অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ইসলামী ঐক্যজোটের পর এবার হেফাজত ছাড়ার ঘোষণা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর

0
.

ইসলামী ঐক্যজোট থেকে পদত্যাগের পর এবার মূল সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর এর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দেশের দ্বিতীয় বর্ষীয়ান আলেমেদ্বীন জামিয়া বাবুনগর মাদ্রাসার মহাপরিচালাক আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।

গতকাল চট্টগ্রাম ফটিকছড়ির স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি একথা জানান।

আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, হেফাজতে ইসলাম সমস্ত ওলামায়ে কেরামের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। যে সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল ১৩ দফা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর যে আইন-কানুন করেছে; এগুলো ইসলাম বিরোধী। সেগুলো পরিবর্তন করার জন্য সমস্ত আলেম-ওলামারা মিলে আন্দোলন শুরু করে। এ গুলো নিয়ে হাসিনার সাথে গণভবনে প্রাইভেট বৈঠক হয়েছে। এতে ৬৮ জন আলেমসহ আমরা গিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী কিছু কিছু দাবী মেনে নেয়ার আশ্বাসও দেয়। বিশেষ করে- স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য বললে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেন এ শিক্ষা ছাড়া নৈতিক চরিত্র গঠন সম্ভব হয় না; তাই আমি সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করবো। কিন্তু এরপরে যা ছিল, তাও বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের ১৩ দফার একটিও মানেনি। এরমধ্যে কওমী সনদের স্বীকৃতির কথা উঠে আসে; ওলামাদের কেউ তা চাইলেও কেউ কেউ তা চায়নি। শেষে সবাই একত্রিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে স্বীকৃতির দাবী তুললে তিনি তা দেয়ার আশ্বাস দেয় এবং স্বীকৃতিও দিয়েছে। যারা স্বীকৃতির বিরুদ্ধে ছিল; তাদের মত হচ্ছে- এ গুলো দেওবন্দী মাদ্রাসা। দেওবন্দী উসুলে সরকারী স্বীকৃতি নেয়ার কোন নজীর নেই, এটি উসুলের খেলাফ। এ জন্যই তারা বিরোধিতা করে। তারপরও সবাই যেহেতু স্বীকৃতি নিচ্ছে- বিরোধীরাও চুপ করে থাকে। এ স্বীকৃতি পাওয়ার পর হেফাজতের ১৩ দাবীর কোন কথা আর বলা হচ্ছে না। এখন হেফাজতের মুরব্বীরা স্বীকৃতি পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কথা বলা শুরু করেছে; সংবর্ধনা দিচ্ছে; এটি দিচ্ছে ওটি দিচ্ছে। ১৩ দাবীর কোনটি তো পূরণ করেনি; সে গুলো নিয়ে কথাও বলা হচ্ছে না। হেফাজত গঠিত হয়েছিল সে গুলো বাস্তবায়নের জন্য; যেহেতু তা করা হচ্ছে না, তাই আমি হেফাজত থেকে ইস্তিফা দিয়েছি। স্বীকৃতি পাওয়ায় হেফাজত আমীর ১৩ দফার জন্য কোন কথা বলছে না। শাপলা চত্বরের ঘটনার পর কই একটি প্রতিবাদ সভাও তো করেনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শাপলা চত্বরে আনুমানিক ২০০ লোক শহীদ হয়েছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বীকৃতি দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিচ্ছে- কোন দাবী পূরণের জন্য নয়।

হেফাজত আমীর তার আদর্শ থেকে সরে গেছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরে গেছে বলেই তো মনে হচ্ছে; নইলে ১৩ দফার ব্যাপারে তো আর কোন আন্দোলন করছে না। এতে কি প্রমাণিত হয়?

আল্লামা বাবুনগরী ইসলামী ঐক্যজোট থেকেও পদত্যাগ করেছেন উল্লেখ করে বলেন, ইসলামী ঐক্যজোটে আমি গেছি আল্লামা ফজলুল হক আমিনীর আহবানে এবং দলের সভায়ও শরীক হয়েছি। তিনি বয়সে আমার ছোট হলেও মানুষটি সাহসী, হকের উপর জানবাজ ছিলেন। দ্বীনের জন্য নি:স্বার্থবান মুজাহিদ ছিলেন। তাই তার সাথে আমি কাজ করেছি। পরে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। তারপরও পূর্বের ন্যায় আমি ইসলামী ঐক্যজোটের সাথে ছিলাম। কিন্তু এখন মুফতি আমিনীর মত লোক ইসলামী ঐক্যজোটে নেই। আর এখন যেহেতু আমার বয়স হয়ে গেছে; সেহেতু আমার পক্ষে ওখানে (ঢাকায়) গিয়ে মুফতি আমিনীর অভাব-অনুপস্থিতির ঘাটতি পূরণ করাও সম্ভবপর হচ্ছে না। সে রকম সুযোগও নেই। এ কারণে আমি ইসলামী ঐক্যজোট থেকে ইস্থফা দিয়ে ফেলেছি।

বর্ষীয়ান এ আলেমেদ্বীন বলেন, হায়াতুল উলিয়া ও বেফাকুল মাদারিসের কর্মকান্ড দেওবন্দের নীতি বিরোধী। তাই এ ব্যাপারেও আমার আপত্তি ছিল এবং এখনো আছে। এতে করে কওমী আলেমদের শিক্ষার মান অধ:পতনে যেতে পারে। এ বিষয়টি ওলামায়ে কেরামের গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত।

*“আওয়ামীলীগের এজেন্টদের সাথে আমি নেই”- মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী