অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আ. লীগের ফরম নিলেন ৯ নেতা-নেত্রী

0
.

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ

লোহাগাড়া উপজেলা ও সাতকানিয়ার উপজেলা (আংশিক) নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন চট্টগ্রাম-১৫। স্বাধীনতার পর মাত্র একবারই এ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ের মুখ দেখে। তাও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে। ইতোমধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশীল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগের ফরম বিতরণের প্রথম দিনেই চট্টগ্রাম-১৫ লোহাগাড়া-সাতকানিয়া) আসন থেকে আওয়ামী লীগের ফরম কিনেছেন ৯ নেতা-নেত্রী

তারা হলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও রূপালি ব্যাংকের পরিচালক আবু সুফিয়ান, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বনফুল এন্ড কোং এর চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব সিআইপি, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী এডভোকেট একেএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট কামরুন নাহার, মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী ববিতা বড়ুয়া ও অহিদ সিরাজ স্বপন।

সূত্র জানিয়েছে, এখনো চূড়ান্ত হয়নি আওয়ামী লীগের প্রার্থী। সম্প্রতি বিশাল শোডাউন করে নিজের অবন্থান জানান দিয়েছেন আমিনুল ইসলাম। সেদিন তিনি মোটর শোভাযাত্রা নিয়ে পুরো নির্বাচনী এলাকা একবার প্রদক্ষিণ করেছেন। এসময় তিনি বলেন, নিজের পক্ষে শোডাউন নয় বরং নৌকার পক্ষে কাজ করছেন তিনি।

অন্যদিকে বর্তমান সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীও মাঠে রয়েছেন। তিনি প্রায় প্রতিনিদিনই এলাকায় যাচ্ছেন এবং উন্নয়ন কর্মকা- উদ্ধোধন ও পরিদর্শন করছেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের জয়যাত্রায় আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। লোহাগাড়া-সাতকানিয়ার মানুষ আমার সাথে আছে। আমি বিশ্বাস করি এবারও আমাকে মনোনয়ন দিয়ে এলাকার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার সুযোগ দেয়া হবে।

শিল্পপতি এম এ মোতালেব সিআইপি বলেন, আমি গতবারও মনোনয়ন প্রাপ্তির কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে অজানা কারণে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় সেটা আর হয়ে উঠেনি। এবারও নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পাবার লক্ষ্যে মাঠে-ময়দানে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি এবার নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন। ইতোমধ্যে আমি মনোনয়নও সংগ্রহ করেছি।

ইতিহাস বলছে, লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আসনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কোন নেতাই দুইবার মনোনয়ন পাননি। ১৯৯১ সালের গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রয়াত আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। সেবার তিনি জামায়াত প্রার্থী আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এসময় ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী প্রকাশ মোস্তাফিজ মিয়া।

১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু আর এ আসনে মনোনয়ন পান নি। সেসময় নৌকার টিকেট পান ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী। সেবার বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে যান তৎকালীন বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী কর্নেল (অব:) অলি আহমদ বীরবিক্রম ।

২০০১ সালের নির্বাচন ঘনিয়ে এলে তৎকালীন চট্টগ্রাম-১৪ তথা লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আসনে নতুন সংকট দেখা দেয়। বিএনপির কর্নেল অলি ও জামায়াতের শাহজাহান চৌধুরী দু’জনই চারদলীয় জোটের প্রার্থীতা চেয়ে বসেন। একপর্যায়ে জোটের হাইকমান্ড দুইজনকেই ভোটের মাঠে ছেড়ে দেয় এবং যিনি জিতে আসবেন তাকে গ্রহণ করে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। সেবার নৌকার মাঝি ছিলেন প্রয়াত শিল্পপতি আলহাজ্ব জাফর আহমদ চৌধুরী । তিনি সেসময় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের কো-চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই নির্বাচনে বিএনপির কর্নেল অলি ও আওয়ামীলীগের জাফর আহমদ চৌধুরীকে ধরাশায়ী করে বিজয়ের মুকুট গলায় পরে নেন শাহজাহান চৌধুরী।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীতা পান চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট একেএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। অবশ্য সেবারও কর্নেল (অব:) অলি আহমদ নির্বাচন করেন। এ নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্ধন্ধির প্রাপ্ত ভোটের প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তৎকালীন চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের আমীর ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা আ. ন. ম. শামশুল ইসলাম।

সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পান দলে নবাগত প্রফেসর ড. আবু রেজা নদভী।

দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, দলের সভানেত্রি ছাড়া কেউই জানে না কে হচ্ছেন চট্টগ্রাম-১৫ আসনে নৌকার মাঝি।

এই আসনে এক নেতা দুইবার মনোনয়ন না পাওয়ার ধারাবাহিকতায় আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনেও কী নতুন মুখ মনোনয়ন পাচ্ছেন নাকি বর্তমান এমপিই আবারো আ. লীগের টিকেট পাচ্ছেন তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছুদিন।