অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

নতুন জোট গঠনের চেষ্টায় মুফতি ইজহার ও ববি হাজ্জাজ (ভিডিও)

0
.

দেশের প্রধান বৃহৎ দুই রাজননৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয় তারা পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাসী। এই দুই রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন দেশের ক্ষমতায় থাকলেও তারা দেশ ও জাতির জন্য কিছুই করেনি। তাই দেশের মানুষের কাছে গণতন্ত্র পৌঁছে দিতে ও সুষ্ঠ নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ধর্মীয় ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসীদের নিয়ে নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন বারংবার নিজের মতাদর্শ পাল্টানোর জন্য সমালোচিত নেজামে ইসলাম পার্টির চেয়ারম্যান মুফতি ইজহার ও জাতীয় গণতান্ত্রি আন্দোলনের(এনডিএম)চেয়ারম্যান ও দেশের বিতর্কিত ধনকুবের মূসা বিন শমসের ছেলে ববি হাজ্জাজ।

সম্প্রতি তারা ঢাকায় কয়েকটি বৈঠকের পর চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকায় মুফতি ইজহারের বাস ভবনে এক বৈঠকে মিলিত হন। সেই বৈঠকে মুসলিম লীগের মহাসচিব আবুল খায়েরসহ কয়েকটি ছোট দলের নেতৃবৃন্দ উপন্থিত ছিলেন। একই দিন মুফতি ইজহার ববি হাজ্জাজকে নিয়ে হাটহাজারী মাদ্রায় যান।

.

জাতীয় গণতান্ত্রি আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের চট্টগ্রামে আগমন ও বিভিন্ন কারনে বিতর্কিত লালখান বাজার মাদ্রাসায় মুফতি ইজহারের বাস ভবনে বৈঠক ও হাটহাজারী মাদ্রাসার যাওয়ার কারন জানতে চাইলে ববি হাজ্জাজ পাঠক ডট নিউজকে বলেন, আমি আমার দলের একটি প্রোগ্রামে চট্টগ্রাম এসেছি। আমি মাওলানা মুফতি ইজহারকে নিয়ে কিছু দিন যাবত রাজনৈতিক জোট গঠনের জন্য কাজ করছি। তাই আজ উনার বাসায় আসলাম এবং আলেম উলামাদের দোয়া নেওয়ার জন্য হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম।

তার রাজনৈতিক দল গঠন ও জোট গঠনের চেষ্টার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পাঠক ডট নিউজকে বলেন, আমি ১৯৯৬ সাল থেকে পরোক্ষ ভাবে রাজনীতিতে আসি। তারপর ২০১২ সালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের বিশেষ রাজননৈতিক উপদেষ্টা ছিলাম। আমি তখনকার তৃতীয় বৃহত্তম দলের নির্বাচন সমন্বয়কারীও ছিলাম।

.

২০১৩ সালে এরশাদের কঠিন বিপদের সময় আমি তার পাশে ছিলাম। তখন একমাত্র আমিই এরশাদের দাঁড়িয়ে ছিলাম বলেই মিডিয়ার ভাইয়ের আমাকে নিয়ে খবর ছাপিয়েছিল। ২০১৪ সালে আ’লীগ যখন আবার সরকার গঠন করে জাতীয় পার্টি তখন সরকারের সাথে আতাতে এসে সরকারে যোগ দেয়। তখনও আমি জাতীয় পার্টির সাথে জড়িত ছিলাম। ২০১৫ সালে একটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়। তারপর চারটি মূলনীতি নিয়ে (জবাবদিহীতামূলক গণতন্ত্র,ধর্মীয় মূল্যবোধ,স্বাধীনতার চেতনা ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ) আমি আমার রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন’র যাত্রা শুরু করি।

জাতীয় পার্টির গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে সরকারের অংশদীর হওয়ার পরও কেন আপনি জাতীয় পার্টি ছাড়লেন জানতে চাইলে তরুন এই রাজনীতিবিদ বলেন, জাতীয় পার্টি জনগণের জন্য কাজ করছিলোনা। ক্ষমতায় থাকলেইতো সব কিছু হয়না। তারা জনগণের জন্য কাজ করছিলোনা। আমি একটি বড় পরিবারের সন্তান নতুন করে বেশি ক্ষমতা আমার প্রয়োজন নেই। ক্ষমতার লোভে আমি জাতীয় পার্টি করিনি বলেই সঠিক রাজনীতির জন্য দ্বীনি মূল্যবোধের ভিত্তিতে জবাবদিহিতামূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য মাঠে এসেছি।

একটি নতুন দল গঠন করে কিভাবে দেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আমার রাজনেতিক দলের যাত্রা শুরু করেই ৬৪টি জেলা ৪৯২টি উপজেলায় সফর করেছি। হাজার হাজার কর্মী তৈরী করেছি। আমরা জনগণের কাছে জবাবদিহিতামূলক গণতন্ত্র নিয়ে আসতে চাই
দেশের রাজনীতিতে ডান পন্থী বা বাম পন্থী কোন সঠিক রাজনীতি নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি মূলত দুই দল ভিত্তিক আ’লীগ-বিএনপি। এখানে তৃতীয় কোন দল নেই কারন তৃতীয় শক্তি হিসেবে কেউ দাঁড়ানোর জন্য শক্তি ও সাহস জোগাড় করতে পারেনি।

.

মুফতি ইজহারের সাথে জোট গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা একটি জোট গঠন করার জন্য চেষ্টা করছি। আতোমধ্যে আমরা অনেক রাজনৈতিক দলের সাথে কথা বলেছি। তিনি বলেন, মুফতি ইজহার চার দলীয় জোটের রুপকার ছিলেন। আজকে আমরা বসে আছি তিন দলের নেতৃবৃন্দ। আমরা এমন একটি জায়গায় আসতে চাই যেখানে সঠিক চিন্তা নিয়ে রাজনীতি করা দলগুলো এক সাথে হবে। আ’লীগ-বিএনপির সাথে যারা যেতে চায় তাদের নিয়েই জোট গঠন হবে। কারন সঠিক চিন্তা নিয়ে রাজনীতি করতে চাইলে আসলেই বিএনপি আ’লীগের সাথে যাওয়া সম্ভব না।

আমরা সকল রাজনৈতিক দলকে আহবান জানাতে চাই যে, সঠিক রাজনীতি, দ্বীনি মুলবোধ, জবাবাদিহিতামূলক গণতন্ত্রের সঠিক চিন্তা নিয়ে আমরা মাঠে এসেছি। আমরা একা যেতে চাইনা আসেন সবাই মিলে একসাথে দেশের জন্য কাজ করি।

আপনাদের এই জোট নির্বাচনী জোট কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছি সুদূর পরিসরে জোট করতে। বর্তমান রাজনীতির যে মেরুকরণ হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আদর্শের জোট করতে চাইছি। কিন্তু সেই জোটের একটা প্রতিফলন সামনে একাদশ নির্বাচনে আমরা দেখাতে চাই। নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা জনগণের কাছে আরো বেশি পৌছাতে পারবো।

জোটের লক্ষ্য উদ্দেশ্যে ও রুপরেখা তৈরী করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই জোটের প্রথম রুপরেখা হলো, এই দেশের অধিকাংশ জনগণের গণতন্ত্রের মূল্যবোধ ও দ্বীনি মূল্যবোধ। সেই মূল্যবোধ নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। দেশের জনগণের মূল্যবোধ বুঝতে চেষ্টা না করে পাশ্চাত্যের রাজনীতি আমরা করতে চাইনা। আমরা এই দেশের রাজনীতি করতে চাই। গণতন্ত্র জনগণের কাছে পৌছে দিতে চাই। নির্বাচন পদ্ধতি যেন সঠিক হয়। সরকারের বিকেন্দ্রীকরণ যেন হয়। এই সব বিষয়গুলো আমরা দেখতে চাই। জোট ঘোষনা হওয়ার পর আমরা বিস্তারিত রুপরেখা জোটের পক্ষ থেকে জানাবো।

ভিডিও

বড় দুই দলের বাহিরে গিয়ে আপনাদের জোট সফল হতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই, আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি সফল হবোই। দুই দলের পরিবারতন্ত্র থেকে কিভাবে বের হবে জাতি সেটা সময়ই বলে দিবে।

আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে প্রধান দুই দল দুই মেরুতে অবস্থান করছে আপনারা কাকে সাপোর্ট করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আ’লীগ-বিএনপি কারো দাবীকে এখন পর্যন্ত সমর্থন করছিনা। আমরা কাউকে সমর্থন করতে হলে তারা একটি রুপরেখা দিতে হবে। কেউ রুপরেখা দিতে না পারলে আমরা দিবো রুপরেখা। দুই দলের বাহিরে আমরা নির্বাচন নিয়ে রুপরেখা দিবো।

বর্তমান পদ্ধতিতে আপনারা নির্বাচনে যাবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুষ্ঠ হলে আমরা সব ধরণের পদ্ধতিতে নির্বাচনে আমরা অংশ গ্রহণ করবো। তবে বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতিতে আমরা খুশি না। এই পদ্ধতির পরিবর্তন চাই।

নতুন জোট গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে নেজামে ইসলাম পার্টির চেয়ারম্যান মুফতি ইজহারুল ইসলাম বলেন, আমি ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী এনডিএম এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজসহ আরো কয়েকটি দলকে নিয়ে জোট গঠনের চেষ্টা করছি। আমরা ইতোমধ্যে কয়েকটি মিটিংও করেছি। দেশের স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসীদের নিয়ে আমরা এই জোট গঠন করছি। আমরা একটি সুষ্ঠ নির্বাচন চাই।

ভিডিও

আপনি এক সময় চার দলীয় জোটে ছিলেন পরে আবার সেই জোট থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন এখন আবার নিজে জোট করছেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে মুফতি ইজহার বলেন, আমার এই বাসায় বসেই চার দলীয় জোট গঠন করা হয়েছিল। আমি ছিলাম সেই জোটের রুপকার। মধ্যখানে চারদলীয় জোটের সাথে তাদের ভুলের কারনে আমার সাথে একটু সমস্যা হয়েছিল। তারপর কিছু দিন আমি অন্যদিকে ছিলাম। যখন আমার ধর্মের উপর আঘাত আসলো তখন আমি সেই দিক থেকে ফিরে আসলাম। আমরা যখন যাদেরকে সৎ মনে করেছি তাদেরকেই সহযোগিতা করেছি।

আপনি ২০দলীয় জোটে অন্তভুক্ত হতে চাইছে আবার নিজেই জোট করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে একাত্বতা পোষন করেছি। আমার একাত্বতা পোষন করাটা ২০দলীয় জোটের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। আমি বিগত এক বছর ঢাকায় থেকে ২০দলীয় জোটের সাথে মিটিং করেছি। খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ হওয়ার আগে তার সাথে দুই বার দেখা হয়েছে। তিনি কারাবন্দী হওয়ায় আমির ২০ দলীয় জোটে অন্তুভুক্ত হতে পারিনি।