অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

নেশা ও ভোগবাদিতাকে দূরে ঠেলে সুবিচার কায়েমে যুবসমাজকে এগিয়ে আনতে হবে

0
.

২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, তরুণ ও যুবারাই হচ্ছে যেকোন জাতির গড়ে ওঠা ও উন্নয়নের প্রধান স্তম্ভ, জাতির স্নায়ু ও আত্মা। তারা যেকোন সুপ্ত জাতির জাগরণের প্রতিভূ। একটা দেশের নৈতিক, আদর্শিক, সংস্কৃতি ও সভ্যতার উন্নয়নের তরুণ-যুবারাই প্রধান কারিগর। তারাই মাতৃভূমি রক্ষা ও দেশের ভূন্ডকে অখন্ড ও নিরাপদ রাখার অকুতভয় যোদ্ধা। তারাই জাগ্রত জ্ঞানের অধিকারী, সজীব। তারাই শারীরিক ও মানসিক শক্তির অধিকারী। তারা সকল ক্ষেত্রে নিত্যনতুন রীতি ও ধারার সূচনা করে। এ কারণেই বর্তমান ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদ ও বিদেশী আগ্রাসী শক্তিসমূহ আমাদের তরুণ ও যুবকদেরকে আত্মবিস্মৃত করতে পরিকল্পিতভাবে নেশা ও ভোগবাদিতার সকল আয়োজনের প্রসার ঘটিয়ে তাদেরকে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ভুলিয়ে দিয়েছে। এই থেকে উত্তরণের জন্য দেশের যুব সমাজকে নেশা ও ভোগবাদিতাকে দূরে ঠেলে ইনসাফ ও সুবিচার কায়েমে মনোযোগী হতে হবে।

নবগঠিত যুবজমিয়তের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের একটি প্রতিনিধি দল ‍শনিবার আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর সাথে বারিধারাস্থ কার্যালয়ে সাক্ষাত করতে আসলে তিনি এসব কথা বলেন।

যুবজমিয়ত প্রতিনিধি দলের নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী আরো বলেন, তারুণ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা ও তা বাস্তবায়ন করা। এজন্য আল্লাহ্ তা‘আলা জীবনের এ মধ্যম স্তরকে শক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পবিত্র কুরআনের সূরা রূমের ৫৪ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তিনি দুর্বল তথা শিশু অবস্থায় তোমাদের সৃষ্টি করেন অতঃপর দুর্বলতার পর শক্তিদান তথা যৌবনে উপনীত করেন, অতঃপর শক্তির পর দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য’।

জমিয়ত মহাসচিব বলেন, দেশে বর্তমানে মানুষের অধিকার বলতে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। একদিকে উন্নয়নের নামে সাম্রাজ্যবাদ ও কর্পোরেট বাণিজ্যের সহায়ক হয়, এমন খাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের একচেটিয়া ব্যয় করা হচ্ছে, অন্যদিকে এই ব্যয়ের ভেতরে অবাধে লুটপাট চলছে। উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড হাতে নেওয়া হয়, কিন্তু সেই কাজ শেষ হতে চায় না। বছর বছর টেণ্ডারের মূল্যবৃদ্ধি করে সমানে লুটপাট চলছে। বলা হয়েছিল, পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ২০১৮ সালে গাড়ি চলবে, কিন্তু এখন খবরে দেখি, যে গতিতে কাজ চলছে, তাতে ২০২২ সালেও পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হয় কিনা সন্দেহ আছে। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির কথা বলেছিল। বিশ্বব্যাংকে খেদিয়ে এখন অবাধে সব চলছে। মেট্রো রেল প্রকল্পের ব্যাপারেও একই খবর। কবে শেষ হবে, কেউ বলতে পারছে না।

তিনি বলেন, গরীব, কৃষক, খেটে খাওয়া মানুষ ও নিম্ন আয়ের বিভিন্ন পেশাজীবীদের দিনগুজরানের খবর সরকার নিচ্ছে না। গ্রাম-বাংলায় মানুষের হাহাকার দেখার কেউ নেই। একদিকে অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে গ্রামের মানুষ জীবন বাঁচাতে হিমশিম খাচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীনদের আগ্রাসী রাজনীতির ভয়ানক যাঁতাকলে গ্রাম-গঞ্জের মানুষও এখন তাদের দুঃখের কথা বলতে পারছে না, ন্যায় বিচার পাচ্ছে না।

যুব জমিয়তের নেতৃবৃন্দকে আল্লামা কাসেমী আরো বলেন, ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারিতাকে উৎখাত করে দেশে সুশাসন, ইনসাফ এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠা ছাড়া এই দুরাবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। আর এ জন্য জাতির তরুণ ও যুবসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তরুণ ও যুবকদের দায়িত্ব অনেক। একটা দেশের ইতিবাচক পরিবর্তন, উন্নয় ও সমাজ গড়তে তরুণ ও যুবারাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। এই লক্ষ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহযোগী সংগঠন যুব জমিয়তের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে।

তিনি বলেন, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদ আমাদের দেশে মাদক, নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, বিলাসিতা, ভোবাদিতা ছড়িয়ে দিয়ে একদিকে তাদের ব্যবসার প্রসার ও অর্থনৈতিক শোষণ চালাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্ম ও যুবসমাজকে ভোগবাদিতায় মত্ত ও বেখবর রেখে আধিপত্যবাদি ও আগ্রাসী শক্তি শেকড় গেড়ে বসছে। এই থেকে উত্তরণের জন্য অবশ্যই ছাত্র সমাজ ও যুবসমাজকে সোচ্চার, সচেতন হতে হবে।

তিনি বলেন, যারা জাতির আগামীর পথপ্রদর্শক, উন্নয়নের কর্ণধার ও সফলতার চাবিকাঠি সেই তরুণদের পদস্খলন যেকোনো দেশের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনবে। তাই তরুণ সমাজের দায়িত্ব হলো নিজেকে ধর্মীয় শিক্ষায় আলোকিত করে কর্মমুখী ও বাস্তবমুখী জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে মেধাকে সমৃদ্ধ করে নিজের উৎকর্ষ সাধন ও দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করা। প্রতিটি তরুণ-তরুণীর সফলতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে একটি শক্তিশালী জাতি, একটি শক্তিশালী দেশ। এর ফলে এগিয়ে যাবে আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। আর তরুণরা সফল হবে যদি তারা দৃঢ় মনোবল ধারণ করে।

তিনি বলেন, তরুণদের ব্যাপারে মিশরের কবি ইবরাহীম নাজী বলেন, “যখন চক্ষু ঘুমিয়ে পড়ে তখন আমরা যুবকরা ভোরে জাগা পাখির ন্যায় প্রত্যুষে জাগ্রত হয়ে ফজরকে অভ্যর্থনা জানাই। আমরা যুবকরা সবাই মিলে প্রকৃত মর্যাদা অর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। জেনে রাখ, যে যুবক-তরুণ বিজয়ের জন্য সকাল সকাল ঝাঁপিয়ে পড়ে, সে বিজয় ছিনিয়ে আনে”।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন, যুব জমিয়ত সভাপতি মাওলানা তামহীমুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ইসহাক কামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা গিয়াস উদ্দিন, সহ-সভাপতি মুফতী জাবের কাসেমী, মাওলানা আখতারুজ্জামান তালুকদার, মাওলানা মামুনুর রশীদ, মুফতী মিজানুর রহমান, মাওলানা ফরীদ আহমদ, মাওলানা আব্দুল কাদের জিলানী, মাওলানা মুহাম্মদ আলী, মাওলানা আব্দুল্লাহ মাসুদ কাফী, মাওলানা জহির উদ্দীন, মাওলানা আব্দুল হাই, প্রচার সম্পাদক মাওলানা রেজাউল কারীম প্রমুখ।