অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ভুল চিকিৎসায় রাইফা’র মৃত্যু, সোস্যাল মিডিয়া জুড়ে নিন্দার ঝড়

0
.

চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় আড়াই বছরের শিশু কণ্যা রাইফা খানের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ডাক্তার-নার্সের ভুল চিকিৎসায় শুক্রবার রাত ১১ টায় নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে রাইফা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। রাইফা’ দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুবেল খানের মেয়ে। রুবেল খান চট্টগ্রাম স্পোর্টস জার্নালিস্টস এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এবং চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য।

অভিযোগ উঠেছে,দায়িত্বরত ডাক্তারের পরামর্শে ডিউটি নার্স রাইফাকে ভুল ইঞ্জেকশান প্রয়োগ করেন। রাত ৯-১০ টার সময় হাসিখুশি থাকা রাইফাকে রাত ১১ টায় ইঞ্জেকশান দেয়ার পরেই একটি খিঁচুনি দিয়ে সে মৃত্যুবরণ করে।

সাংবাদিক রুবেল খানের পরিবারের অভিযোগ, শিশু রাইফার ঠাণ্ডা লেগে গলা ব্যথা করায় বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসকের পরামর্শে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাতে রাইফাকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হলে সে অস্বস্তি বোধ করে। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা শিশু বিশেষজ্ঞকে কল দেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর শিশু বিশেষজ্ঞ বিধান বড়ুয়ার দেওয়া ওষুধে রাইফার খিঁচুনি শুরু হয়। পরে বিষয়টি দায়িত্বরত চিকিৎসককে জানালে তিনি ডা. বিধান বড়ুয়ার সাথে কথা বলে ‘সেডিল’ ইনজেকশন পুশ করেন। এরপর রাইফা নিস্তেজ হয়ে যায়।

.

এই ঘটনার পরপর সর্বস্তরের সাংবাদিক এবং সাংবাদিক সংগঠন নেতাবৃন্দরা রাতেই ম্যক্স হাসপাতালে ছুটে যান। তাদের প্রতিবাদের মুখে অভিযোগের প্রেক্ষিতে চকবাজার থানা পুলিশ অভিযুক্ত ডাক্তার, নার্স ও হাসপাতাল সুপারভাইজারকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে ডাক্তারদের সংগঠন বিএমএ’র কতিপয় নেতা থানায় এসে আটককৃতদের ছেড়ে দিতে জোর লবিং শুরু করে। এসময় চিকিৎসক নেতারা চট্টগ্রামের চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়। এতে সাংবাদিক ও সচেতন মহল তাদের আচরণে ক্ষুদ্ধ হলে শনিবার ভোরে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পর আটক চিকিৎসক ও নার্সকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান চকবাজার থানার ওসি আবুল কালাম।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, সাংবাদিক ও চিকিৎসক নেতাদের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিটিতে জেলা সিভিল সার্জন, বিএমএ প্রতিনিধি, সিউজে প্রতিনিধি ও পুলিশের প্রতিনিধি থাকবেন। তদন্তে কমিটির প্রতিবেদনে চিকিৎসায় কোন অবহেলা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

.

সংবাদকর্মীদের ফেসবুক ওয়ালে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড়:
আড়াই বছরের শিশু রাইফার মৃত্যুতে সোস্যাল মিডিয়ায় সাংবাদিকদের তিব্র নিন্দা ও করুণ শোক বার্তার ঝড় উঠে। ফেসবুক পাতা যেন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। সমকাল পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সারোয়ার সুমন তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন রাইফা মোদের ক্ষমা করো… ডাক্তারের বিরুদ্ধে সিভিল সার্জনের রিপোর্ট কেমন হবে -তা আমরা বলতে পারি আগাম। কিন্তু সামান্য গলা ব্যাথার চিকিৎসা করতে গিয়ে লাশ হওয়া রাইফার জন্য কী আছে কোন উত্তর? একমাত্র সন্তান হারানো বাবা -মার জন্য কী আছে কোন সান্ত্বনা? আমরা বাঁচতে চাই। আমরা সুস্থ থাকতে চাই। কিন্তু আস্থা রাখবো কোথায়…?

কালের কন্ঠ পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান মোস্তাফা নঈম তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন ক্লিনিক গুলোর রাস টেনে ধরতে একজন মমতা কি নেই দেশে?

সাংবাদিক হাসান নাছির লিখেছেন সহকর্মী সাংবাদিক রুবেল খানের কোলে তার আড়াই বছর বয়সী অতি আদরের কন্যার লাশ। ভাবা যায় না। কিন্তু দেখতে হলো। মামুলি গলা ব্যাথার চিকিৎসার এই অবস্থা। অথচ কেমন বাহাদুরি! শোক ও সমবেদনা জানাবার ভাষা নেই। ক্ষোভ প্রকাশ করছি। ক্ষমা করো রুবেল। পাঠ্যবইতে পড়েছি এবং পড়ানো হয়, এই দেশে জন্মগ্রহণ করে আমরা গর্বিত। আজ প্রশ্ন জাগে, সত্যিই কি তাই?

চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিক পাঠক ডট নিউজের সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শিল্পী লিখেছেন আবারও ভুল চিকিৎসার শিকার ..এবার সাংবাদিক রুবেল খানের ফুটফুটে শিশুকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে হত্যা করে ডা. পরিচয়ধারীরা…হুমকি ধমকি, ধর্মঘট, সেবা বন্ধ করে দিয়ে তারা বার বার খুন করেই পার পেয়ে যায়।

সাংবাদিক শামসুল হুদা মিন্টু, রাইফা হত্যার বিচার চেয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার ওয়ালে।

.

সাংবাদিক আজাদ মঈনুদ্দিন ক্ষোভের সাথে তার ওয়ালে লিখেছেন সাংবাদিকরা যতদিন দালালিতে থাকবে, দালালরা যতদিন সাংবাদিকতায় থাকবে ততদিন সাংবাদিক জঁনবষ কযধহ রা সন্তানহারা হবে, কোন বিচার পাবে না। বিচার পাই না, তাই চাইতেও ইচ্ছা হচ্ছে না এখন।

সাংবাদিক আল রহমানও বলেছেন রাইফা আমাদের ক্ষমা কোরো! তুমি ব্রাজিলের হলুদ জার্সি না আর্জেন্টিনার নীল জার্সি পছন্দ করতে আমি জানি না। জানি না তুমি দুরন্ত টিভির কার্টুন পছন্দ করতে নাকি কার্টুন নেটওয়ার্কে টম অ্যান্ড জেরির খেলা পছন্দ করতে। আমি এটাও জানি না, তোমার বাবা-মা তোমাকে নিয়ে কী স্বপ্ন দেখতো! শুধু জানি তুমি নেই। দূর আকাশের তারা হয়ে গেছো। তোমার মৃত্যুর জন্য দায়ী আমি, আমরা। কারণ তোমার মতো আর কোনো দেবদূতকে অকালে যাতে যমের বাড়ি পাঠানো না যায় তার জন্য আমরা ম্যাক্স হাসপাতাল সিলগালা করে দিতে পারছি না। এ বড় লজ্জার। তুমি আমাদের ক্ষমা কোরো। তুমি চট্টগ্রামবাসীকে ক্ষমা কোরো। তুমি দেশবাসীকে ক্ষমা কোরো।

সাংবাদিক সাঈদুল ইসলামসহ অসংখ্য গণমাধ্যম কর্মী তাদের ওয়ালে চট্টগ্রামের সাংবাদিক নেতাদের উদ্দ্যেশ্যে লিকেছেন প্লিজ কর্মসূচী দিন…

