অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

নিরীহ হাবিবকে মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগ!

5
.

চট্টগ্রামে হাবিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে মিথ্যা মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে র‌্যাবের বিরুদ্ধে। আজ বুধবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের পক্ষ থেকে এ দাবী করেন নিহতের মেয়ে সানজিদা রহমান ইভা ।

নিহতের পরিবারের দাবি গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর মোমিন রোড ঝাউতলা মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হওয়ার পর সাদা পোশাকধারী কয়েকজন তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। পরে মাদক ব্যবসায়ি সাজিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করে র‌্যাব।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয় জায়গা সংক্রান্ত প্রতিহিংসা পরায়ন মিথ্যা ও বানোয়াট মামলার শিকার হয়ে হাবিবুর রহমানের নির্মম মৃত্যু হয়েছে। সানজিদা ইভা বলেন,আমার বাবার কি অপরাধ ছিলো? তারা কেন আমার বাবাকে হত্যা করেছে? ছোট ছোট তিন সন্তান নিয়ে কিভাবে সংসারের হাল ধরবে উপার্জন অক্ষম মা? তাঁর বাবা কখনো মাদক ব্যবসায়ী ছিলেননা বলেওদাবী করেন ইভা। এসময় প্রায় ১৫ মিনিট ধরে একাধারে কেঁদেছে মেয়ে সানজিদা ও তার দু ভাই। সংবাদ সম্মেলনে তার ভাই আব্দুল আলী রাব্বি ও ছোটভাইসহ পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
এভাবে কিছু প্রশ্ন রেখে প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সকলকে কাঁদালেন সম্প্রতি র‌্যাবের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হাবিবুর রহমানের মেয়ে সানজিদা রহমান ইভা।

সংবাদ সম্মেলনে হাবিবের সন্তান।

ইভা ও তার ভাইয়ের দাবি গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর মোমিন রোড ঝাউতলা মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হওয়ার পর সাদা পোশাকধারী কয়েকজন তার বাবাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তাকে মাদক ব্যবসায়ি সাজিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করে র‌্যাব।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয় জায়গা সংক্রান্ত প্রতিহিংসা পরায়ন মিথ্যা ও বানোয়াট মামলার শিকার হয়ে হাবিবুর রহমানের নির্মম মৃত্যু হয়েছে। প্রকৃত সত্য ও প্রকৃত ঘটনার সত্যতা এবং ঘটনার মূল হোতাদের মুখোশ উন্মোচন করতে প্রধানমন্ত্রীসহ সংবাদকর্মীদের অনুরোধ জানিয়েছেন হাবিবুর রহমানের মেয়ে।

র‌্যাব দু’জনকেই মাদক ব্যবসায়ী উল্লেখ করে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হওয়ার দাবি করলেও তাদের মধ্যে হাবিবকে ওইদিন দুপুরে প্রশাসনের লোক পরিচয়ে ‘ধরে নিয়ে’ গিয়ে রাতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

.

হাবিবের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে স্ত্রী মর্জিনা বেগম এবং দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে অনেকটা মানবেতর ভাবেই বসবাস করছেন । এসময় বড় ছেলে আব্দুল আলী রাব্বী এবং মেয়ে অপর্ণাচরণ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সানজিদা রহমান ইভাও বাবার জন্য কাঁদছিলেন।

হাবিবের ছেলে রাব্বি অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝাউতলা বায়তুল ফালাহ্ মসজিদে জোহরের নামাজ পড়ে বের হওয়ার পর তাদের বাবাকে কয়েকজন লোক ধরে নিয়ে গেছেন বলে পাড়ার পরিচিতজনরা তাদেরকে জানিয়েছেন।

এ সময় মসজিদ থেকে বের হওয়া মুসল্লিারা তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয় দেন। মুসল্লিরা তাদের পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে তারা হাবিবকে নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠে দ্রুত চলে যান। একথা জানার পর তাদের মা’সহ কয়েকজন আত্মীয় মিলে নগরীর কয়েকটি থানা, ডিবি অফিসে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। তারা প্রত্যেকেই হাবিব নামে কাউকে আটক করা হয়নি বলে তাদেরকে জানিয়েছে। রাতে টিভির খবরে ছবি দেখার পর ভোরে চমেক হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তাদের বাবার লাশ দেখতে পান।

হাবিবের শ্বশুর নজরুল ইসলাম বলেন, নগরীর ‘ঝাউতলায় জায়গার মালিকানা নিয়ে এক প্রভাবশালীর সাথে হাবিবের বিরোধ ছিল। তার জেরে ওই প্রভাবশালী প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তার মেয়ে ও মেয়ে-জামাইয়ের নামে বিভিন্ন সময়ে থানায় মিথ্যা মাদকের মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।
একাধিকবার পুলিশ হাবিবকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে হাবিব ওমানে চলে যায়। বিদেশ থেকে ফিরে কিছুদিন কাঁচা সবজির ব্যবসা করে এবং তবলীগে যায়। ছেলে রাব্বি বাবাকে নিয়ে চট্টগ্রাম কোর্ট ভবনে একটি চায়ের দোকান করতো। এখন প্রবাসী বোন ও বোন জামাইয়ের পাঠানো টাকায় সংসার চলে। সর্বশেষ প্রায় এক মাস কারাবাসের পর হাবিব গত মঙ্গলবার জামিনে মুক্তি পায়। সবখানে ব্যর্থ হওয়ার পর প্রতিপক্ষ এবার র‌্যাব দিয়ে হাবিবকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করিয়েছে।

