প্রার্থী নিজেই করছেন মাইকিং, ভ্যান চালাচ্ছে ছেলে!
তার চিন্তা-চেতনা আর মনের বাসনা জনগণকে ঘিরেই। আর ১০ জন জনপ্রতিনিধির মতো নয়; যেন মানবসেবাই তার ধর্ম। কিন্তু কী দিয়ে করবেন এই মানবসেবা? স্বামীহারা হতদরিদ্র নাদিরা বেগম। একমাত্র ছেলে শাহারিয়ার আহমেদ স্বপ্নীলকে নিয়ে নিজের স্বপ্নপূরণের চেষ্টায় তাই নেমেছেন মাঠে।
জনপ্রতিনিধি হয়ে সেই স্বপ্নের মানবসেবার প্রত্যাশা পূরণ করতে চান নাদিরা বেগম। তাই আসন্ন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহানগরীর সংরক্ষিত ৮ নম্বর (২২, ২৩ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ড) ওয়ার্ড থেকে দাঁড়িয়েছেন ভোটে, তার প্রতীক গাড়ি।
উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা নাদিরা পেশায় গৃহিণী। স্বামীকে হারিয়েছেন অনেক আগেই। জনপ্রতিনিধি হয়ে তিনি জনগণের পাশে আজীবন থাকতে চান। নিজের জীবনের শেষটুকু দিয়ে পাশে থাকতে চান এলাকাবাসীর। তাই ৬০ হাজার টাকা নিয়ে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে এবার সিটি নির্বাচনের ভোটে দাঁড়িয়েছেন।
এত অল্প টাকা দিয়ে ভোটের মাঠে নেমে যেন নির্বাচনের ধাক্কাই সামলাতে পারছেন না। তাই নিজের পক্ষে নিজেই নেমেছেন মাইকিংয়ের কাজে। নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া একমাত্র ছেলে শাহারিয়ার আহমেদ স্বপ্নীল তার মায়ের মাইকিংয়ের ভ্যান চালাচ্ছেন। প্রার্থিতার মাইকিং প্রার্থী নিজেই করেন আর একমাত্র ছেলেকে দিয়ে মাইক ঠেলে নিয়ে যাওয়ার এমন দৃশ্য নগরজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
শুক্রবার দুপুরে নাদিরার নির্বাচনী এলাকার রামচন্দ্রপুরে তার ভোটে দাঁড়ানোর বিষয়ে অনেকটা কান্নাজড়িত কণ্ঠে নাদিরা বলেন, ‘পৃথিবীতে আপন বলতে আমার আসলে কেউ নেই। এলাকার সবাই আমার আপনজন। ছোটবেলা থেকেই মানুষের সেবা করার সুপ্ত বাসনা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সুযোগ পাইনি।’
নাদিরা বলেন, ‘৮ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে আরও পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা অনেক মাইক এলাকা ছেড়েছেন। তাদের পক্ষে অনেকেই কাজ করছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে আমি পারি নাই। মাত্র ৬০ হাজার টাকা নিয়ে ভোটের মাঠে নেমেছি। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা বোনের কাছ থেকে ধার করেছি। পোষা রাজহাঁস বিক্রি করে বাকি টাকা জোগাড় করে জনগণের সেবার বাসনা নিয়ে মাঠে নেমেছি।’
এই প্রার্থী বলেন, কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে নিজেই মাইকিং করছি। এই টাকা দিয়ে যে পোস্টার করেছি তা নিজের হাতেই এলাকার বিভিন্ন স্থানে সাঁটিয়ে দিচ্ছি। জনগণের সেবার মানসিকতা নিয়ে জিপ গাড়ি প্রতীকে এলাকাবাসীর দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোটপ্রার্থনা করছি।’