অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

১৬ বছর পর আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে শিল্পকলা একাডেমির নির্বাচন

1
.

আজ ২১ জুলাই শনিবার দীর্ঘ প্রায় দেড়যুগ পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে গত একমাস ব্যাপী চলেছে জমজমাট প্রচারণা।

নগরীর এম এম আলী সড়কস্থ শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণ প্রতিদিন সাংস্কৃতিক কর্মী, শিল্পী, কলাকৌশলীসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষের পদচারনায় মূখর হয়ে উঠছে। সাজ সাজ রব উঠেছে শিল্পকলা একাডেমী চত্তরে।

নির্বাচন দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একাডেমি প্রাঙ্গণে ভোট গ্রহণ চলবে।  এ নির্বাচনে গত ১ থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত সহ-সভাপতি পদে ৮ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ৩ জন, যুগ্ম–সম্পাদক পদে ৯ জন এবং কার্যকরী সদস্য পদে ৩২ জনসহ মোট ৫২ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিল করেন।

মোট ৪টি পদের প্রার্থীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হাবিবুর রহমান এবং সদস্য সচিব ও জেলা নির্বাচন অফিসার মো. মুনীর হোসাইন খানের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন।

.

গত ৯ জুলাই সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রিটার্নিং অফিসার ও জেলার নির্বাচন অফিসার সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম–সম্পাদক ও সদস্য পদের মোট ৫২ জন প্রার্থীর দাখিল করা মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে সবগুলো মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেন।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যকরী কমিটির নির্বাচনে সভাপতি পদে ২ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ১ জন, যুগ্ম–সম্পাদক পদে ২ জন ও কার্যকরী সদস্য পদে ৫ জন নির্বাচিত হবেন।

সভাপতি পদে পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক ও কোষাধ্যক্ষ পদে জেলা কালচারাল অফিসার দায়িত্বে থাকবেন। এ দু’টো পদে নির্বাচন হবে না।

এদিকে এ নির্বাচনকে ঘিরে যেমনি ভোটারদের মাঝে প্রার্থীদের আনাগোনা বাড়ছে, তেমনি জাতীয় নির্বাচনের মতো ভোটারদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহের আমেজও দেখা দিয়েছে। এ নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিদিনই প্রার্থী-ভোটাররা শিল্পকলায় আড্ডায় মেতে উঠেছেন।  নানাভাবে চলছে বিভিন্ন পদে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের আলাপ-আলোচনাও।

চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি চট্টগ্রামের কার্যকরী কমিটির নির্বাচন-২০১৮ আজ ২১ জুলাই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে।  অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৬৭১ জন।ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

নির্বাচন হতে যাওয়া পদের মধ্যে সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন রিজোয়ান রাজন, মউদুদুল আলম, জাহাঙ্গীর কবির, এস কে এস মাহমুদ (আলোক মাহমুদ), রনজিৎ রক্ষিত, তাপস শেখর, সাহাবউদ্দিন আহমদ ও স্বপন কুমার দাশ, সাধারণ সম্পাদক পদে এ বি এম রাশেদুল হাসান (রাশেদ হাসান), সাইফুল আলম বাবু ও সাংবাদিক মো. সরোয়ার আমিন, যুগ্ম-সম্পাদক পদে মো. জামশেদ উদ্দিন, এসএম সাঈদ সুমন, মুহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, মো. মঈন উদ্দিন কোহেল, কমল দাশ, প্রণব কুমার চৌধুরী, আলাউদ্দিন তাহের ও মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং কার্যকরী সদস্য পদে সাংবাদিক রনজিত কুমার শীল, দেবাশিষ রুদ্র, সাংবাদিক সাইদুল ইসলাম, বাপ্পা চৌধুরী, ইনতেখার আলম মান্না, মো. ইকবাল হোসেন, এ কে এম জয়নাল আবেদীন, মোহাম্মদ আলী, মোস্তফা কামাল যাত্রা, মো. আবদুল মতিন (শাহীন মাহমুদ), উত্তম কুমার বিশ্বাস, মুহাম্মদ সাহিদ এমরান, এমএ আজাদ ফিরোজী (শাওন পান্থ), জসিম উদ্দিন মিঠুন, নুবুয়াত আরা সিদ্দিকা রকি, হিল্লোল রায়, সামশুল হায়দার তুষার, আ ফ ম মোদাচ্ছের আলী, মো. শহিদুল করিম চৌধুরী নিন্টু, মোহাম্মদ লিপটন, দীপেন কান্তি চৌধুরী, শাখাওয়াত উল্লাহ চৌধুরী সৌরভ, রুবেল দাশ প্রিন্স, প্রবীর পাল, কামরুল আযম চৌধুরী টিপু, জালাল উদ্দিন সাগর, জাহেদ হোসেন, নিশাত হাসিনা শিরীন, অঞ্চল কুমার চৌধুরী, কঙ্কন দাশ, সাজ্জাদ বিন খালেদ সুমন ও দিদারুল ইসলাম।

.

সহসভাপতি প্রাথী রিজোয়ন রাজন বলেন, দীর্ঘ দিন নির্বাচন হচ্ছে। এ নির্বাচন চট্টগ্রামের সাংস্কৃতি অঙ্গনে ইতিবাচক মাইলফলক হবে। তিনি জয়ের প্রতি শতভাগ আশবাদী।

নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বনিতা করা নাট্য নির্দেশক সাইফুল আলম বাবু বলেন, তিনি ভোটারদের প্রতি যথেষ্ট আস্থাশীল। জয়ের ব্যাপারেও তাই শতভাগ আশাবাদী।

প্রসঙ্গত: এডহক কমিটি দিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলছে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম। তিন বছর পরপর নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পরিচালনা কমিটি করার নিয়ম থাকলেও গত ১৬ বছর ধরে কোনো নির্বাচনই হয়নি চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে।  গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে এডহক কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে শিল্পকলা একাডেমির পরিচালনার ভার ১৫ সদস্য কার্যনির্বাহী কমিটির ওপর ন্যস্ত করার কথা থাকলেও এখানে তা করা হয়নি। চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের প্রায় সব জেলাতেই ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হলেও চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে কোনো নির্বাচন হয়নি। ফলে চট্টগ্রামের শিল্প–সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে এ নিয়ে নানা অসস্তোষ ও ক্ষোভ ছিল। অবশেষে কার্য নির্বাহী কমিটির আওতায় আসতে চলেছে জেলা শিল্পকলা একাডেমি চট্টগ্রাম। এর ফলে ১৬ বছর ধরে চলে আসা অ্যাডহক কমিটি বিলীন হতে যাচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৫ সালের শেষ দিকে শিল্পকলা একাডেমির অ্যাডহক কমিটির অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে প্রতিবাদ করে একজন নাট্যকর্মী ১৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কার্যকর কমিটি গঠনের দাবি তোলেন। এর পর থেকেই কার্যকরী কমিটি গঠনের চিন্ত ভাবনা শুরু করে জেলা প্রশাসন। ২০১৬ সালের ৩০ মে দুটি পত্রিকায় জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সদস্যভুক্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এসময় ১২৫ জনকে সদস্য ভুক্ত করা হয়। তবে সদস্য ভুক্তি নিয়ে অ্যাডহক কমিটির উপর ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠে। প্রকৃত সংস্কৃতি কর্মীদের বাদ দিয়ে সদস্যভুক্ত করার অভিযোগে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে তৎকালনী জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফীন সদস্য ভুক্তির জন্য দ্বিতীয়বার বিজ্ঞপ্তি দেন। সেইবার ৫৬৪ জনকে সদস্য করা হয়।