অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

সীতাকুণ্ডে কোন্দলে ব্যস্ত আ’লীগ, নীরব সমর্থনের চেষ্টা বিএনপির

0
.

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম-৪ আসনের (সীতাকুণ্ড,পাহাড়তলী-আকবরশাহ আংশিক) জাতীয় সাংসদ নির্বাচন সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা করেছেন। শুরু হয়েছে জাতীয় নির্বাচনের হাওয়া। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা মনোনয়ন পেতে আশাবাদি তাদের মধ্য আ.লীগ, বিএনপি, জাতীয় পাটির্র ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। তবে রাজনৈতিক কেশৈলে বিএনপির কিছুটা নীরবে কাজ করলেও দেখা গেলেও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রাথীরা মাঠেই রয়েছেন।

তবে ইতোমধ্যে প্রধান দুই দলের মধ্যে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র প্রার্থী হচ্ছে কারা তা নিয়ে জনগনের জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। আগামী নির্বাচনে কে জয়ী হবে আ.লীগ না বিএনপি, এমন ইস্যুতে সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের মাঝে আগাম আনন্দ উৎসাহ দেখা দিয়েছে। হাট-বাজার ও দোকান পাটে মাঠে ঘাটে যেখানে সেখানে আলোচনায় রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আ.লীগ ও বিএনপি। এছাড়া জাতীয় পার্টি কর্মকান্ডের নানা বিষয় আলোচনায় উঠে আসছে আংশিক। আগামী সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আ.লীগের একাধিক প্রার্থী থাকলেও বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী নিশ্চিত করেছে। দলীয় টিকিট পেতে ইতিমধ্যে অনেকেই ঢাকায় কেন্দ্রিয়ও নিজ জেলায় যোগাযোগ তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয় সাধারণ জনগনের মন্তব্য জানা যায়, বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে ক্ষমতাসীন আ.লীগ সীতাকুণ্ড আসনে শক্ত অবস্থানে থাকবে। আর যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে তাহলে ফলা ফল পাল্টে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। সীতাকুণ্ড আসনের বর্তমান আ.লীগের সাংসদ আলহাজ্ব দিদারুল আলম আগামী নির্বাচনের প্রার্থী হিসাবে নিজেকে প্রস্তুত রেখেছেন। অপরদিকে সীতাকু- উপজেলার আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূইয়া মনোনয়ন প্রত্যাশী, বর্তমান মাঠে ময়দানে পড়ে রয়েছেন মনোনয়নের আশাবাদী রয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন, তিনি সাবেক সাংসদ মরহুম এবি এম আবুল কাশেমের পুত্র।

এদিকে ঢাকার সীতাকুণ্ড সমিতির সাধারন সম্পাদক মো: বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী, মোস্তফা কামাল চৌধুরী এবং পাহাড়তলী আ.লীগের সভাপতি আফসার মিয়া। কাশেম মাস্টারের ভাই শিল্পপতি নাছির উদ্দিনের ছেলে সৈয়দ মোহাম্মাদ তানভীর। তারা তাদের সমর্থিত নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও মাঠে সবার চাইতে বেশী কাজ করতে দেখা যায় এস এম আল মামুন ও বর্তমান এমপি দিদারুল আলম।

সীতাকুণ্ড উপজেলার চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন বলেন, দলের মধ্যে কোন কোন্দল নেই । আমি মনোনয়ন পাওয়ার আশাবাদী । মনোনয়ন পেতে মাঠে কাজ কর্ম সকল ধরনের কর্ম সূচী চালিয়ে যাচ্ছি। যাদি দল থেকে আমাকে মনোনয়ন না দেয় নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবে আমি তার জন্য কাজ করে যাব । তবে আমি আশাবাদি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে তবে নেত্রী সব খবর রাখে কারা মাঠে কাজ করছে আর কারা মাঠে নাই। যাকে মনোনয়ন দেবে আমি নৌকার বিজয় ছিনিয়ে আনবো নেত্রীর নির্দেশে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলম বলেন, আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। রাজনীতি আমার রক্তে মিশে আছে। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাদেশের মত সীতাকু-ে ও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এ উপজেলার মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আগামী দিনেও আওয়ামীলীগের পাশে থাকবেন। সীতাকু- আ.লীগ বা কারো সাথে কোন ধরনের গ্রুপিং নেই জানিয়ে তিনি আরো বলেন, নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচন করব।

