অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রাম বন গবেষণা ইনস্টিটিউটে ৪জনের সিন্ডিকেটের কোটি টাকা হরিলুট

0
.

চট্টগ্রাম বন গবেষণা ইনস্টিটিউটে গবেষণার নামে সরকারী কোষাগারের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে লিখিত ভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। ফিল্ড এ্যাসিসট্যান্ট অরুনের নেতৃত্বে চারজনের একটি সিন্ডিকেট সরকারী এসব অর্থ লুটপাটের সাথে জড়িত বলে জানা গেছে।

এসব অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া না হলে স্বেচ্ছায় চাকুরী ছেড়ে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছে বিএফআরআই’র ডুলাহাজারা স্টেশনের ইনচার্জ উত্তম কুমার চৌধুরী। গত ৯ অক্টোবর তিনি বন গবেষনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক খুরশিদা আক্তারের সামনে আত্মহত্যার এমন হুমকি দেন বলে বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে।

গবেষণার নামে প্রকল্পের বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রকল্প পরিচালক হাসিনা মরিয়ম, এস আর ও আরিফুল হক, রিসার্চ অফিসার মিজানুল হক, ও ক্ষেত্র সহকারী অরুন কুমার বড়ুয়া মিলে ভূয়া বিল ভাউচার তৈরি করে আত্মসাৎ করেছেন মর্মে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে গত মাসে মন্ত্রনালয়ের একটি তদন্ত টিম এবং চলতি মাসে আরো একটি তদন্ত টিম সরেজমিন তদন্তে আসে। পৃথক সময়ে আসা দুটি তদন্ত টিম সরেজমিন তদন্ত শেষে গবেষনার নামে সরকারী টাকা লোপাটের প্রমান পেলেও এ নিয়ে এখনো কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, কাগজে কলমে গবেষণা খাতে খরচ হয়েছে মর্মে বিল ভাউচার তৈরি করলেও বাস্তবে মাঠ পর্যায়ে গবেষণার কোন কাজই হয়নি। যা চলতিমাসে তদন্তে আসা পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজগর আলীর চোখে ধরা পড়ে। তিনি ইছামতি কেন্দ্রে সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে তাঁকে যে সব গাছ দেখানো হয়েছে তা অনেক আগের বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।

এ ছাড়া ফটিকছড়ির হেয়াকোঁ কেন্দ্রে কয়েকশত চারা বার বার দেখিয়ে বিল ভাউচার করে অর্থ লোপাট করা হয়েছে।

জানা যায়,২০১৭-১৮ অর্থ বছরে গবেষনার জন্য প্ল্যান্ট প্রোপাগেশ ইউনিট (পিপিইউ) তৈরির নামে গাজীপুর শালনা বীজ বাগান কেন্দ্র ও কক্সবাজার জেলার চকরিয়া ডুলাহাজারা কেন্দ্রে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ এবং কাগজে কলমে ব্যয় দেখানো হয়েছে। বাস্তবে এসব অর্থের বিপরীতে আদৌ প্ল্যান্ট প্রোপাগেশ ইউনিট সরকারী নিয়ম মতে তৈরি করা হয়নি। অথচ বরাদ্দের এসব অর্থ কাজ শেষ হওয়ার আগেই পরিশোধ করা হয়েছে।

২০১৭-১৮ অর্থ বছরের গত ৬ মাসে ৫৬ লাখ ৯১ হাজার টাকা গবেষণা খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে যার কোন কাজ বাস্তবে কোন কেন্দ্র হয়নি। এ ছাড়া একই অর্থ বছরে শ্রমিক মজুরী বাবদ সাড়ে তিন লাখ, রাস্তা মেরামত ৩ লাখ, বাইসাইকেল ক্রয় ১ লাখ ৬৮ হাজার, ডিজিটাল ব্যালেন্স ক্রয় ৪ লাখ, এয়ারকুলার ক্রয় ২লাখ ৫০ হাজার, কম্পিউটার ক্রয় ৬ লাখ ৪৫ হাজার, রিফ্রিজারেটর ক্রয় ৫০ হাজার টাকাসহ প্রায় কোটি টাকার মালামাল ক্রয় করিয়াছেন মর্মে জুন সমাপনিতে চুড়ান্ত হিসাব প্রদান করেছেন। অথচ বাস্তবে এসব মালামাল ক্রয় করা হয়নি ।

এ ছাড়া যে বীজ ক্রয় করা হয়েছে দেখিয় তা অনেক পুরনো এবং ব্যবহার অনুপযোগি। পলিথিন ক্রয়ের জন্য কাগজে কলমে কোটেশন টেন্ডার দেখানো হলেও বাস্তবে কোন প্রতিষ্ঠান কোটেশন টেন্ডাওে অংশ নেননি। ক্ষেত্র সহকারী অরুন বড়–যা নিজেই এসব প্রতিষ্ঠানের নামে কোটেশন টেন্ডার তৈরি করে নিজেই মালামাল গুলো ক্রয় করেন। যা দীর্ঘ অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। এ ছাড়া এয়ারকুলার সরবরাহে স্মার্ট পাওয়ার এবং পলিথিন সরবরাহে কৃপা-১ নামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে কোটেশন টেন্ডারে অংশ গ্রহনকারী দেখালেও প্রকৃতপক্ষে তারা বিষয়টি জানেনই না বলে এ প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেন।

এদিকে এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করে বিপাকে পড়েছেন ডুলাহাজারা কেন্দ্রের ইনচার্জ উত্তম কুমার চৌধুরী। তাকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করে প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এ ছাড়া এসব অনিয়ম ও লুটপাটকে আরো সুদৃঢ় করতে প্রকল্প পরিচালক হাসিনা মরিয়ম অনিয়মের মূল হোতা অরুন বড়–যাকে গত কয়েকদিন ধরে আলাদা রুমে বসিয়েছেন। অনিয়ম এবং লুটপাটের তথ্য যাতে কেউ জানতে না পারে সে জন্য এ ব্যবস্থা বলে সেখানকার একটি সুত্র জানায়। অরুন মুলত একজন ক্ষেত্র সহকারী। অফিসের বাইরে মাঠেই তার কাজ হলেও সার্বক্ষনিক তাকে প্রকল্প পরিচালক হাসিনা মরিয়মের রুমেই পাওয়া যায়। অরুনকে দিয়েই সমস্ত অনিয়মের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন হাসিনা মরিয়ম। তবে অরুন কুমার বড়ুয়া বলেন, তিনি কোন অনিয়ম করছেন না। ম্যাডামের (হাসিনা মরিয়ম) নির্দেশেই তিনি কাজ করছেন।

গবেষণা ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠার গত ৫৯ বছরে কোন উল্লেখযোগ্য গবেষণা সাফল্য নেই প্রতিষ্ঠানটির। এ ছাড়া এসব প্রকল্পের ফোকাসিং করা বাবদ সরকার গত অর্থ বছরে বরাদ্দ দিয়েছে বিশ লাখ টাকা। এ টাকা গুলোও কর্তাদের পকেট ভারি করা ছাড়া আর কোন কাজে আসেনি। বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের সচিব গত বছরের ১১ নভেম্বর গবেষনা ইনষ্টিটিউটে এক ঝটিকা সফরে এসে এসব অপকর্ম দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন পাবর্ত্য জেলায় বাশক পাতা চাষ প্রকল্প হাতে নিলেও শেষ পর্যন্ত এটিও কোন সুফল বয়ে আনেনি। প্রকল্প পরিচালক হাসিনা মরিয়ম এসব অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন নিয়ম মেনেই সব কাজ করা হচ্ছে।

বন গবেষনা ইনষ্টিটিউটের পরিচালক খুরশিদা আক্তারের নিকট গত পাঁচ বছরে উল্লেখ যোগ্য গবেষণা সাফল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি শুধুমাত্র বাঁশের কিছু ফার্নিচার তৈরী করা ছাড়া আর কিছুই দেখাতে পারেননি।