অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

রাত থেকে প্রচার প্রচারণা শুরু, চট্টগ্রামে এসেছে নির্বাচনী সামগ্রী

0
.

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য চট্টগ্রামের ১৬ আসনে মনোনীত ১১৪ প্রার্থীকে প্রতীক দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচনের দায়িত্বরত দুই কর্মকর্তা। আজ সোমবার সকাল ১০ টা থেকে জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ শুরু হয়েছে।

যারা প্রতীক পেয়েছে তারা সোমবার রাত থেকেই প্রচার প্রচারণার কাজ শুরু করবেন। আজ সোমবার চট্টগ্রামের ১৬ টি আসনের মধ্যে জেলার ১০ সংসদীয় আসনে ৬৫ জন প্রার্থীদের হাতে প্রতীক তুলে দেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন।

অন্যদিকে অপর জেলা রিটার্নিং অফিসার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার আংশিক মিলে ৬টি আসনে ৪৮ জন প্রার্থীর হাতে প্রতীক তুলে দেন।

চট্টগ্রামের ১৬ টি আসনেই বিভিন্ন দলের একাধিক প্রার্থী প্রতীক বরাদ্ধ পেলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বড় দুই জোটের মধ্যে। কয়েকটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও নির্বাচনী হিসেব নিকেশ পাল্টে দিতে পারে বলে সাধারণ জনগণের অভিমত। এক্ষত্রে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের একমাত্র বিদ্রোহী প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলাম চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি আসন থেকে নির্বাচন করতে আপেল প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় এ আসন থেকে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে অংশ নেবেন। তাছাড়া নগরীর কয়েকটি আসনেও আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন রাজনীতিবীদের চাঁপা দ্বন্ধে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক কিছুটা ক্ষতির সম্মুখিন হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

.

অন্যদিকে প্রতীক বরাদ্দের পর বিকেলে নগরীর প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় কালে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক কর্নেল অব. অলি আহমেদ রক্তপাতহীন সুষ্ঠ নির্বাচন করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান সহ চট্টগ্রামে ২০ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন পাওয়া প্রাথীরা উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জোটের নেতারা জানান, নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত লড়বেন তারা। এতে বিএনপি ও বিরোধী দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে দাবী করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নিরপেক্ষ আচরনের আহ্বান জানান নেতারা।

জানা যায়, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে প্রার্থী দিয়েছে। তাছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ২৪টি প্রতিীক বরাদ্ধসহ মোট ৬৩টি প্রতীক সংরক্ষিত আছে। সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চট্টগ্রামের ১৬ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্ধ দেন দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা। তাছাড়া সোমবার ভোরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার ব্যতীত অন্যান্য নির্বাচনী সরঞ্জাম চট্টগ্রাম নগরীর লাভ লেইনস্থ সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে এসে পৌছায়। চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিভিন্ন নির্বাচনী সামগ্রী চট্টগ্রামে এসে পৌঁছায়। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, পরিচয়পত্র, নির্দেশিকা, স্ট্যাম্প প্যাড, কালি, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, লালগালা, অমোচনীয় কালির কলম ইত্যাদি।

নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এ সব সামগ্রী উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হবে বলে নির্বাচন কর্মকর্তা জানান।

চট্টগ্রামে প্রধান দুই দলে যারা প্রতীক পেলেন, চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগের নৌকা ও ২০ দলীয় জোটের সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন পেয়েছেন ধানের শীষ প্রতীক। এ আসনে মোট ৬ জন প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্ধ দিয়েছে জেলা প্রশাসক।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মহাজোটের শরীক দল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী-ফুলের মালা ও ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন ২০ দলীয় জোটে পিজিআর-এর সাবেক প্রধান ও বিএনপি নেতা কর্নেল (অব.) মো. আজিম উল্লাহ বাহার। এ আসনে ৬ জন প্রার্থী প্রতীক পেয়েছেন।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে এ আসনে ৫ জন প্রার্থী প্রতীক পেয়েছেন। নৌকা প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা। বিএনপি থেকে মনোনীত প্রার্থী বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা পেয়েছেন ধানের শীষ প্রতীক।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড) আসনে মোট ছয়জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েছেন। মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সরকারের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম পেয়েছেন নৌকা প্রতীক এবং ২০ দলীয় জোটে উত্তর জেলা কৃষক দলের সভাপতি ইসহাক কাদের চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এবারের ভোটযুদ্ধে অংশ নেবেন।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও বায়েজিদ) আসনে মোট ১০ জন প্রার্থী প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েছেন। মহাজোটের শরিক জাতীয়পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ লাঙ্গল প্রতীক এবং ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে অংশ নেবেন।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে রেলপথ মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী নৌকা ও ২০ দলীয় জোটে বিএনপি নেতা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সিকদার ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েছেন। এছাড়া ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের আবদুল আলী-হাত পাখা প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন।

চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে মহাজোটের মনোনীতি আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ নৌকা এবং ২০ দলীয় জোটে এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি মো. নুরুল আলম ছাতা প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েছেন। এ আসনে মোট ৬ জন প্রার্থী প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েছেন।

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে মহাজোটের শরিক জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল নৌকা এবং ২০ দলীয় জোটে মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি আবু সুফিয়ান ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এবারের ভোটযুদ্ধে লড়াই করবেন। এ আসন থেকে মোট ৯ জন প্রার্থী প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েছে।

চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে ৮জন প্রার্থী প্রতীক পেয়েছেন। মহাজোটে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল নৌকা প্রতীক এবং মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে লড়াই করে আগামী সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবেন।

চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী-হালিশহর-খুলশী) আসনে মহাজোটে সাবেক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের ডা. আফসারুল আমীন নৌকা এবং ২০ দলীয় জোটে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ধানের শীষ প্রতীকে যুদ্ধ করবেন। এ আসনে ৮জন প্রার্থী প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েছে।

চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, ইপিজেড ও সদরঘাট) আসনে ৭ জন প্রার্থী প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েছেন। ২০ দলীয় জোটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ধানের শীষ এবং বর্তমান সাংসদ ও মহাজোটের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এমএ লতিফ নৌকা প্রতীক বরাদ্ধ নিয়ে সোমবার রাত থেকে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়ছেন।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও দুইবারের সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী-নৌকা এবং ২০ দলীয় জোটে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এনামুল হক এনাম ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েছেন। এ আসন থেকে মোট ৮ জন প্রার্থী প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েছেন।

চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে ভূমি প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ নৌকা প্রতীক এবং সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির সরওয়ার জামাল নিজাম-ধানের শীষ এবং বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের এমএ মতিন-মোমবাতি প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েছেন। মোট ৮ জন প্রার্থী এ আসনে ভোট যুদ্ধে অংশ নেবেন।

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনে মহাজোটে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী নৌকা এবং ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম ছাতা প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েছেন। মোট ৯জন প্রার্থী এ আসনে ভোটের মাঠে যুদ্ধ করবেন। চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) আসনে মহাজোটে আওয়ামী লীগের আবু রেজা মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন নদভী নৌকা এবং ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতের নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েছেন। এছাড়া এ আসনে আরো তিন প্রার্থী প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েছেন।

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে ২০ দলীয় জোটের দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী পেয়েছেন ধানের শীষ প্রতীক এবং মহাজোটের বর্তমান সাংসদ মোস্তফিজুর রহমান চৌধুরী বরাদ্ধ পেয়েছেন নৌকা প্রতীক। মোট ৯ প্রার্থী এ আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করছেন।