অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

গ্রীষ্মের এই সময় কী খাবেন, কী খাবেন না

0

গরমকালে ডায়েটের প্রধান শর্ত পানি। গরমে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে অনেক পানি ও খনিজ লবণ বের হয়ে যায়। ফলে পানিশূন্যতা ও খাবারে অরুচি দেখা দেয়। তাই স্বাভাবিক সময়ে আপনি যদি ন্যূনতম দুই লিটার পানি পান করে থাকেন তাহলে এ সময় পান করুন সাড়ে তিন লিটার। তবে শুধু সাড়ে তিন লিটার পানি খাওয়া অধিকাংশ সময়ই কষ্টকর। সে ক্ষেত্রে পানীয় হিসেবে টক দই দিয়ে লাচ্ছি, দেশীয় ফল যেমন বেল, তরমুজ, লেবু ও বাঙ্গির শরবত খেতে পারেন। ইসবগুলের ভুসিও খেতে পারেন। কিংবা খেতে পারেন ডাবের পানি। এছাড়া ওভালটিন, দুধ, মিল্কশেক, হরলিকস, মালটোভা ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

রোদ থেকে এসে বা অতিরিক্ত পরিশ্রমের পর সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা পানি বা খাবার খাওয়া ঠিক নয়। প্রচণ্ড রোদে বা খুব পরিশ্রমের পর পাকস্থলীর কর্মক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পায়। তাই এ সময় প্রথমে সাধারণ তামপাত্রার পানি পান করুন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে তারপর ঠাণ্ডা পানি বা অন্যান্য খাবার গ্রহণ করুন।

গ্লুকোজের পানি পান করতে পারেন। শরীর ঠাণ্ডা রাখার জন্য এ সময় কাগজি লেবু, আম, তেঁতুল, বেল, ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা) ও তোকমা দিয়ে শরবত তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন ফলের রস বা জুস ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’ ও অন্যান্য ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে। ইসবগুলের ভুসির শরবতও খুবই উপকারী। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, অন্ত্র ও পাকস্থলীর প্রদাহ, রক্ত আমাশয় ইত্যাদি উপশমে বেশ কার্যকর।

গরমে অনেকের এসিডিটির সমস্যা বেড়ে যায়। গরমে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে অনেক পানি বের হয়ে যায়। ফলে তৈরি হয় পানিশূন্যতা। অল্প কিছু খেলেও পেটে অস্বস্তি আর বদহজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর সহজ সমাধান হচ্ছে পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করা। ভাজাপোড়া, তেল ও মসলাদার খাবার পরিহার করা। খাওয়ার পরই পানি খেলে পাকস্থলীর জারক রস পাতলা হয়ে যায়। এ কারণেও হজমের গণ্ডগোল ও এসিডিটি দেখা দেয়। খাওয়ার আধাঘণ্টা পর পানি খান। খুব পিপাসা পেলে খাওয়ার পর এক ঢোক পানি খেতে পারেন।

সবজি আর ফল

সকালের কিংবা বিকেলের নাশতায় দই, চিঁড়া, দুধ-মুড়ি, স্যুপ, সেমাই, ফালুদা খেতে পারেন। রাতেও দুপুরের মতো মেন্যু থাকবে, তবে পরিমাণে কিছু কম খান। বাঁধাকপি, ঢেঁড়শ, কুমড়া, লাউয়ের মতো সবজিতে পানির পরিমাণ বেশি। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় তাই এসব সবজি রাখুন।

তিন বেলার খাবারেই সবজি রাখুন। কয়েকটি মৌসুমি সবজি দিয়ে মিক্সড সবজি রান্না করুন। মুরগির মাংসের ঝোল সহজপাচ্য। গরমের দিনে ছোট মাছের একটি পদ প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। সব ধরনের রান্নায় তেল ও মসলা খুব কম ব্যবহার করুন।

বাচ্চাকে বাইরের কেনা খাবার, চকোলেট, চিপস বা কোল্ড ড্রিংকস থেকে বিরত রাখুন। চকোলেট আর্টিফিশিয়াল সুগার ও চিপসে টেস্টিং সল্ট থাকায় ক্ষুধামন্দা ভাব তৈরি হয়। আবার ফাস্ট ফুড, বিশেষ করে ফ্রাইড চিকেনে অতি মাত্রায় টেস্টিং সল্ট ও আটা ব্যবহার করা হয়। আর এই আটাতে আছে গ্লুটিন নামক পদার্থ, যা বাচ্চাদের স্নায়ু চঞ্চল করে ও ক্ষুধামন্দা ভাব তৈরি করে।

