অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

পথশিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ”প্রথম প্রহর”

0
.

পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যে নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেনা, এমন ক’জন মানুষ আছে যারা অন্যদের স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমেই নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে।  হ্যাঁ, এমন কিছু স্বপ্নচারী এখনো আছে পৃথিবীতে ঠিক তারই প্রমাণ মিলেছে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে। ‘প্রথম প্রহর ফাউন্ডেশন’ নামের একটা সামাজিক সংগঠন সৃষ্টির মাধ্যমে ২০১৪ সালের ১জানুয়ারি সমাজের সুবিধা বঞ্চিত পথশিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে একদল স্বপ্নচারী যুবক তৈরি করেছে ‘প্রথম প্রহর পাঠশালা’।

যে পাঠশালা আজ অবধি নিরলসভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে সমাজের আনাচেকানাচে অযত্নে অবহেলায় বেড়ে উঠা পথশিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে একটা সুন্দর শিক্ষিত সমাজ গঠনের। সংগঠনটি ইতিমধ্যে সীতাকুণ্ড উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের কেদারখীল-এলাকায় ও মীরসরাই উপজেলার হাইতকান্দি ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত করেছে দুটি পাঠশালা।

এছাড়া পশ্চিম মাদারবাড়ী রেললাইন কলোনিতেও আছে ‘প্রথম প্রহর পাঠশালা’র একটি শাখা, যেখানে ধারাবাহিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের পাঠদান করে যাচ্ছে একদল মেধাবী তরুণ-তরুণী। সৈয়দপুর ও মীরসরাই এর একদল শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর সমন্বয়ে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘প্রথম প্রহর ফাউন্ডেশন’।চালু হওয়ার পর থেকে এই সংগঠনটি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে যার মধ্যে রয়েছে পথ শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম, অসহায় দুস্থদের চিকিৎসা সহায়তা, সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের বিনা বেতনে পড়ানোসহ যাবতীয় শিক্ষা উপকরণ সামগ্রী বিতরণের মত কর্মসূচী।

.

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ‘প্রথম প্রহর ফাউন্ডেশন’ এর পরিচালিত সংগঠন ‘প্রথম প্রহর পাঠশালা’য় প্রায় ২০০ র ও অধিক পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠদান করে যাচ্ছে ।

সংগঠনের উদ্যেক্তা প্রতিষ্ঠান পরিচালক মোঃ জিল্লুর রহমান জানান,” বন্ধুদের নিয়ে একদিন জেলেপাড়াসহ বিভিন্ন অজোপাড়া গাঁয়ে দেখতে পাই শিশুরা স্কুলে না গিয়ে তাদের বাবা মার সাথে কাজ করছে, দারিদ্র্যতার কারণে তারা বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার আলো থেকে। ওখান থেকে আমরা কয়েকজন বন্ধু (আরিফুল ইসলাম,ফখরুল ইসলাম সোহেল,শাহাদাত হোসাইন,আব্দুল মান্নান,ইমাম হোসেন,ইদ্রিস আলম, ইমরান হোসেন,সাদমান,সাজ্জাদ,সাব্বির, হোসেন আহমদ, রবিউল ইসলাম, জিতু কর্মকার, সাদেক, আরাফাত, আরমান, নয়ন) উদ্যোগ নিলাম এদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়ানোর। যেমন চিন্তা তেমন বাস্তবায়ন, সেই উদ্যেগের অংশ হিসেবে, সপ্তাহে ৬ দিন নিয়মিত পাঠদানের লক্ষ্যে সুবিধা বঞ্চিত ও পথ শিশুদের জন্য পাঠশালাটি এখনো অবধি চালু রাখা হয়েছে।

.

উল্লেখ্য যে,পাঠশালার শিক্ষকেরা বিভিন্ন সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক – স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত। বর্তমানে ১৪ জন শিক্ষক বিনামূল্যে পাঠদান করে আসছে। ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে ‘প্রথম প্রহর ফাউন্ডেশন’ এর সীতাকুন্ডের সভাপতি ফখরুল ইসলাম সোহেল বলেন, “চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় আমাদের পাঠশালার শাখা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চলছে। সমাজের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের মধ্যে আমরা শিক্ষার আলো ছড়াতে চাই এবং টাকার অভাবে যেনো আর কোন শিশুকে অযত্ন,অবহেলায় দিনমজুরের কাজ করতে নাহয় আমরা সেই ব্যবস্থা করতে চাই, তবে সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরা আরো বেশী জনকল্যাণমুখী কাজ করার অনুপ্রেরণা পাবো। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে এই ফাউন্ডেশনের পাঠশালাটি সুশিক্ষার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি লাভ করবে বলে আমার বিশ্বাস”।

পরিচালক আরিফুল ইসলাম বলেন, ” অতি শীঘ্রই সংগঠনের একটা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করবো আমরা যারা আমাদের অনুপ্রেরণা, পরামর্শ প্রদানসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করবেন এবং সর্বস্তরের মানুষ এই মানবিক উদ্যেগে আমাদের পাশে থাকবে বলে আমরা আশা করি”। সংগঠনের অন্যতম উপদেষ্টা কলামিস্ট এপে. মুহাম্মদ আশ্রাফুল আলম ভূঁইয়া বলেন,’প্রথম প্রহর ফাউন্ডেশন’ এর পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ‘প্রথম প্রহর পাঠশালা’ ভবিষ্যত তরুণ প্রজন্মের জন্যে একটা উদাহরণ হবে। নষ্ট স্রোতের বিপরীতে থেকে কিভাবে সুন্দরের সহযাত্রী হতে হয় তা এই ফাউন্ডেশন,পাঠশালার উদ্যেক্তা কতিপয় যুবক দেখিয়ে দিয়েছে। এদের দ্বারা ভবিষ্যতে কিছু হবে। এই ফাউন্ডেশন একটি মাদকমুক্ত ও আদর্শ,শিক্ষিত সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং তিনি সমাজের বিত্তবান মহলের প্রতি আহবান জানান এই সংগঠনের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে।