অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

লাখপতি কোরানে হাফেজ মহিউদ্দিন যেভাবে দুর্ধর্ষ চোর!

0
.

তিনি দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। একজন কোরানে হাফেজ। পবিত্র কোরান শরিফ তার মুখস্ত। সৌদিতে মসজিদে ইমামতিও করেছেন। লাখ লাখ টাকা আয় করেছেন। এক সময়ের এই লাখপতি এখন একজন দুর্ধর্ষ চোর।

চট্টগ্রামের ৩টি ব্যাংকে চুরি করার ব্যার্থ চেষ্ঠার পর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে চুরির বিভিন্ন সরঞ্জাম। দুর্ধর্ষ এই চোরের নাম মহিউদ্দিন হাসান (৩১)।

দুর্ধর্ষ এই চোরতে গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম জানান, গত ৩ অক্টোবর, আগ্রাবাদ সিটি ব্যাংক, ১৮ অক্টোবর নগরীর জিইসি মোড়ের সিটি ব্যাংক এবং ২৭ অক্টোবর রাউজান উপজেলার সিটি ব্যাংকের শাখায় চুরির চেষ্ঠা হয়। চোর চুরি করতে সফল না হলেও চুরির চেষ্ঠা হয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানার পর পুলিশকে অবহিত করে। এমন চুরির চেষ্ঠার তথ্য পেয়ে এই চোরকে গ্রেপ্তার করতে একটি বিশেষ টিম গঠন করে দেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান।

নগর গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত এই তদন্ত টিম। শুরু হয় কৌশলী অভিযান, গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে রবিবার পুলিশ এই দুর্ধর্ষ চোর মহিউদ্দিন হাসানকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। গ্রেপ্তারের পর সে পুলিশকে জানিয়েছে লাখপতি থেকে তার চোর হয়ে উঠার চাঞ্চল্যকর কাহিনী।

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন হাসান জানায়, সে একজন কোরআনে হাফেজ, ক্বারী, ফাইন্যান্স একাউন্টিং প্রশিক্ষন প্রাপ্ত ও ইমাম।দীর্ঘদিন তিনি ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইতে।

দুবাইয়ে অবস্থানকালে মসজিদে ইমামতি চাকুরী করে এবং অবসর সময়ে সে আর্ন্তজাতিক ফাইনান্স বিষয়ে প্রশিক্ষন লাভ করে। এরপর হতে সে অধিক অর্থ উপার্জনের জন্য বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজার ও মুদ্রা লেনদেনের উপর সার্বক্ষনিক নজরদারি করার চেষ্ঠা করে।

অধিক অর্থ আয়ের লোভ থেকে সে দুবাইতে থাকাকালে অর্জিত অর্থ তার এলাকার পরিচিতি ব্যক্তির নিকট একটি হোটেল ব্যবসায় বড় অংকের টাকা বিনিয়োগ করে। বিনিয়োগ করার পর পরিচিত ব্যক্তি তার অর্থ আত্মসাৎ করে। দুবাই থেকে দেশে এসে হোটেল ব্যবসার মাধ্যমে আরো বেশি টাকা আয়ের লোভ থেকে বন্ধুর প্রতারণায় সে নিঃস্ব হয়ে পরে। হয়ে যায় বেকার।

দীর্ঘদিন চেষ্টাকরে বিনিয়োগকৃত টাকা উদ্ধার করতে না পেরে। বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট হতে কিছু অর্থ ধার কর্য করে ঢাকা দক্ষিনখান আশরাফ সেতু কমপ্লেক্স-এ ডেনিম কাপড়ের দোকান নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে। কিন্তু সেখানেও কতিপয় ব্যবসায়ী তার দোকান দখল করে নেয়।

ঢাকায়ও প্রতারিত হবার পর এবার সে চট্টগ্রামে এসে শুরু করে ইয়াবা ব্যবসা।ইয়াবা ব্যবসা করতে গিয়ে পুলিশের হাতে প্রথম দফা গ্রেপ্তার হয় মহিউদ্দিন। কারাগারে যাওয়ার পর ৪ মাসের মাথায় জামিন মিলে। জামিনে বের হয়ে ঢাকার উত্তরায় “চাল-ডাল” নামক একটি অনলাইনে কেনা-বেচার প্রতিষ্ঠানে চাকুরী নেয়। এই প্রতিষ্ঠানে কয়েকমাস চাকুরি করার পর প্রতিষ্ঠানের ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা চুরি করে পালিয়ে আসে চট্টগ্রাম শহরে।
চট্টগ্রাম নগরীর মোগলটুলি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সে এবার ব্যাংক চুরির পরিকল্পনা করে। যেমন পরিকল্পনা তেমন কাজ করার চেষ্ঠা।

নগরীর আগ্রাবাদ ও জিইসি শাখায় সিটি ব্যাংকে দিনের বেলায় গ্রাহক সেজে প্রবেশ করে বাথরুমে প্রবেশ করে সিলিং এর ভিতর লুকিয়ে থাকে। ব্যাংকের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর সে সিলিং এর উপর হতে নীচে নেমে সকল সিসিটিভি এবং এ্যালার্ম সিষ্টেম বন্ধ করে চুরির চেষ্টা করে। তিনটি ব্যাংকে এমন চেষ্টা করলেও সে একবারও সফল হয়নি। অবশেষে সে আটকা পরেছে পুলিশের জালে। রবিবার সকালে গোয়েন্দা পুলিশ নগরীর ইস্পাহানি মোড় এলাকা থেকে মহিউদ্দিন হাসানকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। তার বিরুদ্ধে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাউজানে ৬টি মামলা রয়েছে।