অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

দেশে চলছে তুঘলকি শাসনঃ গণগ্রেফতার বন্ধ না হলে কঠোর কর্মসূচি

0
ফাইল ছবি।

রাজনৈতিকভাবে হয়রানীর উদ্দেশ্যে মিথ্যা, বানোয়াট, কাল্পনিক ও গায়েবী মামলা দিয়ে রাতের আধারে বাসাবাড়ী থেকে নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার করার অভিযোগ করেছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি।

তবে পুলিশ প্রশাসন এটাকে গণ গ্রেফতার বলতে নারাজ।

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা  হয়েছে, গত কয়েকদিনে চট্টগ্রামের প্রত্যেক থানায় বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের শত শত সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও আইনজীবি নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাসায় ঘুমন্ত নিরপরাধ নেতৃবৃন্দকে পুলিশ অমানবিকভাবে তুলে নিয়ে নাশকতার পরিকল্পনার মামলায় চালান দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দরা।

চট্টগ্রামে বিএনপি ও আইনজীবি নেতাকর্মীদের নামে গায়েবী মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার বিকেলে গণমাধ্যম কর্মীদের মেইলে পাঠানো এক বিবৃতির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দরা।

বিএনপি নেতৃবৃন্দরা অভিযোগ করে বলেন, গত কয়েকদিনে চান্দগাঁও থানায় যুবদল নেতা মো. মনছুর, রাশেদ বায়েজিদ থানায় ইয়াকুব চৌধুরী, আবু মুসা, জোনাব আলী, মাহবুবুর রহমান ও মো. রুবেল, খুলশী থানায় নজরুল ইসলাম সরকার, রমজান আলী, ইউসুফ হোসেন জিহাদ, আবু তাহের, দেলোয়ার হোসেন কালাম, হালিশহর থানায় আজিজুর রহমান বাবুল, বন্দর থানায় মো. এরশাদ, আকবর শাহ থানায় সাবেক কাউন্সিলর আবদুস সত্তার সেলিম, শহিদুল্লাহ ভূঁইয়া, গোলাম কিবরিয়া গোলাপ, ডবলমুরিং থানায় নুরুল আলম, জাহাঙ্গির আলম, মাহবুব আলম, মো. ইদ্রিছসহ ২০ দলীয় জোটের অসংখ্য নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে।

আকবরশাহ বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর জাহাঙ্গির আলমের বাসায় হানা দিয়ে জাহাঙ্গীরকে না পেয়ে তার কলেজ পড়ুয়া মেধাবী সন্তান মীর আবদুল্লাহ আল আরাফাতকে পুলিশ নাশকতার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে।

২০ সেপ্টেম্বর এক যুক্ত বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দরা বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনও ৫ জানুয়ারীর মতো একতরফা ও ভোটারবিহীন করার নিলনকশার অংশ হিসেবে এই গণগ্রেফতার। সরকার পুলিশ বাহিনী ব্যবহার করে নির্বাচনী পরিবেশ ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে।  ১সেপ্টেম্বর মহাসমাবেশের পর থেকে সারাদেশে গায়েবী মামলা দেয়া হয়েছে ৩ হাজারের অধিক। এসব মামলায় নামে বেনামে লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীদের আসামী করে ৩ হাজারের অধিক গ্রেফতার করা হয়েছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, গ্রেফতার, হাজতবাস, হুলিয়া ও নিষ্ঠুর বিচার এখন দেশের মানুষের নিয়তি হয়ে গেছে। শুধু বিরোধী দল নয়, গণতন্ত্রকামী মানুষকেও এ সরকার অপরাধী বানাচ্ছে। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী, হজ্ব পালনরত ব্যক্তি, প্যারালাইস রোগী ও মৃত ব্যক্তিকেও মামলার আসামী করা হয়েছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, চট্টগ্রামের সাবেক পিপি ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি এডভোকেট আবদুস সাত্তার ও আইনজীবি ফোরাম নেতা এডভোকেট শহিদুল হক রিটন, এডভোকেট জাফর হায়দারের নামেও খুলশী থানায় মিথ্যা গায়েবী মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের আইনী সহায়তা দানে বাঁধা দিতেই আইনজীবিদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। দেশে এখন তুঘলকি শাসন চলছে বলে এটা সম্ভব হচ্ছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, চট্টগ্রামের বিভন্ন থানায় নগর বিএনপির সহসভাপতি এস কে খোদা তোতন, শফিকুর রহমান স্বপন, সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুল আলম, মো. ইকবাল চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক মো. শাহ আলম, জাহাঙ্গির আলম দুলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হালিম স্বপন, সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক আজাদ বাঙালী, বিএনপি নেতা মাঈন উদ্দিন চৌধুরী মাঈনু, আইয়ুব খান, মহসিন তালকুদার, রফিক উদ্দিন, ফরিদুল আলম, মো. সেলিম উদ্দিনকে আসামী করে মামলা দেয়া হয়েছে।

মহানগর বিএনপির নেতারা ক্ষোভের সাথে বলেন, সারাদেশে আওয়ামী, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের খুন, গুম, চাঁদাবাজী ও দখলদারীতে দেশের মানুষ অতিষ্ট, অথচ পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো বিএনপির নেতাকর্মীদের বাসাবাড়ী ও রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে গায়েবী মামলায় ঝড়্াচ্ছে। চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পুলিশের সামনে গাড়ী ভাঙচুর ও প্রকাশ্যে বন্দুক উচিয়ে গুলি করছে। পুলিশ তাদের দেখেও না দেখার ভান করছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, এক দেশে দু’রকম আইন চলতে পারে না। তাই এসব ঘৃণ্য অমানবিক আচরণ বন্ধ করুন। নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত সকল গায়েবী মামলা প্রত্যাহার করে গ্রেফতারকৃত রাজবন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি দিন। অন্যথায় চট্টগ্রাম থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

গণমাধ্যম কর্মীদের মেইলে পাঠানো চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী স্বাক্ষরিত যুক্ত বিবৃতিতে যাদের নাম বলা হয়েছে সেসব নেতাদের মধ্যে রয়েছে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহামুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বেগম রোজী কবীর, গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক ফজু, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডাঃ শাহাদাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, সিনিয়র সহ সভাপতি আবু সুফিয়ান।

এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মাহাবুবুর রহমান এ অভিযানকে গণ গ্রেফতার বলতে নারাজ। তিনি পাঠক ডট নিউজকে বলেন, এটা গণ গ্রেফতার না। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে গতকাল রাতে শিবিরের কিছু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আপনি গত এক সপ্তাহ আগে দেখেন এবং কোর্টে খবর নিয়ে দেখেন প্রতিদিন কত গ্রেফতার হচ্ছে..? গণ গ্রেফতার হলে তো সাধারণ মানুষ আটক হতো। এখনতো কোন সাধারণ মানুষ আটক হচ্ছে না।

*নগরী জুড়ে গণগ্রেফতার, আত্নগোপনে বিরোধী নেতাকর্মী

*মিথ্যা গায়েবী মামলা দিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না-নোমান