অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

আজ জাতীয় শোক দিবস

0

13925050_290345357992235_8743112176878116578_nআজ ১৫ আগস্ট শোকের দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডে সপরিবারে প্রাণ হারান বাঙালির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে আমরা আজ তাদের স্মরণ করি। মর্মস্পর্শী এ হত্যাকাণ্ডের আজ ৩৬ বছর পূর্ণ হলো। এবার ১৫ আগস্ট এসেছে সম্পর্ণ ভিন্ন মাত্রায়। ইতিহাসের ঘৃণ্য এ হত্যাকাণ্ডের মামলার রায় কার্যকরের পর জাতি এবার শোক দিবসটি পালন করছে একরকম স্বস্তির ভেতর দিয়ে। বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কেঁদে ফেরার অবসান হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির মধ্য দিয়ে। তবে এখনো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন বিদেশে পালিয়ে রয়েছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে। তা না হলে জাতি সম্পর্ণরূপে কলঙ্ক ও দায়মুক্ত হবে না।

যে লক্ষ্য ও আদর্শকে সামনে রেখে বাংলাদেশের অভ্যুদয়, সেই স্বপ্ন সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই ঘটানো হয়েছিল ১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডি। ঘাতকদের লক্ষ্য ছিল শুধু বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করাই নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাংলাদেশটাকেই ধ্বংস করে দেয়া। তাই তো ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় একই বছরের ৩ নভেম্বর কারা অভ্যন্তরে হত্যা করা হলো বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর চার জাতীয় নেতাকেও। ৭১-এর পরাজিত শক্তির প্রতিশোধ গ্রহণের যে প্রক্রিয়া সে সময় অঙ্কুরিত হয়েছিল তারই একটি ভয়ঙ্কর পরিণতি ঘটে ১৫ আগস্টে। স্বাধীন বাংলার স্থপতিকে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারীরা খুনিদের যাতে বিচার না হয় সেজন্য ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করে। স্বঘোষিত খুনিরা পরবর্তী সময়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে থাকার সুযোগ পায়। এদের কেউ কেউ বিদেশে মিশনে চাকরি পেয়ে পুরস্কৃত হয়।

৯৬-এ আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিলের আগ পর্যন্ত ২১ বছর স্বঘোষিত খুনিরা বিচারের আওতা থেকে মুক্ত থাকার সুযোগ পেয়েছিল। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই প্রথম এর বিচার ক্রার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯৮-এ দায়রা জজ আদালতের দেয়া ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে পুনর্মূল্যায়িত হয় এবং ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের অনাগ্রহ ও নিষ্ক্রিয়তায় আপিল বিভাগে আরো একজন বিচারকের অভাবে দীর্ঘ ৫ বছর ঝুলে থাকে মামলাটির আপিল শুনানি। যা হোক, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর হাইকোর্টে আপিল বিভাগে একজন বিচারক নিয়োগের ফলে মামলাটির শুনানির পথ উন্মুক্ত হয় এবং ২০০৭-এর ৮ আগস্ট এই মামলার কার্যক্রম আবার শুরু হয়। এরপর বর্তমান সরকারের সময়ে আপিল বিভাগে চারজন বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার পর মামলাটির কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয় এবং চূড়ান্ত নিষ্পত্তি সম্পন্ন হয়।

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের ছুটি বাতিল করে সাবেক বিএনপি জোট সরকার সংকীর্ণতার পরিচয় দিয়েছিল, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হাইকোর্টের এক রায়ে তা আবার পুনর্বহাল করা হয়েছে। অর্থাৎ ২০০৮-এর ১৫ আগস্ট থেকে বঙ্গবন্ধুর শাহাদৎ বার্ষিকীর দিন জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। এ বছরও এ দিনটি সরকারি ছুটি হিসেবে পালন এবং জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।

আজ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।

১৫ আগস্ট কেবল একজন রাষ্ট্র নায়ককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়নি। বরং এর পেছনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকেও ধূলিসাৎ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন হওয়ায় দেশ ও জাতি যেমন হাফ ছেড়ে বেঁচেছে, তেমনি ইতিহাসেরও দায়মুক্তি ঘটেছে। এখন বাকি পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে এবং ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় নিহত জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হতে হবে। আমরা ১৫ আগস্ট এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে নির্মমভাবে নিহত সকলের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।