অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

আশা দিয়েও ইসলামী দলগুলোকে নৌকায় তুলেনি আ’লীগ

0
.

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হলো ইসলামী দলগুলো। গত ০৭ ডিসেম্বর মহাজোটের পক্ষ থেকে ২৯৬টি আসনের চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষনা করা হয়েছে। ৪টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষনা স্থগিত রয়েছে। ঘোষিত আসনগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৪০টি আসন দলীয় নেতাদের দিয়ে বাকি ৫৬টি আসন মহাজোটের অন্যান্য শরিকদের জন্য ছেড়ে দিয়েছে। এর মধ্যে মহাজোটের প্রধান শরিক দল জাতীয় পার্টি (এরশাদ) পেয়েছে ৩৭টি আসন। ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা পেয়েছে ১৩টি আসন। এর মধ্যে ওয়ার্কাস পার্টি ৫, জাসদ ইনু ৩, জাতীয় পার্টি (জেপি-মঞ্জু) ২, তরিকত ফেডারেশন ২ এবং জাসদ (আম্বিয়া) ১টি আসন পেয়েছে। এছাড়া মহাজোটে সদ্য যোগ দেয়া যুক্তফ্রন্ট পেয়েছে ৩টি আসন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ এবার অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন ইসলামী দলের সাথে যোগাযোগ শুরু করে। ভোটের মাঠে নানান সমীকরণ এবং হিসাব-নিকাশ করে আওয়ামী লীগ ইসলামী দলগুলোর সাথে এক ধরনের সখ্য গড়ে তোলে। বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গণে ব্যাপকভাবে আলোচিত হেফাজতে ইসলামীর সাথে বর্তমান সরকারীদলের সুসম্পর্ক গড়ে উঠার বিষয়টি নিয়ে নতুনভাবে আলোচনার শুরু হয়। ১৪দলীয় জোটের শরিকদের আপত্তি সত্বেও সরকার তথা আওয়ামী লীগ হেফাজতসহ বিভিন্ন ইসলামী দলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামীর মহাসমাবেশে হামলার পর সরকারের সাথে তাদের বৈরী সম্পর্কের শুরু। তবে হেফাজতের সাথে এই তিক্ত সম্পর্ক বেশিদিন গড়াতে দেয়নি সরকার।

হেফাজতের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পূরণের মাধ্যমে সরকার তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে। বিশেষ করে কওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দিয়ে সরকার সুসম্পর্কের নজির স্থাপন করে। আর এর প্রতিদান হিসেবে হেফাজতের আয়োজনে আল্লামা আহমদ শফি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা প্রদান করেন এবং ওই সমাবেশ থেকে থাকে কওমী জননী উপাধি দেয়া হয়। হেফাজতে ইসলামীর সাথে সরকারের এই সম্পর্কের ফলে রাজনৈতিক অঙ্গণে শুরু হয় নানান আলোচনা। এরমধ্যে হেফাজতে ইসলামীর নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি আলোচনার মূখ্যবিষয় হয়ে দাঁড়ায়। রাজনৈতিক অঙ্গণে জোর আলোচনা শুরু হয় যে হেফাজতে ইসলামী আগামী নির্বাচনে ১০টি আসনে নির্বাচন করবে এ শর্তে আওয়ামী লীগের সাথে তাদের সমঝোতা হয়েছে। হেফাজতের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাও এ বিষয়ে নানা ভাবে কথা বলেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের ভাগ্যে একটি আসনও জোটেনি।

অন্যদিকে সর্বশেষ ১২টি ইসলামিক দলের ৫২ জন নেতা গত ৬ নভেম্বর গণভবনে সংলাপে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে তাদের সমর্থনের কথা ব্যক্ত করে। দলগুলোর মধ্যে ছিল ইসলামী ঐক্যজোট (নেজামী), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (জাফরুল্লাহ খান), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ জালালী পার্টি, আশেকিন আওলিয়া ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় ইসলামী জোট, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোট ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শর্তহীন সমর্থন দিয়েও এসব ইসলামী দল একটি আসনেও মনোনয়ন পায়নি।

১৪দলীয় জোটের বাইরে মহাজোটের প্রধান শরিকদল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও নির্বাচনকে সামনে রেখে ৫৮টি দল নিয়ে একটি বৃহত্তর জোটের ঘোষনা দেন। এই জোটে দুটি নিবন্ধিত দলসহ মোট ৫৮টি দল ছিল। সংখ্যার বিচারে এটাই দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক জোট। এই জোটে দুটি দল জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এবং দুটি জোট জাতীয় ইসলামী মহাজোট ও বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ)। এর মধ্যে প্রথম দুটি দল নিবন্ধিত। ইসলামী মহাজোটে আছে ৩৪টি ইসলামি দল আর বিএনএতে আছে ২২টি দল। সব মিলিয়ে এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত দল ছিল ৫৮টি। আর এর মধ্যে ইসলামীদল ছিল ৩৫টি। এ জোটের প্রধানদল জাতীয় পার্টি মহাজোটের শরিক হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ৩৭টি আসনে মনোনয়ন পেলেও এখানে ইসলামী দলের কোন নেতা মনোনয়ন পাননি।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পাওয়ার বিষয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের (একাংশ) চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, আমরা স্বতন্ত্রভাবে ইসলামী রাজনীতিকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করছি। মৌলিকভাবে আমরা ১৪দলীয় জোট বা মহাজোটে যোগ দেইনি এবং আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতার জন্য কোন আসনও দাবি করিনি। তাই মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে আমাদের কোন ক্ষোভ নেই।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের একাংশের আমীর ও সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের সভাপতি মাওলানা জাফরুল্লাহ খান এ বিষয়ে বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে কয়েকটি আসনের বিষয়ে আলোচনা করি। ওই আলোচনায় তিনি আমাদের মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে ভাল আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আশায় ছিলাম যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবার নির্বাচনে ইসলামী দলগুলোকে মূল্যায়ন করবে। কিন্তু তারা তা করেনি। নূন্যতম দু’একটি আসনেও ইসলামী দলগুলোকে মনোনয়ন না দিয়ে আওয়ামী লীগ বিমাতা সুলভ আচরণ করেছে।