অন্যদিকে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী বিগত সীতাকুণ্ড আওয়ামীলীগের দুঃসময়ের কান্ডারি মুক্তিযোদ্ধা (বি.এল.এফ/মুজিব বাহিনী) ও সীতাকুণ্ড সমিতি-ঢাকা‘র সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আলহাজ্ব বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, দুঃসময়ে আমি দলের নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম, আর্থিকভাবে সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন যা বর্তমানে অব্যাহত রেখেছি। বিগত ২০০১ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার আবেদন করলে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে পরবর্তী সময়ে মনোনয়নের জন্য বিবেচনা করবেন বলে পত্র মারফত আস্বস্ত করেছেন। তাই আমাকে এবার আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন দিলে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নৌকা প্রতীককে বিজয় আনতে পারব। আ.লীগের পাশাপাশি অন্যান্য দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও প্রচার প্রচারনায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

এই আসনে বিএনপি’র এমপি প্রার্থী হিসাবে রয়েছেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব বর্তমান কারাবন্ধী নেতা লায়ন আসলাম চৌধুরী এফসিএ একক প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নের আশাবাদী।

আলোচনায় যতোখানি নাম-ডাক, সমালোচনাতেও ঠিক ততোটাই। তারপরও বিএনপির ধানের শীষের একক প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম-৪ আসন সীতাকুন্ডে নিশ্চিত প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আসলাম চৌধুরী। তবে তিনি বর্তমানে কারাগারে থাকলেও তার জায়গায় অন্য কেউ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে না বলেই অভিমত সীতাকুন্ডের বিএনপি সমর্থকদের। বিএনপির দূর সময়ের কাণ্ডারি। সীতাকুণ্ড অন্য কোন নেতা ছিলনা বিএনপির দূরসময়ে পাশে । সীতাকুণ্ড মাটি ও মানুষের বন্ধু যিনি সবসময় জনগণের পাশে ছিলেন তার পাশা পাশি দূরসময়ে নেতা কর্মিদের পাশে ছিলেন। তিনি বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী।

সীতাকুণ্ড আসনে বিএনপি’র এক জন প্রার্থী লায়ন আসলাম চৌধুরীর পক্ষে উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক জহুরুল আলম জহুর জানান, সহায়ক সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন। এই সরকারকে জনগন ভোটের মাধ্যমে সকল প্রকার গুম, খুন , নির্যাতনের সহ সব ধরনের জবাব দিবেন। এরপরও এ দলের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে সাবেক মন্ত্রী এল কে সিদ্দিকীর পরিবারের সদস্যর নাম রয়েছে।

এদিকে প্রচারনায় নেমেছে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ্ব দিদারুল কবির দিদার। তিনি মহাজোট থেকে এই আসনে প্রার্থী হওয়ার আশা প্রকাশ করে প্রতিনিয়ত গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর মধ্যে তিনি অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠনের কাজসহ উপজেলায় বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া বিভিন্ন সভা-সেমিনারের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন ।

দিদারুল কবির দিদার বলেন, আমাদের নেতা হুসেন মুহাম্মদ এরশাদ আমার বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলবেন। সীতাকু-ে যেহেতু আওয়ামীলীগের অধীক প্রার্থী রয়েছে তাই তাদেরকে মনোনয়ন দিলে শৃঙ্খলা ভাঙ্গার আশঙ্খা রয়েছে। তাই মহাজোট থেকে আমাকে মনোনয়ন দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মনোনয়ন না দিলেও জাপা থেকে একক প্রার্থী হিসাবে আমি নির্বাচন করব।