গাজী টিভির চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান আনিন্দ্য টিটু লিখেছেন ক্ষমা করো রাইফা! আমরা এখনো তোমাদের জন্য নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে পারিনি। রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারেনি তোমাদের মৌলিক অধিকারটুকু। এই দীনতা ক্ষমা করো। ডাক্তার নামক কতিপয় কসাইদের অবহেলা আর ভুল চিকিৎসায় তোমাকে চলে যেতে হল এই পৃথিবী থেকে। প্রাণ দিয়ে তুমি দেখিয়ে দিলে আমাদের ব্যর্থতা। আরও লজ্জিত হয়েছি যখন জানলাম- তোমাকে হত্যার অভিযোগে চকবাজার থানা পুলিশ অভিযুক্ত ডিউটি ডাক্তার, নার্স ও সুপারভাইজারকে আটক করার পর বিএমএ’ র স্থানীয় সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রামের বিতর্কিত চিকিৎসক ফয়সাল ইকবালের সন্ত্রাসী ভূমিকার কথা জেনে।

রাতে তার নেতৃত্বে একদল লোক থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালামের সঙ্গে ঔদ্বত্যপূর্ণ আচরণ করে এবং একঘণ্টার মধ্যে সারা চট্টগ্রামে চিকিৎসা ব্যবস্থা অচল করে দেয়ার হুমকি দেয়। ঘোষণা দেয় কোনো সাংবাদিকের চিকিৎসা না করার। কোথায় তার খুঁটির জোর! এভাবে চিকিৎক নামধারী কসাইদের স্বেচ্চাচারিতায় আর কত প্রাণ গেেেল রাষ্ট্রযন্ত্র সম্বিত ফিরে পাবে এটাই এখন দেখতে চাই!

সাংবাদিক নাছির উদ্দিন হায়দার লিখেছেন ডাক্তার মানুষের জীবন বাঁচায়। ডাক্তার এই পৃথিবীতে আল্লাহর রহমতস্বরূপ। সেই ডাক্তারদের সামান্য ক’জন আজ দুনিয়ার জন্য গজব’ হয়ে উঠেছে। কিছু ডাক্তারের অবহেলা, অসৌজন্য, অসাদাচারণ মানুষকে বিষিয়ে তুলেছে। প্লিজ, অন্য ডাক্তাররা সোচ্চার হোন, চিকিৎসার নামে এই হত্যা বন্ধ করুন। এভাবে আর কোন মা-বাবার বুক খালি করবেন না। প্লিজ!

সহকর্মী সাংবাদিক ফয়সাল করিম তার ওয়ালে লিখেছেন, কি করে প্রতিদিন এসব মেনে নেন শত শত রাইফার বাবারা? মৃত্যুর দুঘন্টা আগেও প্রিয় বাবার কোলে সব আশ্রয় খুঁজে নিয়ে মুখ গুঁজেছিল ফুটফুটে ফুলটি। হাল্কা গলাব্যথা, তাতেই বাবার মন প্রচণ্ড খারাপ।

সন্তানকে নিয়ে তাই তিনি ছুটে গিয়েছিলেন নগরীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল হাসপাতাল, ম্যাক্সে। যার কারণে বাঁচার সব প্রেরণা খুঁজে পান তার অসুস্থতায় মুষড়ে পড়া বাবা ঘন্টাখানেক পর জানলেন, হৃদয়ের ধনটি আর নেই হাসপাতালে নার্সের ভুল ইঞ্জেকশনের ছোবল মুহুর্তেই কেড়ে নিয়েছে কোমলমতি শিশুটির প্রাণ। কন্যার অল্প গলা ব্যাথায় যেই বাবার ঘুম হারাম হয়েছিল সেই বাবা এই শোক বইবেন কি করে! কি করে বইবেন তিনি খুনিদের বিচার নামের প্রহসন, আর তদন্ত কমিটি-কমিটি সান্তনা পুরস্কারের মিথ্যে আশ্বাস ! কি কি করে মেনে নিবেন তিনি দাপুটে চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উলটো চোখ রাঙানি?