অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রাম-৮ আসনে আ’লীগের অন্তরায় জোট

0
.

চট্টগ্রাম-৮ আসনে (চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও বোয়ালখালী) আ’লীগের মনোনয়ন চাইছেন একাধিক প্রার্থী। তবে তাদের এ চাওয়ায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে জোটের নেতারা। আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা এ আসনের দলীয় মনোনয়ন চাইলেও সে স্বপ্ন জোটগত কারণে বিগত দুই নির্বাচনে পূরণ হয়নি। এবার কেন্দ্র থেকে ভিন্ন সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে ধারণা করছেন আওয়ামীলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন সাতজন। ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, তাঁর পুত্র মুজিবুর রহমান মুজিব, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রিয় যুবলীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানা, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবদুল কাদের সুজন, নগর আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। এছাড়া নগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করবেন বলে জানা গেছে।

আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরীক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ একাংশ) এর সাংসদ মঈন উদ্দিন খান বাদল ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এর চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম আহবায়ক লায়ন বাপন দাশগুপ্ত এ আসনে ১৪ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। সাংসদ বাদল তৃতীয় বারের মতো এবারও নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের অংশ নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও ন্যাপ এর লায়ন বাপন কুঁড়েঘর প্রতীকে নির্বাচনে লড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

বিগত ২০০৮ সালেও আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী এ আসনে মনোনয়ন ছিলেন। জোটগত কারণে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর কার্যকরী সভাপতি মঈন উদ্দিন খান বাদলকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করেন। তবে সেই ঐক্য বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে জড়িয়ে পড়েন অভ্যন্তরীণ কোন্দলে। ফাটল ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগে। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন ও সিনিয়র সহ-সভাপতি এসএম আবুল কালামকে ঘিরে বিভক্ত হয়ে যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এর মাঝে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারো নির্বাচিত হন সাংসদ বাদল।

উপজেলা আওয়ামী লীগ পুনরায় গঠনের মধ্য দিয়ে ছিটকে পড়েন বেশ কয়েকজন প্রবীণ নেতা-কর্মী। ছিটকে পড়া নেতা-কর্মীরা বাদলের ছায়া সঙ্গী হয়ে উঠেন পরবর্তী সময়ে। তাদের দাবি পুনরায় গঠিত কমিটিতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। তারা ওই কমিটিকে পকেট কমিটি আখ্যায়িত করে আলাদাভাবে গঠন করেন উপজেলা আওয়ামীলীগ কমিটি ও অঙ্গ সংগঠন সমূহ। এ কমিটির সভাপতি হন মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক এসএম সেলিম। তবে তারা সাংসদ বাদলের হয়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের সভা সমাবেশে অংশ গ্রহণ করতে দেখা গেছে। নিজেদের ১৪ দলের নেতা বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তারা। এবারের নির্বাচনে দক্ষিণজেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক দলীয় প্রার্থী হিসেবে চাইছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান।

নবগঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে এ আসনের সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড ও দলীয় কর্মসূচি পালন করে আসছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ। উপজেলা আওয়ামী লীগের এ কমিটি মোছলেম উদ্দিন অনুসারী হিসেবে পরিচিত। দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা জন্য উপজেলা সদরে নিজস্ব অফিস নিয়েছেন। পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওর্য়াডে কমিটি গঠন ও ছাত্রলীগ, যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ এবং মহিলা লীগ গঠনের মধ্য দিয়ে দলকে সু সংগঠিত করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা। উপজেলা এ কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন পরিচ্ছন্ন আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আমিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জহিরুল আলম জাহাঙ্গীর। তারা বলেন, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পালনে সচেষ্ট রয়েছে বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ। আমাদের অভিভাবক মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমদের প্রেরণায় অনেক দূর এগিয়ে গেছে আওয়ামী লীগের রাজনীতি। নির্বাচনে যদি মোছলেম উদ্দিনকে দলীয় মনোয়ন দেওয়া হয় তবে এ আসনে বিপুল ভোটে বিজয়ী করা সময়ের ব্যাপার। জননেত্রী যে উন্নয়ন করেছেন ও প্রতিটি নাগরিককে যে সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন তাঁরা নৌকার বিকল্প কল্পনাও করছেন না।

এ আসনে হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পাটির সম্মিলিত ঐক্যজোটের শরীক দল ইসলামী ফ্রন্টের মোমবাতি প্রতীক নিয়ে প্রার্থীতা করতে পারেন উত্তর জেলা সভাপতি নাঈমুল ইসলাম। এছাড়া কমিউনিষ্ট পাটি (সিপিবি) মো.সেহাব উদ্দীন সাইফু কাস্তে প্রতীকে লড়বেন বলে জানা গেছে।

২০০৮ সালে নির্বাচনে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম.মোরশেদ খান আইনী জটিলতার কারণে অংশ নিতে পারেনি। তারই শিষ্য নগর বিএনপি’র যুগ্ন সম্পাদক এরশাদ উল্লাহ এ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি মহাজোটের প্রার্থী মঈন উদ্দীন খান বাদলের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এবার আসন্ন সংসদ নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশ নেয় তবে এ আসনে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থীতা করবেন বলে জানা গেছে।

তিনি নির্বাচনে প্রার্থীতা না করলে মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান অথবা সাবেক যুগ্ন সম্পাদক এরশাদ উল্লাহ দলীয় মনোনয়ন নিতে পারেন বলে জানিয়েছেন উপজেলার বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক মান্নান।