অপরদিকে মহাজোটের অন্যতম শরীক দল জামায়াতে ইসলামী মাঠ গোছাতে ব্যাস্ত। জামায়াত এককভাবে আসনটি পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সেখানে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক শিবির নেতা আনোয়ার সিদ্দিকী চৌধুরী। তিনি ফৌজদার এলাকার সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান।

চট্টগ্রাম -৪ সংসদীয় আসন হল বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার একটি। এটি চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত জাতীয় সংসদের ২৮১ নং আসন। এ আসনটি চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৯ ও ১০ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওযামীলীগ থেকে দিদারুল আলম ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮১৫টি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী জাসদ থেকে মফিজুর রহমান ভোট পেয়েছিলেন ৪ হাজার ৪২ টি ভোট।

এদিকে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই অভিযোগ ছাড়ছিলো না এমপি দিদারুল আলমের। পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর প্রচার প্রচারণায় অংশ নেয়া, আওয়ামী রাজনীতি না করে আওয়ামী লীগের টোকেনে এমপি হওয়া, বেগম খালেদা জিয়ার সাথে ঢাকাতে সাক্ষাৎ করা, সীতাকুন্ড আওয়ামীলীগে কোন্দল সৃষ্টি করা, সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করা, চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজম নাছির উদ্দিনকে পরিপূর্ণ সমর্থন না দেয়াসহ নানা অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। সীতাকুন্ড আওয়ামীলীগে বিবাদমান দুই গ্রুপ হিসেবে পরিচিতি পায় উপজেলা চেয়ারম্যান মামুন গ্রুপ ও সংসদ সদস্য দিদারুল আলম গ্রুপ।

তবে এসব অভিযোগ খন্ডন করেছেন এমপি দিদারুল আলম জানান, ২০১৩ সালের নভেম্বরে যখন সীতাকুন্ডে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছিলো তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে আওয়ামীলীগ থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনোয়ন দেন। তিনি তার পর থেকেই কাজ করে গেছেন। চেষ্টা করছেন মানুষের সেবা করার।

নিজের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তবে আমি ব্যবসায়ী। ২০১৩ সালের আগে রাজনীতি না করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তার যোগাযোগ ছিলো। তিনি ব্যবসা করলেও সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার অনুমোদনক্রমে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা ফাউন্ডেশন কাট্টলীতে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ সংগঠনের ব্যানারে বঙ্গবন্ধু বিদ্যাপীঠ ও বঙ্গবন্ধু স্কুল তৈরী করেছেন। আর সেই সুবাদে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও বিভিন্ন সূত্রে খবরাখবর নিয়ে শেখ হাসিনা তাকে মনোনোয়ন দিয়েছিলেন।

তিনি আরো বলেন, তার সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। সীতাকুন্ডে ৯০টি ওয়ার্ড ও ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে। ৯০ টি ওয়ার্ডের প্রতিটি কর্মকান্ডে তিনি জড়িত আছেন। মনোনোয়ন পাওয়ার পর তিনি সীতাকুন্ডবাসীকে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা পূরন করতে পেরেছেন বলে জানান। সীতাকুন্ডে একটা কলেজকে সরকারী কলেজে উন্নীতকরণ করতে চেয়েছিলেন। তা করতে পেরেছেন। বাঁশবাড়িয়া বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করেছেন, তাহের মঞ্জুর নামে এলাকায় নতুন একটা কলেজের কাজ শুরু করেছেন তিনি। অনুদানের বাইরে তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে করেছেন নিজের টাকা খরচ করে।  তিনি আগের কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি এমপি মনোনোয়ন পাওয়ার আগে সীতাকুন্ড আওয়ামীলীগ ঘরে ঢুকে গিয়েছিলো। সেখান থেকে তিনি আওয়ামীলীগকে বের করে নিয়ে আসতে পেরেছেন।

আর সাবেক সাংসদ আবুল কাশেম মাষ্টারের কথা উল্লেখ করে বর্তমান এই সাংসদ বলেন, আগের সাংসদ চলতো জামায়াত-শিবির, বিএনপির লোক দিয়ে। ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াতের সেই অবরোধের নামে পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ মারার পর কোন জামায়াত-শিবির, বিএনপি কর্মীকে ধরে নিয়ে গেলে আগের সাংসদ তদবীর করতো। কিন্তু সেসব হওয়ার এখন আর কোন অবকাশ নেই বলে জানান তিনি।

এমপি দিদারুল আলম আরো বলেন, আওয়ামীলীগে আগে নেতাকর্মীদের মূল্য ছিলো না। এখন তারা আমার কাছে এসে মূল্য পায়। বিএনপির চেয়ারপার্সনের সাথে তার দেখা করতে গিয়ে তোলা ভাইরাল হওয়া একটি ছবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ছবি এডিটিং। ষড়যন্ত্র করে তাকে এ ছবিতে সংযোজন করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমি খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে যাবো কেন? আমি ২০১৩ সালের তো আগে কোন দলই করতাম না।

তিনি আরো বলেন, এখন তিনি আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি যদি আগামী নির্বাচনে মনোনোয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন, সীতাকুন্ডবাসীর সেবক হয়ে কাজ করবেন। অসমাপ্ত কাজ শেষ করবেন বলে জানান এই সাংসদ। তার পৈত্রিক ব্যবসা ছাড়াও শীপ ব্রেকিং ও শিপিং ব্যবসা রয়েছে বলে জানান এই নেতা। তবে এমপি দিদারুল আলমের এসব কর্মকান্ড জনগনকে আইওয়াশ করা আর কিছুই নয় বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সীতাকুন্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন। মামুন সাবেক সাংসদ আবুল কাশেম মাস্টারের বড় ছেলে।

কেন মনোনোয়ন প্রত্যাশী এ প্রশ্নের উত্তরে যুবলীগ এই নেতা বলেন, আমি এলাকার জন্য দিনরাত কাজ করছি। আমার বাবা আবুল কাশেম মাষ্টার একজন জনপ্রিয় সাংসদ ছিলেন। তার বাবার নাম বজায় রাখতে সবসময়ই তিনি তৎপর বলে জানান তিনি। আমি এলাকার আনাচে-কানাচে উন্নয়ন করেছি।

এমপি দিদারুল আলমের দিকে অভিযোগের তীর তুলে মামুন বলেন, আমাদের এমপি, ব্রীজ, কালভার্ট কোনকিছুর জন্যই নিজ থেকে থোক বরাদ্দ আনতে পারেননি। নিজে থেকে কাজ করা আর অটো কাজ করা এক নয় বলে জানান তিনি। প্রত্যেক এমপির এলাকার উন্নয়নের জন্য ২০ কোটি টাকা সরকারী অনুদান থাকে। সেটা যেই এমপি হোক, পাবেন। কিন্তু তিনি নিজ উদ্যেগে এ টাকার বাইরে আর কোন উন্নয়ন প্রকল্প দেখিয়ে কোন টাকা বরাদ্দ আনতে পারলে বোঝতাম, সেটি তার ক্রেডিট। কিন্তু সে ক্রেডিট তিনি অর্জন করতে পারেননি।  এমপি দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে মামুন আরো বলেন, তিনি বিএনপি পরিবারের ছেলে। সে আবহে বড় হয়ে আওয়ামীলীগের টিকেট পেয়েছে। মামুন আরো বলেন, ২০১৩ সালে বিএনপি জামায়াতের লোকজন পেট্রোল ঢেলে বাড়বকুন্ড ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাদেকুকল্লাহ মিয়াজির ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিলো। সেই মামলার আসামীর জন্য এমপি দিদারুল আলম তদবির করেছেন।

এসএম আল মামুন পূর্বের এক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, অবরোধের সেই সময় বিএপি, জামায়াত-শিবিররা গরুভর্তি একটি ট্রাককে পুড়িয়ে দিয়েছিলো। এতে ট্রাকের সব গরু মারা যায়। আর এ ট্রাকটি পোড়ানো হয় ফৌজদারহাট ইউনুসের দোকানে। এলাকায় ইউনুস বোরকা ইউনুস নামে পরিচিত। কারন সে বোরকা পড়ে এলাকা ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলো এক সময়। পরবর্তীতে গরু পোড়ানো মামলায় ইউনুসকে আসামী করা হলে এমপি দিদারুল আলম তদবির করে ইউনুসকে মামলার চার্জশীট থেকে বাদ দেন। ইউনুসের তখন সীতাকুন্ড উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক ছিলেন।

মামুন আরো বলেন, এমপি দিদারুল আলমের ফুফাতো ভাই ১০ নং ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জসীম বর্তমানে তার প্রাইভেট সেক্রেটারী (পিএস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এসএম আল মামুন আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাকে যদি যোগ্য মনে করে মনোনোয়ন দেন ও পরবর্তীতে তিনি নির্বাচিত হলৈ তার বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করবেন। সীতাকুন্ডবাসীর পাশে থাকবেন। তিনি একজন খাস আওয়ামীলীগ কর্মী। তাই দল তধা জাতির জন্য নিবেদিত থাকবেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে দীর্ঘসময় রাজনীতিতে থাকলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আলোচনায় নাম আসে বিএনপির আসলাম চৌধুরীর। তখন সীতাকুন্ডে সৃষ্টি হয়েছিলো অরাজকতার। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তখন প্রতিদিনই চলেছে পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ হত্যা, গাড়ি পুড়ানো। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন ও চট্টগ্রাম-সিলেট রেললাইন অচল করে দিতে সীতাকুন্ডে সংঘটিত হয় একের পর এক নাশকতা। এজন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। আর অধিকাংশ নাশকতার খড়গ পড়ে আসলাম চৌধুরীর উপর। নাশকতার অর্ধশতাধিক মামলা হয় তার নামে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ড এলাকায় শত শত গাড়ি জ্বালাও-পোড়াওয়ের প্রধান অর্থদাতা হিসেবে আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে প্রায় ৩০০ কর্মীসহ আসলাম চৌধুরী গ্রেপ্তার হন। ছয় মাস জেল খেটে ওই বছরের ১৬ জুন জামিনে বের হয়েই তিনি আত্মগোপন করেন। সেই থেকে বেশিরভাগ সময়ই তিনি চট্টগ্রামের বাইরেই থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের একটি পেেক্ষর সঙ্গেও গোপন যোগাযোগ রয়েছে আসলাম চৌধুরীর। ফলে সীতাকুন্ড এলাকায় নাশকতার অনেক মামলা থেকে তিনি বাদ ও পড়েছেন। এর সাথে যোগ হয় চেক প্রতারণা ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও। ভারতে গিয়ে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রের অভিযোগেও জেল খাটেন। বেশিরভাগ মামলায় জামিনে থাকলেও চেক জালিয়াতির মামলায় কারাগারে আছেন আসলাম চৌধুরী। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আসলাম চৌধরী সীতাকুন্ড আসন থেকে বিএনপির প্রাার্থী হয়ে পরাজিত হন। তবে দলে তার প্রভাব দ্রুত বাড়তে থাকে। তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হন। এর কয়েক বছর যেতে না যেতে ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল তিনি উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হন। পরে বিএনপির কেন্দ্রীয় সম্মেলন শেষে হন দলের যুগ্ম মহাসচিব।

আসলাম চৌধুরীকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে বিএনপির ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ কানেকশন নিয়ে। এ প্রসঙ্গে আসলাম চৌধুরী তখন দাবি করেছিলেন, ব্যবসায়িক কাজে তিনি ভারত গিয়েছিলেন। মোসাদের সঙ্গে সরকার উৎখাতের তৎপরতার খবর ভিত্তিহীন। সেখানে শিপন বাবুর সঙ্গে তার পরিচয়। তার অনুরাধে এক অনুষ্ঠানে গেলে সেখানে তেল আবিব-দিল্লি সম্পর্ক নিয়ে সেমিনারে হচ্ছিল। ওই বৈঠকের পর একটি গ্রুপ ছবিতে তিনি যোগ দেন।

জানা গেছে, আসলাম চৌধুরী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে তিনি সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করার আগে তিনি এফসিএ পাস করেন। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা আসলাম চৌধুরী ২০০২ সালে জিয়া পরিষদের মাধ্যমে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি জিয়া পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জানা গেছে, এর আগে শিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। পরে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর হাত ধরে ২০০৪ সালে বিএনপিতে প্রবেশ করেন তিনি। ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি। এর পর উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। তাকে আহ্বায়ক করে সদস্য সচিব করা হয় রাউজানের পৌর মেয়র আবদুল্লাহ আল হাসানকে। সদস্য সচিবের সঙ্গেও তার বিরোধ সৃষ্টি হয়। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে সীতাকুন্ড সংসদীয় এলাকায় মনোনয়ন লাভ করে তিনি পরাজিত হন। কিন্তু বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা না থাকার পরও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব বনে যাওয়ায় দলের অনেক সিনিয়র নেতা হতবাক ও হতাশ হয়ে পড়েন। দলের অধিকাংশ নেতাদেও ধারন, লন্ডনে থাকা তারেক জিয়ার সমর্থনে তার যুগ্ম মহাসচিব হওয়ার সুযোগ মিলে।

মহানগর বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, আসলাম চৌধুরীর বিএনপি রাজনীতির বয়স কতো? কতো সিনিয়র, ত্যাগী নেতার এখনো দল মূল্যায়ন করতে পারেনি, আর আসলাম চৌধুরী যুগ্ম মহাসচিব বনে গেছেন। তবে তার কথাতেও এটাই আভাস মিলে যে, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের হাত ধরে অর্থনৈতিক উত্থান আসলাম চৌধুরীর। জোট সরকারের আমলে আসলাম চৌধুরীকে দেশের বৃহত্তম আদমজী জুটমিল ভাঙার কাজ দিয়েছিলেন তারেক রহমান।

এদিকে আসলাম চৌধুরী নিজস্ব কিছু চমকপ্রদ কায়দায় ব্যাংক ঋণ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। চট্টগ্রামের কিছু রুগ্ন শিল্প নামমাত্র টাকায় কিনে সেগুলো চালু করার জন্য বিরাট অংকের ব্যাংক ঋণ নেন। যার অধিকাংশ এখনো অনাদায়ী। আর ব্যাংক থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে অল্প সময়ে গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। রাইজিং গ্রুপ নামে গড়ে তোলেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সীতাকুন্ড ও দেশের বিভিন্ন স্থানে তার রয়েছে একাধিক সিএনজি ফিলিং স্টেশন। বোয়ালখালীতে আছে কনফিডেন্স সল্ট নামে একটি অত্যাধুনিক লবণ কারখানা। কক্সবাজারে তার রয়েছে বিপুল পরিমাণ জমিজমা। চকরিয়ার হারবাংয়ে অবস্থিত ইনানী রিসোর্টের মালিকও তিনি। নগরের নাসিরাবাদ ও সাগরিকা সড়কে তার রয়েছে ফিশ প্রিজার্ভার্স নামে দুটি মৎস্য সংরক্ষণ কারখানা।

এত আলোচনা-সমালোচনার পরও সীতাকুন্ডে আসলাম চৌধুরীর কোন বিকল্প নেই বলে এখনো ধারনা পোষন করছেন সীতাকুন্ডের বিএনপি সমর্থকরা। সীতাকুন্ড উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহব্বায়ক মো: জহরুল আলম জহুর জানান, ‘আসলাম চৌধুরী বিএনপি তথা এলাকার একজন জনপ্রিয় নেতা। তার নামে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার সবই মিথ্যা। আসলাম চৌধুরীর কোন বিকল্প নেই সীতাকুন্ডে। জহরুল আলম জহুর আরো জানান, আসলাম চৌধুরী সব ষড়যন্ত্র ছেদ করে সীতাকুন্ড থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। নৌকার ভরাডুবি ঘটিয়ে ধানের শীষের বিজয় আনবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এখন শুধু আসলাম চৌধুরীর মুক্তি সময়ের অপেক্ষা।