এদিকে হাবিব ধরে নিতে সহযোগিতাকারী র‌্যাবের সোর্স মোশারফও একই রাতে র‌্যাবের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। মোশারফের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই র‌্যাব হাবিবকে ধরে নিয়ে যায়। হাবিবের স্ত্রী মর্জিনা বলেন, র‌্যাবকে ভূল তথ্য দেয়ায় পরিণাম হিসেবে মোশারফকেও মরতে হয়। মর্জিনা জানান, হাবিবকে কেন ধরিয়ে দেয়া হয় এনিয়ে মোশারফ ও তার স্ত্রী নাজমার বাক বিতন্ডা হয়। তবে এ সংক্রান্তে নাজমার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মর্জিনা জানান, বৃহস্পতিবার বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ৯ টাকা নিয়ে বের হয়েছিল হাবিব। বাসার অদুরেই লাকী হোটেলে চা নাস্তা করেছিল হাবিব। তবে টাকা কম থাকায় দোকানদারকে বিল পরিশোধ করতে না পেরে বলেছিলেন কখনো মরে গেলে মাফ করে দিতে। এসময় ছেলেকে বলেছিলেন প্রথম রমজানের সেহরি খেতে তার জন্য আলুর ভর্তা তৈরি করতে।

মর্জিনা বলেন, হাবিব কখনো ধুমপান করতেননা। তাহলে তার মৃত্যুর পর হাতে সিগারেট কিভাবে আসল। বাসায় নুন আনতে পান্তা ফুরায় যেখানে তার হাতে এত টাকা এবং অস্ত্র কোত্থেকে এসছে।

হাবিবের ছেলে রাব্বি বলেন, হাবিবকে নিয়ে যাওয়ার পর বিকাল আনুমানিক সাড়ে পাঁচটার দিকে বাসার একটু দুওে র‌্যাবের একটি টহল টিম দাঁড়ানো ছিল। সেখানে তার মাসহ গিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তাকে তার বাবাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এসময় র‌্যাব কর্মকর্তারা ঔ গলিতে সিসি ক্যামেরা আছে কিনা তাদেও কাছে জানতে চান। রাব্বি সিসি ক্যামেরা আছে জানালে র‌্যাব কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে মহল্লা কমিটির কাছ থেকে সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রন রুমের চাবি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন। এসময় মহল্লা কমিটির লোকদের রুমের ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। কিছুক্ষন পর র‌্যাব কর্মকর্তারা বের হয়ে বলেন সিসি ক্যামেরায় কিছু নেই। কিন্তু মহল্লা কমিটির দাবী সিসি ক্যামেরা লাগানোর পর থেকে কখনো বন্ধ ছিলনা। তাহলে রেকর্ড গেল কোথায়। রাব্বি বলেন র‌্যাব কর্মকর্তারা কৌশলে ক্যামেরার সকল রেকর্ড মুছে দিয়েছে।

এদিকে কোতোয়ালী থানা সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র কোতোয়ালী থানায় হাবিবের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা আছে। ২০১৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ও ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর হাবিব দু’বার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। একই থানায় তার স্ত্রী মর্জিনার বিরুদ্ধেও মাদক আইনের দুটি মামলা রয়েছে। এছাড়া, কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত মোশারফ মাদকের আখড়ার অন্যতম নিয়ন্ত্রক বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও তার বিরুদ্ধে কোন মামলার সন্ধান পাওয়া যায়নি।

৫ মন্তব্য
  1. M Nurul Huda বলেছেন

    এভাবে আরও কতজনকে হত্যা করা হবে?আসল অপরাধীরা থেকে যাবে ধরা ছোয়ার বাইরে

  2. রফিকুল আলম বলেছেন

    মাদকের নামে আর কত?

  3. Alim Uddin বলেছেন

    সরকার চাইলে কি এই লোকের জীবন ফিরিয়ে দিতে পারবে? বেশরম দের কে নিন্দা জানিয়ে লাভ নেই।

  4. Montu Khalifa বলেছেন

    অবৈধ সরকার দেশটাকে নরককুন্ডে পরিনত করেছে তারা নির্বিচারে মানুষ হত‍্যা করে চলেছে আর মুখের বুলি হিসাবে আইনের শাসনের কথা বলে জনগনকে বিভ্রান্ত করে চলেছে এ ভাবে আর কত মায়ের কোল খালি হবে, হে আল্লাহ আপনি এই নর পিশাচের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করুন এবং এই নর পিশাচদের উপর কঠীন গজব নাযিল করুন আমিন।

  5. MD Jahirul Islam বলেছেন

    কোন দেশে আছি, অপরাধীরা বেঁচে যায়,নিরীহ মানুষ পেঁসে যায়।