অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

“ধর্ম যার যার উৎসব সবার” এমন উক্তি ইসলাম বিরোধী-আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী

0
.

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব প্রবীণ আলেমে-দ্বীন আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজার অনুষ্ঠানে মুসলমানদের শরীক হওয়াকে সমর্থন ও উৎসাহিত করে “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” এহেন উক্তি বা বক্তব্য দেয়া ইসলাম ও যুক্তি বিরোধী।

হিন্দু ধর্মানুসারীরাও এ ধরনের বক্তব্যকে স্বীকার করবেন না। তিনি বলেন, বৃহৎ মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশে সকল ভিন্ন ধর্মাবলম্বী জনগণ অবশ্যই পূর্ণ নাগরিক অধিকার ও সকল প্রকার সামাজিক সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা ভোগ করবেন। রাষ্ট্র এ জন্য যথাযথ উদ্যোগ নিবে। কিন্তু এ পর্যায়ে মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্যবোধকে ভিন্নধর্মের সাথে একাকার করে নিতে চাওয়ার সুযোগ নেই।

আজ (১৬ অক্টোবর) মঙ্গলবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, গরু জবাই করা ও গরুর মাংস খাওয়া হিন্দুশাস্ত্রে নিষিদ্ধ থাকলেও ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে মুসলমানদের এই ন্যায্য ধর্মীয় অধিকারে সহিংস উপায়ে বাধা দেওয়া হয়।

অপরদিকে মূর্তিপূজা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম, অথচ হিন্দুধর্মে এটাই উপাসনা ও পুণ্যের কাজ। কিন্তু মুসলমানরা ইসলামে নিষিদ্ধ মূর্তি পূজায় হিন্দুদেরকে কখনোই বাধা দেওয়ার দাবি বা আওয়াজ তুলেনি এবং এটাকে ন্যায্য বলেও বিশ্বাস করে না।

জমিয়ত মহাসচিব আরো বলেন, এটা সকলেরই স্মরণ রাখা দরকার, ঈদ বা পূজা জাতীয় ও সামাজিক কোন রীতি অনুষ্ঠান নয়, এটা একেবারেই ধর্মীয় উৎসব। ধর্মীয় যে কোন আয়োজন-উৎসবে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীরই স্বাতন্ত্র্যবোধ থাকা বাঞ্ছনীয়।

তিনি বলেন, একটি বিষয় মুসলমানদের জেনে রাখা জরুরি যে, অমুসলিমদের প্রতি ইনসাফভিত্তিক নাগরিক আচরণ ও সম্প্রীতিপূর্ণ মনোভাব রাখা ইসলামের শিক্ষা। অমুসলিমদেরকে সব ধরনের সামাজিক ও মানবিক সহযোগিতা দেওয়াতে ইসলাম কোনরূপ বাধা দেয় না। কিন্তু তাদের ধর্মীয় উপাসনা, পূজা বা আরাধনায় যে কোনরূপ অংশ নেয়া মুসলমানের জন্যে অবশ্যই হারাম। নিজে পূজা করা যাবে না, প্রতিমা তৈরিতে ব্যক্তিগত অর্থসাহায্য করা যাবে না, উপাসনায় দৈহিক, মানসিক, আর্থিক কোন ধরনের সহায়তা দেয়া যাবে না। যদি কোন মুসলমান ব্যক্তিগত পর্যায়ে অমুসলিমদের পূজা অর্চনায় শরীক হয়, পূজা অনুষ্ঠান উপভোগ করে, দেব-দেবীর কাছে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে, দেবীর বিভিন্ন গুণকীর্তন করে, তাহলে সে কোনভাবেই আর মুসলমান থাকে না।

তিনি বলেন, মুসলমানদের পবিত্র কুরবানীর উৎসবে শরীক হতে কোন হিন্দুকে আহ্বান করার যেমন যৌক্তিক ব্যাখা নেই, ঠিক তেমনি ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ মূর্তিপূজা ও শিরক অনুষ্ঠানে শামিল হতে কোন মুসলমানকেও আহ্বান জানানোর সুযোগ থাকতে পারে না। এই সাধারণ বিষয়টা আল্লাহ-রাসূলে বিশ্বাসী সকল মুসলমানকে সহজেই উপলব্ধিতে নিতে হবে।

আল্লামা কাসেমী বলেন, আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের মুসলমানরা সংখ্যালঘু নাগরিকদের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তার প্রতি সবসময় আন্তরিক। সংখ্যালঘুদের নাগরিক অধিকারের সুরক্ষায় বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় উদাহরণ হওয়ার মতো। প্রতিবেশি দেশ ভারতের মতো এই দেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কোন মুসলিম ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা কখনো বক্তব্য তো দেনইনি; বরং এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা সংখ্যালঘুদের জান-মালের সুরক্ষা দেওয়াকে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে মনে করেন।

জমিয়ত মহাসচিব বলেন, আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে যে, সেক্যুলার মতাদর্শীরা নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে এদেশের মুসলমানদেরকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে, যেখানে মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনাবোধ বলে কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না। দেখা যাবে, মুসলমান নারী-পুরুষরা একদিকে নামায পড়ছেন, দাড়ি-টুপি ও হিজাব পালন করছেন। আবার দাড়ি-টুপি ও হিজাব নিয়েই নাচ-গান ও পূজায় শরীক হওয়াসহ বিভিন্ন অনৈসলামিক কাজেও নিঃসংকোচে শামিল হচ্ছেন।

অথচ কয়েক বছর আগেও দেখা যেত, সাধারণ-নাটক সিনেমা দেখার সময়ও ধর্মভীরুতার ফলে মাথায় টুপি থাকলে সেটা খুলে রাখতে। হিজাবহীন এমন মুসলিম নারীকে দেখা যেতো, আযানের আওয়াজ শুনলে বা কোন ধার্মিক পুরুষ মানুষ সামনে পড়লে মাথায় ওড়না টেনে নিতেন। এখন স্বাভাবিকভাবে এমন ধর্মভীরুতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। সেক্যুলারিজমের কুফল এভাবেই মনের অজান্তেই মুসলমানদের ঈমানী চেতনাবোধকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে মুসলিম জাতিসত্তার জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। -প্রেসবিজ্ঞপ্তি