেষ্ট আলামত ছিল মামলা নেয়ার মতো। বোয়ালখালী থানায় একাধিকবার ধর্ণা দিলেও পুলিশ অদৃশ্য কারণে মামলা নেয়নি। শারমিন ১৭ এপ্রিল রাতে মারা গেলেও তার মরদেহ পুলিশ উদ্ধার করে পরদিন ১৮ এপ্রিল বিকেলে, মর্গে পাঠানো হয় আরো একদিনপর ১৯এপ্রিল। এতে পুলিশের গড়িমসি ছিলো চোখে পড়ার মতো বলে জানালেন শারমিনের পরিবার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, শারমিনের মা, বাবা, ভাই, চাচী হাসিনা বেগম, ভাবি ফারজানা ইসয়ামিন, বোন সুমি আকতার, লাকী আকতার, খালা নুরজাহান, চাচাত ভাই মনিরুজ্জামান খোকন ও দেড় বছরের সন্তান জান্নাত আকতার। তারা শারমিন হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন।