অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রামে মাদক ব্যবসায়ী ও পৃষ্টপোষক ৯০ প্রভাবশালী বহাল তবিয়তে

0
মাদক পৃষ্টপোষক তালিকায় নাম থাকা ৫ ওসি। নীচে (ডানে) দুই ওয়ার্ড কাউন্সিলর।

চট্টগ্রামে মাদক ব্যবসায়ী ও পৃষ্টপোষকের তালিকায় থাকা ৯০ প্রভাবশালী ব্যক্তি এখনো রয়েছে বহাল তবিয়তে। তালিকার অনেকেই নিজেদের নাম বাদ দিতে ইতোমধ্যে নানা মহলে তদবির শুরু করেছে। এদের মধ্যে দু একজন আতংকে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে অনেকটা লোক চক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন।

তালিকায় থাকা সিএমপি’র প্রভাবশালী পাঁচ ওসি নিজেদেরকে মাদক বিরোধী হিসেবে প্রচার করছে বিভিন্ন গনমাধ্যমে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়সহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের তালিকায় এসব ওসিদের নাম থাকলেও সিএমপি’র কর্তা ব্যক্তিরা এ ব্যাপারে জানেনা বলে দাবী করছেন।

.

এদিকে শুধু ওসি পর্যায়ের নয় ৯০ জনের তালিকায় নাম রয়েছে সিএমপি’র বেশ কয়েকজন এস আই, এএসআই এর। এদের মধ্যে অন্যতম আলোচিত উপ পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) হারুন। সিএমপিতে ঘুরে ফিরে বিগত প্রায় ১৮ বছর ধরে বিভিন্ন থানা ফাঁড়িতে রয়েছেন তিনি।  ইতিমধ্যে অনেক নিরীহ ব্যক্তিকে ইয়াবাসহ মাদক দিয়ে মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে জেলে পাঠানোসহ মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

এদিকে পুলিশ কর্মকর্তার পাশাপাশি এ তালিকায় রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দুজন প্রভাবশালী কাউন্সিলরের নাম। এদের একজন পাঠানটুলি ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদের, অপরজন ৩১ নং আলকরন ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেক সোলাইমান সেলিম। দুজনই ইতোমধ্যে তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দিতে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। রয়েছেন লোক চক্ষুর অনেকটা অন্তরালে।

তালিকা থেকে নিজেদের নাম বাদ দিতে মেয়রের কাছে ধর্না দেয়ার বিষয়টি স্বীকার কওে ৩১ নং আলকরন ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেক সোলাইমান সেলিম বলেন, মেয়র আমার অভিভাবক হিসেবে তাঁর কাছে আমি যেতেই পারি। এ ছাড়া তালিকায় নাম আসার বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি। কেন তালিকায় নাম আসলো জানিনা। আমি কখনো মাদকের সাথে কোন ভাবেই সম্পৃক্ত ছিলামনা। তবে প্রতিপক্ষ হয়তো প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে নাম তালিকাভুক্তি করাতে পারে বলে তাঁর ধারনা।

চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় মাদক ব্যবসায় যুক্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ৯০ জনের তালিকায় ৪৫ জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী এবং নগরের পাঁচ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২৫ জনের নাম রয়েছে।

.

সাম্প্রতিক সময়ে মাদক চোরাকারবারিদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হলেও এদের সহায়তাকারী ও পৃষ্ঠপোষকেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত আট মাসে চট্টগ্রাম নগরের প্রধান মাদক আস্তানা ‘বরিশাল কলোনি’ এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। তাঁদের মধ্যে দুজন নিহত হন গত বৃহস্পতিবার রাতেই।

র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মাদক বিক্রেতা, সেবনকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের মাদক ব্যবসা ছাড়তে হবে। নইলে তাদের জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। তারা যত বড় প্রভাবশালীই হোক, আর কোনো ছাড় নয়।

পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম নগরের প্রায় ৫০০ জায়গায় মাদক বেচাকেনা হয়। এর মধ্যে বরিশাল কলোনি, চট্টগ্রাম স্টেশন, কদমতলী বাস টার্মিনাল, মতিঝরনা, এনায়েতবাজার গোয়ালপাড়া, বায়েজিদ শের শাহ কলোনি, অক্সিজেন মোড়, ফিরোজ শাহ কলোনি, অলংকার মোড়, পাহাড়তলী, টাইগারপাস, বাটালি হিল মাদকের সবচেয়ে বড় বাজার।

মাদক চোরাকারবারিদের সহায়তাকারী হিসেবে তালিকায় নাম আছে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচ ওসির। তাঁদের মধ্যে পাহাড়তলী থানার ওসি মো. আলমগীর ও আকবর শাহ থানার আলমগীর মাহমুদ সম্প্রতি বদলি হয়েছেন।  অন্য তিন ওসি হলেন, পাঁচলাইশ থানার মহিউদ্দিন মাহমুদ, পতেঙ্গা থানার আবুল কাসেম ভূঞা ও বন্দর থানার এস এম ময়নুল ইসলাম। এ ছাড়া থানা বা ফাঁড়ির ২০ জন এসআই, এএসআই ও কনস্টেবলের নাম আছে তালিকায়।

ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করছি, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া।’ আবুল কাসেম ভূঞা বলেন, ‘আমরা মাদক ধরছি বলে কেউ আমাদের নাম বলতে পারে।’ এস এম ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘বন্দর এলাকায় মাদকের ব্যবহার কম। তবু প্রতি মাসে ১৮-২০টি মামলা আমরা নিচ্ছি।  বিদ্বেষ প্রসূত হয়ে কেউ আমাকে ফাঁসাতে পারে।’

পৃষ্ঠপোষকদের তালিকায় নগরের ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল কাদের রয়েছেন। তিনি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। ‘মাছ কাদের’ নামে পরিচিত এই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ২০১৫ সালে কাউন্সিলর হন। মুঠোফোনে কয়েক দফা যোগাযোগ করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে, মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দেশে সরবরাহ হচ্ছে। প্রতিদিনই ইয়াবা পাচার হচ্ছে।

চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার মাসুদ-উল হাসান বলেন, চট্টগ্রাম মাদক পরিবহনের প্রধান রুট। এর সঙ্গে কিছু গডফাদার যুক্ত। গডফাদার ও ব্যবসায়ীদের তালিকা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ শুরু করেছে। ৫ ওসিসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিপূর্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন। আইন নিজস্ব গতিতে চলবে।