সারাদেশে রাসায়নিক জঙ্গি হামলা আশঙ্কা! হাসপাতালগুলোতে বিশেষ সতর্কাবস্থা
সম্ভাব্য রাসায়নিক জঙ্গি হামলার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সারাদেশের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ সর্তকতা এবং হামলা মোকাবেলা করণীয় প্রসঙ্গ চিঠি জারি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন আজিজুল হক ভূঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমি যেহেতু জেলার অধিনে তাই আমার কাছে এ চিঠি আসেনি। তবে সারাদেশের বিশেষায়িত হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক, উপপরিচালক, তত্বাবধায়কদের কাছে এ চিঠি এসেছে।
চিঠিতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো রাসায়নিক জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করে বিভিন্ন পর্যায়ের গোয়েন্দা সূত্রগুলো থেকে সরকারকে সতর্ক করে দেওয়ার পর সারাদেশেই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল জেনারেল হাসপাতাল ও বিশেষায়িত স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোকে এই সতর্কীকরণ পত্র জারি করে স্বাস্থ্য বিভাগ। চলতি সপ্তাহে এই ধরনের পত্র পেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ।
এ ব্যাপারে জানতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে ব্রিগে, জেনারেল মহসিন পাঠক ডট নিউজকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এখন আমি মন্ত্রণালয়ের মিটিং এ ঢাকায় আছি। তবে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা এবং অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (সিএমপি) মাহবুবুর রহমান বলেন, এ ধরণের কোন চিঠি আমাদের কাছে এসেছে কিনা এ মূহুর্তে আমি বলতে পারছি না। আমি এখন ঢাকায় অবস্থান করছি।
আমাদের রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি আলমগীর মানিক জানান, চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে রাঙামাটির ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ নীহার রঞ্জন নন্দী বলেন, এই ধরনের পত্রটি হাতে পাওয়ার পরপরই আমাদের সকলস্তরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট্য সকলের সাথে আমরা কথা বলে আমাদের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে এবং সেগুলো বর্তমানে প্রস্তুত আছে। রাঙামাটিতে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোকে।
স্বাস্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারের স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের পক্ষ থেকে গত ২৬/০৮/২০১৮ ইং তারিখের ৪৪.০০.০০০০.০৭৫.০৪.০০৯.১৬-৪০৪ সংখ্যক পত্রের মাধ্যমে সারাদেশে সম্ভাব্য রাসায়নিক জঙ্গি হামলার আশঙ্গার কথাটি জানিয়ে এই বিষয়ে রাসায়নিক হামলার ক্ষেত্রে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান এবং বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জন এবং প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে বলেও উক্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ তুলে ধরে এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।
এরই আলোকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ধীণ স্বাস্থ্য বিভাগ, সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১ বাংলাদেশ সচিবালয় থেকে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রেহানা ইয়াছমিন কর্তৃক স্বাক্ষরিত স্মারক নং-স্বাপকম/বিবিধ-৩৯/২০০৫/৫৭১ এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালককে পত্র দিয়ে এই বিষয়ে সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা সংক্রান্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে কার্যক্রম গ্রহণের জন্য বলা হয়।
এই বিষয়টি অবগত হওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত ২৬/০৮/২০১৮ ইং তারিখে স্বারক নং-স্বাঃঅধিঃ/হাঃসাঃম্যাঃ/২০১৮-১৯/৩০৩ মূলে বাংলাদেশে সম্ভাব্য রাসায়নিক জঙ্গি হামলায় হতাহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা প্রসংগে প্রেরিত পত্রে সারাদেশের বিশেষায়িত হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এবং জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক-কাম-সিভিল সার্জনকে ন্মি লিখিত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। উল্লেখিত বিষয়গুলো হলো-রাসায়নিক হামলায় হতাহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য প্রতিটি হাসপাতালে একটি বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা টিম গঠন করা। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা-সরঞ্জাম-ঔষধ সীমিত আকারে মজুদ রাখা। এ্যাম্বুলেন্স সচল রাখাসহ ওটি কমপ্লেক্স-এ বিদ্যুৎ এর বিকল্প ব্যবস্থা জেনারেটর) সচল রাখা। বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা টিম এর সকল সদস্যের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
উপরোল্লেখিত বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে এই বিষয়ে করণীয় পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট্য সকলকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এই পত্র পাওয়ার পর গত ৩০/০৮/২০১৮ ইং তারিখে স্বারক নং-সি,এস/ রাঙ্গা/ উন্নয়ন/ ২০১৮ইং/ ২১৬৯(১১) এর মাধ্যমে বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল ও জেলার সকল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন কর্তৃক উপরোক্ত স্বারক পত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সময়মত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ শওকত আকবর খান এর কাছে প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রাপ্ত নির্দেশনানুসারে আমরা আমাদের সাধ্যের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ঔষধ সরঞ্জামাধির পাশাপাশি একমাত্র এ্যাম্বুলেন্সটিকেও প্রস্তুত রাখা আছে।