অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

সন্দ্বীপের উড়িরচরের স্বাস্থ্যসেবা, ৩৫ হাজার মানুষের জন্য একজন চিকিৎসক

0

কেফায়েতুল্লাহ কায়সার, অতিথি লেখকঃ

.

ভোটার সাত হাজার। বর্তমানে জনবসতি প্রায় ৩৫ হাজার। সন্দ্বীপের উত্তর পশ্চিম দিকে জেগে ওঠা একটি বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন উড়িরচর। স্বাধীনতার পর থেকে এখানে জনবসতি গড়ে ওঠে। সন্দ্বীপের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলের মানুষগুলো ধীরে ধীরে এখানে জনবসতি গড়ে তুলেন। প্রথমে পশুপালনের জন্য উড়িরচর ব্যবহৃত হলেও স্বাধীনতার পর পর্যায়ক্রমে মানুষও এখানে বসবাস করতে শুরু করেন। ১৯৮৪ সালের বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয় এই উড়িরচরে। তখন তৎকালীন এরশাদ সরকার উড়িরচরের মানুষগুলোকে দেখতে গেলে সন্দ্বীপ কালাপানিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বায়রনের মাতা তাহমিনা হক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নিকট আবেদন করেন যাতে তিনি উড়িরচরকে একটি আলাদা ইউনিয়ন হিসেবে ঘোষণা করেন।

রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ একই বছর উড়িরচরকে সন্দ্বীপের একটি ইউনিয়ন হিসেবে ঘোষণা দেন। এর পর তাহমিনা হক উড়িরচরের প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ইউনিয়ন পরিষদ ঘোষণার পর থেকে শুরু হয় সরকারি কিছু কিছু সুযোগ সুবিধা। তবে ইউনিয়ন পরিষদ ঘোষণার প্রায় ৩৪ বছর পার হলেও তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি এই এলাকায়। প্রায় ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য প্রস্থের উড়িরচরের চারদিকে এখন পর্যন্ত বেড়িবাঁধ হয়নি। ৩৫ হাজার মানুষের জন্য ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র আছে মাত্র ৩টি।

অধিকাংশ এলাকা এখনো জোয়ারে ডুবে ভাটায় নামে অবস্থা। বর্ষাকালে ও ঘুর্ণিঝড় হলে জোয়ারের কারণে নদীর পাশের মানুষগুলোর দুর্ভোগের শেষ থাকেনা।

এদিকে ৩৫ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে একজন এমবিবিএস ডাক্তার। ৩৫তম বিসিএসে উন্নীত ডা. শিহাব আফতার খান বর্তমানে উড়িরচরে কর্মরত। তিনি এবং তার কয়েকজন সহকারী ৩৫ হাজার উড়িরচরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। বেসরকারীও কোন হাসপাতাল নেই এখানে। মুমুর্ষ রোগী সহ গর্ভবতী মহিলাদেরকে দীর্ঘ নদী পথ পার হয়ে সন্দ্বীপ অথবা নোয়াখালী গিয়ে স্বাস্থসেবা নিতে হয়। ইতিপূর্বে নৌকায়ও গর্ভবতী নারীরা সন্তান জন্মদিয়েছেন বলে এলাকাবাসী জানান। উড়িরচরের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে জানতে সন্দ্বীপের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলুল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উড়িরচরে বর্তমানে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও আর একটি ‘ফ্যামেলি ওয়েলফেয়ার সেন্টার’ রয়েছে। একজন ডাক্তার ও কয়েকজন স্বাস্থ্য সহকারী রয়েছেন। তারা বেশ আন্তরিকতার সাথে তাদের সাধ্যমত স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন।

এদিকে উড়িরচরের সার্বিক অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে জানতে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যাম মোঃ আব্দুর রহিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ২টি ক্লিনিক আছে আরও ২টি কমিউনিটি ক্লিনিক শীঘ্রই হবে। বেড়িবাঁধ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি অনেক চেষ্টা করছেন বেড়িবাঁধ করার জন্য কিন্তু সরকার থেকে কোন বরাদ্দ পাচ্ছেন না। চেয়ারম্যাম মোঃ আব্দুর রহিম আরও বলেন, তিনি সন্দ্বীপের সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতার সাথেও বেড়িবাঁধ সম্পর্কে কথা বলেছেন। সাংসদ বিষয়টি চেষ্টা করছেন বলে জানান।

এদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ী মোঃ নুরুদ্দিন ও স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ শাফায়েতুল্লাহ সহ এলাকাবাসী বলেন, নোয়াখালীর সাথে সীমানা জটিলতার কারণে দীর্ঘ ১৩ বছর এখানে কোন নির্বাচন হচ্ছে না। আর দক্ষ জনপ্রতিনিধি, সচেতন ও শিক্ষিত মানুষ অত্র এলাকায় না থাকায় দীর্ঘ ৩৪ বছরের উড়িরচরে কোন উন্নয়ন হচ্ছেনা। এখানে সব মানুষ কৃষিনির্ভরশীল, শাক সবজি, ধান, গবাধি পশু পালন করেই এখানকার মানুষের জীবিকা চলে। তবে এখন ৪টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি হাইস্কুল ও কয়েকটি মাদ্রাসা ও ২টি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। এলাকাবাসী জানান মানুষের জীবন রক্ষায় উড়িরচরের চারদিকে বেড়িবাঁধ ও একটি সরকারী পূর্ণাঙ্গ মা ও শিশু এবং জেনারেল হাসপাতাল খুবই প্রয়োজন।

লেখকঃ কেফায়েতুল্লাহ কায়সার
নির্বাহী সম্পাদক,
সাপ্তাহিক উপনগর।

“পাঠকের কলাম” বিভাগের সকল সংবাদ, চিত্র পাঠকের একান্ত নিজস্ব মতামত, এই বিভাগে প্রকাশিত সকল সংবাদ পাঠক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। তা্ই এ বিভাগে প্রকাশিত কোন সংবাদের জন্য পাঠক.নিউজ কর্তৃপক্ষ কোনো ভাবেই দায়ী নয়।