বিদেশি ফলের চেয়ে দেশি ফল, বিশেষ করে টকজাতীয় ফল খেতে দিন। ফলের জুস না ছেঁকে খেতে দিন। পারলে আস্ত ফল খেতে দিন।

বাচ্চাদের খাদ্যতালিকায় প্রোটিনের জোগান হিসেবে যে শুধু মাছ-মাংস খাওয়াতে হবে, এটা ঠিক নয়। মাছ-মাংসের বিকল্প হিসেবে আমন্ড বাদাম ও কাজু বাদাম দিতে পারেন। তবে চিনা বাদাম না দেওয়াই ভালো। এটা গরমের সময় আরো ক্ষুধামন্দা ভাব তৈরি করে।

এই গরমে খাদ্যতালিকা

সকালবেলা

সকালের নাশতায় তেলে ভাজা পরোটার বদলে আটার রুটি খান। ডিম অমলেট না খেয়ে সিদ্ধ করে খান। যেকোনো ফলের জুস দিয়ে শুরু করুন নাশতা। হতে পারে পাকা পেঁপে, কাঁচা কিংবা পাকা আম, গাজর, শসা কিংবা টমেটোর জুস। নানা পদের দেশি টক ফল মিলিয়ে ককটেল জুস করেও খেতে পারেন। এ ছাড়া চিঁড়া-দইও হতে পারে সকালের নাশতার উত্তম সূচনা।

দুপুরের খাবার

দুপুরের খাবারে সবজিকে প্রাধান্য দিন। সবজি তেলে না ভেজে গ্রিল বা ভাপ দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। রান্নার আঁচ অল্প হলে সবজির পুষ্টিগুণ অটুট থাকে। সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ ও সালাদ থাকা প্রয়োজন। দুপুরে খাওয়ার পর ভিটামিন ‘সি’যুক্ত বা যেকোনো ফল খাওয়ার অভ্যাস করা ভালো।

বিকেল ও সন্ধ্যার স্ন্যাকস

এ সময় ফল অথবা সবজির সালাদজাতীয় খাবার বেছে নিন। দেশীয় মৌসুমি ফলগুলো যথেষ্ট উপকারী। বিকেলের নাশতায় সবজি দিয়ে তৈরি ঠাণ্ডা স্যুপ খুবই উপকারী।

রাতের খাবার

রাতের খাবার হালকা হলে ভালো। ডাল, মাছের ঝোল, সবজি দিয়ে রান্না করা পাতলা ঝোল হতে পারে উত্তম খাবার। ঘুমাতে যাওয়ার দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করুন। ঘুমানোর আগে এক গ্লাস লেবুর পানি কিংবা এক কাপ টক দই খেয়ে ঘুমাতে যান। শিশু-কিশোরদের এক গ্লাস দুধ দিন। উচ্চ ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার এবং রিচ ফুড রাতে না খাওয়াই ভালো।

খেয়াল রাখুন

গরমে রান্না করা তরকারি দ্রুত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বাসি হওয়ার আগেই খেয়ে নিন। আর রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করার সময় ভালো করে ঠাণ্ডা করে বক্সে ভরে রাখুন।

যেসব খাবার দ্রুত ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয় সেসব খাবার রান্না করে বা বানিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেতে হবে। যেমন ডাল, দুধ, সালাদ ইত্যাদি।

রাস্তার পাশের রঙিন শরবত, আখের রস, কেটে রাখা তরমুজ কিংবা আনারস খাবেন না। এসব খোলা খাবার ডায়রিয়া, টাইফয়েড ও জন্ডিসের আশঙ্কা বাড়ায়। বাজারের প্যাকেটজাত রেডিমিক্স শবরতও খাবেন না। এগুলোতে প্রিজারবেটিভ থাকে। এ ছাড়া চিনির মাত্রা অনেক বেশি থাকে। তাই পানির ঘাটতি মিটলেও মিনারেলের অভাব পূরণ হয় না।

যাদের সুগারের সমস্যা আছে তারা মিষ্টিজাতীয় খাবার দিনে একবার পরিমিত পরিমাণে খাবে। এর বিকল্প হিসেবে টকজাতীয় ফল খাবেন। গরমে মাসল পেইন হলে অবশ্যই খাবার স্যালাইন খাবেন।