অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি

1
pic 1
কালুরঘাট রেলসেতু বাস্তবায়নের দাবীতে বোয়ালখালীতে বিশাল মানববন্ধনে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ।

বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:

‘কর্ণফুলী নদীর উপর কালুঘাটে রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদনের দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে বোয়ালখালীতে মানববন্ধন করেছে সর্বস্তরের জনগণ।
শুক্রবার বিকেলে পূর্ব কালুরঘাটে সামাজিক, পেশাজীবী, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ এ মানববন্ধনে অংশ গ্রহণ করেন।

এতে অংশ নেয়া হাজার হাজার মানুষের একটাই দাবি ‘কর্ণফুলী নদীর উপর কালুঘাটে রেল কাম সড়ক সেতু প্রধানমন্ত্রীর যে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন তার দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।’

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট বুধবার সন্ধ্যায় কর্ণফুলীতে কালুরঘাটে দ্বিতীয় সড়কসহ রেলসেতু প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী নীতিগতভাবে অনুমোদন দেন।

ওই বছরের ১২ আগস্ট এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। এরপর ৩১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আগ্রহের প্রেক্ষিতে দু’টি স্মারকলিপির বিষয়বস্তু সংক্ষিপ্ত আকারে লিখে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এর আগে ২০১৪ সালের ১০ মে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সমানে বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু নির্মাণের দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্টিত হয়।

সেতু নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ। সেতু বাস্তবায়ন পরিষদই প্রথম সেতুর দাবিটি প্রকাশ্যে আনতে সক্ষম হয়, দাবির পক্ষে জনমত গড়ে তুলে সর্বস্তরের জনগণকে এক কাতারে আনেন ও একের পর এক কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে পরিষদ দাবিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত নিয়ে যেতে সক্ষম হন বলে জানিয়েছেন এ পরিষদের আহ্বায়ক মো. আবদুল মোমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক মুস্তফা নঈম ও সদস্য সচিব রমেন দাশগুপ্ত।

বৃটিশ আমলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বার্মা ফ্রণ্টে সৈন্য আনা নেয়ার জন্য ১৯৩০ সালে কালুরঘাট রেলসেতুটি নির্মিত হয়। ১৯৫৮ সালে সেতুটি অন্যান্য যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ১৯৯১ সাল থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ কালুরঘাটে একটি দ্বিমুখী রেলওয়ে কাম সড়ক সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন। ১৯৯৭ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ১০ টনের অধিক পরিবহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) এক গবেষণায় সাত মাত্রার ভূমিকম্পে সেতুটি ধসে পড়ার শঙ্কার কথা বলা হয়।

IMG_2785
মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।

মানববন্ধন বাস্তবায়ন কমিটি:

এদিকে মানববন্ধন বাস্তবায়ন কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট এলাকায় নতুন রেল কাম সেতু নির্মাণ দাবীতে ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ১০ হাজার মানুষ অংশগ্রহন করেছেন।

শুক্রবার কালুরঘাট ব্রিজের পূর্বপাড় হইতে পুরাতন চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের আরকান সড়কের গোমদন্ডী ফুলতল পর্যন্ত সর্বকালের সর্ববৃহৎ এ মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলা হতে দলমত নির্বিশেষে প্রায় শতাধিক সামাজিক সংগঠন তাদের দাবি তুলে ধরে ব্যানার ফেষ্টুন নিয়ে দলে দলে এ মানববন্ধনে যোগ দেয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কালুরঘাট পুরাতন জড়াজীর্ণ সেতুর পাশে নতুন সেতু নির্মাণের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩০ লাখ মানুষের মানবেতর জীবন যাপন থেকে উত্থরণের জন্য এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করার জোরদাবী জানান।

কালুরঘাট
সর্বস্তরের বোয়ালখালীবাসীর দাবী কালুরঘাট রেল ও সড়ক সংযোগ সেতু।

শেষে মানববন্ধনের উদ্যোক্তাদের পক্ষে এম.ইউছুপ রেজা পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করেন। কর্মসূচীর মধ্যে সেতুর দাবি আদায়ের জন্য কালুরঘাট থেকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব পর্যন্ত লং মার্চ ও অবস্থান কর্মসূচী, প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান, সর্বশেষ সেতুর দাবীতে অনশন।

প্রসঙ্গত: মহাজোট সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর উপর কালুরঘাট সেতু নির্মাণে ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২০১০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর (শাহ আমানত সেতু) উদ্বোধন শেষে চট্টগ্রামের পটিয়ার শিকলবাহা এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণের প্রতিশ্র“তি পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন তিনি।

এ সেতুটি নির্মিত হলে পর্যটন নগরী কক্সবাজার, টেকনাফ ও পার্বত্য জেলা বান্দরবানসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের ১৭ সড়কে যানবাহনের চাপ ও যানজট নিরসনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে এবং বোয়ালখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে অর্থনীতির দ্বার খুলবে। গড়ে উঠবে শিল্প-কারখানা। চট্টগ্রাম শহরের নিকটবর্তী উপজেলা হয়েও একমাত্র কালুরঘাটের একমূখী সেতুর কারণে পিছিয়ে পড়েছে এতদাঞ্চলের জনসাধারণ। সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণার দ্রুত বাস্তবায়ন দাবীতে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে।

মানববন্ধন চলাকালে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের মহাসচিব কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে মিছিল।

চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম:
বোয়ালখালীবাসির কপালখালি,দাবী একটাই কালুঘাটে নতুন সেতুু চাই,কর্ণফুলী নদীতে রেল লাইন সংযুক্ত নতুন ২য় সেতু নিমার্ণ না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রামবাসী আন্দোলন করে যাবে। বোয়ালখালী তথা দক্ষিণ চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের প্রাণের দাবী কালুর ঘাটে ২য় সেতু নির্মাণের সরকার কর্তৃক ঘোষনা বাস্তবায়নের দাবীতে ১৯ শে আগস্ট বিকাল ৩টার কালুরঘাট সেতুর পূর্ব পাড়ে বোয়ালখালী আরকান সড়কে পৃথক ভাবে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম আয়োজিত প্রতিবাদী মিছিল ও মানবন্ধনের বক্তারা এ কথা বলেন।

অসংখ্য সামাজিক ও রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক শ্রমিক কৃষি সংগঠনের নেতৃত্বে হাজার হাজার মানুষের এক প্রতিবাদী মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত মিছিল ও মানবন্ধন থেকে একটি কথা একটি দাবী উচ্চারিত হয়, অবিলম্বে কর্ণফুলী নদীতে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কালুরঘাটে রেল লাইন সংযোগসহ ২য় সেতু নির্মানের সরকারের ঘোষনা বাস্তবায়ন চাই। চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের মহাসচিব মো. কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে প্রতিবাদী মিছিল পুর্বে মানবন্ধনে বক্তবো রাখেন, সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান হাসিনা জাফর, আলহাজ্ব সালামত আলী,হেকিম মুহাম্মদ উল্লাহ, বিপ্লব দাশগুপ্ত, লায়ন কামরুজ্জামান, আবুল বশর, সিরাজুল ইসলাম মো.মফিজ, মো.ইদ্রিস, মো.আলম মো.বেলাল হোসেন,মো.নুরুল আলম,শওকত হোসেন,বদিউল আলম মো. নেজাম আব্দু সত্তার, মো.আলী,সাহেদ, আজাদ, বাদশাহ, মো.এনাম, নিজাম উদ্দিন, মো. খসরু, টিপু সুলতান মো. কাশেম, মো. হাছান, মো.সাইফুল, মো.রাজু,মো.জসিম. মো. আবদুল্লাহ,মো.ইকবাল, মো. রানা।

দাবীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন বৃহত্তর চট্টগ্রাম শিক্ষা উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি। বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন মহিলা সংগ্রাম কমিটি। ছাত্র ও সংগ্রাম কমিটি, চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি গ্রাহক কল্যাণ সমিতি। কালুরঘাট রেল সেতু রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ কর্ণফুলী নদী ড্রেজার মালিক সমিতি কর্ণফুলী নদী কালুরঘাট নৌ যাত্রী কল্যাণ সমিতি, চট্টগ্রাম সচেতন নাগরিক পরিষদ, বোয়ালখালী সচেতন নাগরিক পরিষদ,চট্টগ্রাম যাত্রী কল্যাণ পরিষদ,বোয়ালখালী পরিবহন শ্রমিক লীগ। চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের মহা সচিব মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্য বলেন বর্তমান একমূখী জরাজীর্ণ এই রেল সেতুর কারণে সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পটিয়ার আংশিক ও বোয়ালখালীবাসি। কালুঘাটে নতুন সেতুু দাবী বাস্তবায়ন না হলে আরকান সড়ক অবরোধ করা হবে আগামীতে বোয়ালখালী উপজেলাকে পরিকল্পিত উন্নয়নের দাবীসহ এই সেতুর বাস্তবায়নের দাবীতে হরতাল অবরোধ পালনসহ কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।

১ টি মন্তব্য
  1. Noman Ullah Bahar বলেছেন

    বৃটিশ আমলে নির্মিত ব্যবহার অনুপযোগী ‘কালুরঘাট সেতু’ নতুনভাবে নির্মানের দাবিতে আমরা সম্মিলিত হয়েছি ৷ চট্টগ্রাম শহরের ত্রিমুখী বিকাশকে চতুর্মুখী বিকাশে রুপান্তর করতে কালুরঘাট সেতুর নবনির্মান অত্যাবশ্যক ৷ এটি শুধুমাত্র বোয়ালখালীর প্রয়োজনে নয়,বরং ভৌগলিক,অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে এবং বিকল্প টেকসই যোগাযোগ ব্যবস্হার স্বার্থেই জনপ্রত্যাশিত ও প্রয়োজনীয় দাবি৷ গণমানুষের কাছে বর্তমানে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসজাত প্রকল্প যেমন-ফ্লাইওভারের মত উন্নয়ন প্রকল্প প্রতিনিয়ত বাস্তবায়ন হলেও বৃহত্তর জনগোষ্ঠির জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ ও ভোগান্তি নিরসনে অতীব প্রয়োজনীয় নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মান হবে না কেন? এতদঞ্চলের শিল্পায়ন সংযুক্ত সামগ্রিক উন্নয়ন এবং জীবনযাত্রাকে বিকশিত করতে দ্রুত গতিতে কালুরঘাট সেতু নির্মানে কার্যকর উদ্যোগের আহ্বান জানাচ্ছি৷