অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ফটিকছড়ি জুড়ে ভয়াবহ বন্যা

0
.

ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
জেলার ফটিকছড়ি জুড়ে ভয়াভহ বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। তিন দিনের অভিরাম বৃষ্টি ও হালদা-সর্তা-ধুরুং খালের বাঁধ ভেঙ্গে পরিস্থিতি ক্রমে অবনতির দিকে এগুচ্ছে। উপজেলার প্রায় ১২টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভার প্রায় অর্ধশত গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।  ভেসে গেছে অর্ধশত গরু ও ছাগল। নষ্ট হয়েছে আমন ধানের বীজতলা ও পুকুরের মাছ।

বন্যার পানিতে স্রোতে  ভেসে নিখোঁজ এক যুবক।  নাজিরহাট -মাইজভান্ডার সড়কের সমশুর দোকান সংলগ্ন এলাকায় তৈয়ব নামক (২৮) এক যুবক পানির প্রবল স্রোতে ভেসে যায় বলে জানান এলাকাবাসী।  তিনি পূর্ব ফরহাদাবাদ কদল তালুকদার বাড়ির বাসিন্দা।

প্রত্যক্ষদর্শী তার বন্ধু নাজিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী মোতালেব বলেন, বিকাল সাড়ে চারটার দিকে ঝংকার হয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে অামার সামনে থেকে সে শ্রুতে ভেসে গেছে। এখনো তার খোঁজ মেলেনি। সে পেশায় রাজমিস্ত্রি।  তার নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর ও নাজিরহাট পৌর প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ অালীও।

এদিকে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন স্কুল-কলেজে বন্যা দূর্ঘত মানুষের জন্য আশ্রয়ন কেন্দ্র খুলেছে এবং সার্বক্ষনিক একটি নিয়ন্ত্রন কক্ষ খুলেছে বলে জানিয়েছে।

.

পানি উন্নয়ন বোর্ড নারায়ণহাট গেজ ষ্টেশন কর্মকর্তা খুরশিদ আলম জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ওয়াটার লেভেল ১৬.৮৬। হালদা নদীর ৫.৯০ সে.মি. পানি বিপদসীমার উপর দিয়া প্রবাহিত হচ্ছে। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ২৬৫.০ মিলি মিটার রেকর্ড হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, উপজেলার ধর্মপুর, কমিটি বাজার, বখতপুর, সমিতিরহাট, নিচিন্তাপুর, আজাদী বাজার, পশ্চিম ধর্মপুর, লেলাং, গোপাল ঘাটা, কাঞ্চন নগর, মানিকপুর, তেলপারই, মানিক গোলা, পশ্চিম বখতপুর, ওখাড়া, রোসাংগীরি, পশ্চিম নানুপুর, মাইজভান্ডার, আজিমনগর, সুয়াবিল, সুন্দরপুর, পূর্ব হারুয়ালছড়ি, পাইন্দং, ভেড়াজালী, শেতকুয়া, দৌলতপুর, কুম্বার পাড়, ধুরুং, রাঙ্গামাটিয়া এলাকা সহ প্রায় ৫০টি গ্রাম বন্যার পানিতে ডুবে আছে। এখানকার প্রায় ৩ লাখ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে নৌকা যোগে যোগাযোগ করতে হচ্ছে এবং বিশুদ্ধ পানি ও খাবার অভাব দেখা দিয়েছে। ধানের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। হাস মুরগী ও গবাধি পশু নিয়ে বন্যাদূর্ঘত এলাকার মানুষের দূর্ভোগের সীমানেই।

.

সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহা সড়ক, গহিরা-ফটিকছড়ি সড়ক, নাজিরহাট মাইজভান্ডার সড়ক, ফটিকছড়ি-হেয়াকো সড়ক, নাজিরহাট-কাজীরহাট সড়ক সহ বিভিন্ন গুরুত্ব পূর্ণ হাট-বাজার পানির নীচে তলিয়ে গেছে। দৌলতপুরের সমাজকর্মী মাহফুজ আনাম জানান, তার এলাকার বাড়ি-ঘর ও মসজিদে পানি ডুকেছে। এতেখাপনেওয়া ব্যক্তিবর্গদের মসজিদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

নানুপুর লায়লা কবির ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আনম সরোয়ার আলম জানান, উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে তার কলেজের বানিজ্য ভবনে প্রায় ৫শতাদিক বন্যা দূর্ঘত মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। দূর্ঘত মানুষ গুলোর জন্য কলেজ প্রতিষ্টাতা পরিবার খাবারের ব্যবস্থা করেছে।

কাঞ্চন নগর ইউপি চেয়ারম্যান রশিদ উদ্দিন চৌধুরী কাতেব বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় ধুরুং খালের পানি অস্বাভাকি ভাবে ভেড়ে যাওয়ায় আমার নির্বাচনী এলাকার পুরোটাই বন্যা কবলিত হয়েছে। ধুরুং খালের সিংহ চরে আটকা পড়েছিল এক কৃষক পরিবারের নারী-শিশু সহ ৮ সদস্য। তারা ঘরের চালে উঠে বসেছিল। মুঠোফোনে খবর পেয়ে তাদের উদ্বারে ফায়ার সার্ভিস এসেও ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত্র এলাকার কজন যুবক বাঁশের ভেলায় ছড়ে তাদের উদ্ধার করে রাত ১২টায়। ফটিকছড়ির ইউএনও সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন।

.

পাইন্দং ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন স্বপন বলেন, ভারী বর্ষণ, পাহাড়ী পানির ঢলে ধুরুং খালের পাড় ভেঙ্গে ব্যাপক বন্যা সৃষ্টি হয়েছে আমার ইউনিয়নের ভেড়াজারী ও শ্বেতকুয়া এলাকায়। এতে ব্যাপক রাস্তা ঘাট ও মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

সমিতিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান হারুন রশিদ ইমন বলেন, আমার ইউনিয়নের বিশাল এলাকা এখন পানির নিচে ডুবে আছে। এলাকার যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিশ্চিন্ন। নৌকা, কলা গাছ ও বাঁশের ভেলা ছাড়া যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছেনা।  হাঁস মুরগী ছাগল গবাদি পশু নিয়ে মানুষ বেশ দূর্ভোগ পোহাচ্ছে।

ধর্মপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদুল কাইয়ুম বলেন, সর্তা খালের ভেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে ধর্মপুর কমিটি বাজার, পর্ব ধর্মপুর, আজাদী বাজার এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকার হাজার হাজা পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। সোমবার রোজা রাখতে সেহেরী খেতে পারেনি অনেক পরিবার। সর্তা খালের পানি ডুকে পড়ায় শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশু নিয়ে নিরাপদ জায়গা খুজতে খুজতে ঘরের মৌলিক জিনিষ পত্র নষ্ট হয়েছে অনেক পরিবারের। বন্যার পানিতে মাটির ঘর ও বেড়ার ঘর নষ্ঠ হয়েছে শত শত।

.

সুন্দরপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ চৌধুরী বলেন, বন্যা ফটিকছড়ির অপুরনীয় ক্ষতি কয়েছে। প্রধান প্রধান সড়ক নষ্ট হয়েছে। ফটিকছড়িতে এখনো পর্যাপ্ত ত্রান সামগ্রী বিতরণ হয়নি। বৃত্তবানদের উচিত বর্ন্যা দূর্ঘতদের পাশে এগিয়ে আসা।

এ ব্যাপারে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার রায় বলেন, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন স্কুল-কলেজে বন্যা দূর্ঘত মানুষের জন্য আশ্রয়ন কেন্দ্র খুলেছে এবং সার্বক্ষনিক একটি নিয়ন্ত্রন কক্ষ খুলেছে। বন্যা দুর্গত এলাকার জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ১০ টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।যোগাযোগ দুলাবস্থার কারণে এগুলো পৌছাতে কষ্ট হচ্ছে।