“যারা সন্তুষ্ট হতে পারেনা তারা বড়লোকও হতে পারে না”
মনজুরুল হকঃ সেদিন হরতাল ছিল। গাড়ি নিয়ে বের হই নাই। আমার অফিস থেকে কালুরঘাট শিল্প এলাকায় যাব, আপ ডাউন সিএনজি টেক্সি নিলাম, রাস্তাঘাটে তেমন গাড়ি ছিলনা তাই খুব তাড়াতাড়ি পৌছে গেলাম। গিয়ে কাজ শেষ করতে করতে অনেক দেরি হয়ে গেল, ১০ মিনিটের কাজ কিন্তু আড্ডা দিতে গিয়ে প্রায় ২ ঘন্টারও বেশি সময় লেগে গেল।।
সিএনজি ড্রাইভারের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম, প্রায় দুই আড়াই ঘণ্টা পর যখন বের হই তখন সাংঘাতিক বৃষ্টি, ড্রাইভারকে দেখে খুব লজ্জা পেয়ে কি বলব বুঝছিলাম না। খুব লজ্জিত ভাবে সরি বললাম, সে হেসে বল্ল স্যার কিছু হবেনা, আমি বুঝছি আপনি কাজে আটকে গেছেন, ওর হাসি মুখটা দেখে মনটা অনেক ভাল হয়ে গেল।।
কথা না বাড়িয়ে রওনা দিয়ে দিলাম, বৃষ্টির জন্য সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছিলনা, চারপাশে প্লাস্টিকের পর্দাগুলো নামানো, ঝুম বৃষ্টি এবং ভাঙা রাস্তা সব মিলিয়ে খুব অদ্ভুত একটা অবস্থা, কিভাবে ফ্যাক্টরি পর্যন্ত পৌছাব সেটা নিয়ে খুব চিন্তিত থাকলেও এটা ভেবে সান্ত্বনা পাচ্ছিলাম যে বৃষ্টির কারণে অন্তত পিকেটারদের এবং পেট্রল বোমার কোন ভয় নাই।
ওসমানিয়া গ্লাস ফ্যাক্টরি পর্যন্ত আসার পর হঠাৎ গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়, রাস্তাঘাট পুরা ফাকা, বৃষ্টিও থামার কোন লক্ষন নাই, কি করব বুঝতে পারছিলামনা।।
টেক্সির ভিতর অসহায় অবস্থায় বসে আছি, সিএনজি ওয়ালাকে বললাম আমাকে একটা গাড়ি ঠিক করে দিতে, বেচারা কিছুক্ষন চেষ্টা করল, চেষ্টা করতে গিয়ে বেচারা ভিজেই গেল, দেখে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল, এমনিতেই ওকে অনেক্ষন বসাই রাখছিলাম।।
অফিসে ফোন করলাম কোন একটা বিকল্প ব্যাবস্থা করার জন্য, অফিস থেকে জানালো পিক আপ বা অন্য কোন ব্যাবস্থা করতেছে।।
আমরা দুইজন টেক্সিতে অসহায় ভাবে বসে ছিলাম, একটু পর ওর সাথে গল্প করা শুরু করে দিলাম, ছেলেটার বয়স বড়জোর ২৪ কি ২৫ হবে, এসএসসি পরীক্ষা চলা কালে বাবা মারা যায়, এরপর আর মাট্রিক পরীক্ষা দেওয়া হয়নি, পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে পড়ালেখা ছেড়ে টেক্সি চালানো শুরু করতে হয়।।
হঠাৎ ট্যাক্সিওয়ালা জিজ্ঞেস করল, স্যার কি করেন আপনি?
আমি মজা করে বললাম, এইতো তোমার টেক্সিতে আটকে বসে আছি।।
ও হেসে ফেলল, হেসে বল্ল, না স্যার আমি অইটা বলিনাই, আমি বলছি, আমি যেমন টেক্সি চালাই, আপনি কি করেন??
বললাম ব্যাবসা করি।।
সে একটু চুপ করে থেকে বল্ল, স্যার আপনি অনেক বড়লোক, তাই না স্যার??
আমি ওর কথা শুনে হ্যা না কিছু না বলে শুধু বললাম আমরা যার যার জায়গায় সবাই বড়লোক, তোমার জায়গায় তুমিও বড় লোক, নির্ভর করতেছে তোমার যা আছে তা নিয়ে তুমি সন্তুষ্ট কিনা।
সাথে সাথে সেও আমার সাথে একমত হয়ে বল্ল, স্যার আপনি আসলে সত্যি কথাটাই বলছেন, যেমন আমার নিজের কাছে নিজেকে বড়লোক মনে হয়, স্যার আমার ব্যাংক এ কোন লোন নাই কোন পাওনাদার নাই সুতরাং আমার কোন টেনশনও নাই, কামাইতে বের হই ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, কামাই ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা, আবার সময়ে ভাগ্য ভাল থাকলে ২০০০ টাকা, স্যার তাইলে বলেন, আমি বড়লোক কিনা?
আমি সাথে সাথে বললাম অবশ্যই তুমি বড়লোক, এবং তুমি আমাদের অনেকের থেকে অনেক বেশি বড়লোক কারন তোমার যা আছে তাই নিয়েই তুমি সন্তুষ্ট।।
আর আমরা যারা আমাদের নিজেদের যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট না তারা কখনোই বড়লোক হতে পারবনা, যারা সন্তুষ্ট হতে পারেনা তারা বড়লোকও হতে পারে না। এবং বড়লোক হওয়ার চেষ্টা করতে করতে কখন যে আমারা জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পৌছে যাই আমরা নিজেরাই বুঝতে পারিনা।
এরমধ্যে আমার অফিস থেকে পিকআপ আসছে আমাকে নেওয়ার জন্য, ভাড়া দিয়ে আমি আমার পিকআপে উঠে বসলাম, কিন্তু সিএনজি ড্রাইভারের কথাগুলো মাথায় ঘুরতে থাকে।।
আমি নিজের যা আছে তা নিয়ে সবসময় সন্তুষ্ট থাকি কিন্তু আবারো আমি নিজের সাথে নিজে নতুন করে শপথ নিলাম কখনো বড়লোক হওয়ার দৌড়ে সামিল না হয়ে নিজের যা আছে তা নিয়েই সবসময় সন্তুষ্ট থাকব।।
ফেইসবুকের পোষ্টটি নিচে সংযুক্ত করা হলোঃ
সেদিন হরতাল ছিল। গাড়ি নিয়ে বের হই নাই।
আমার অফিস থেকে কালুরঘাট শিল্প এলাকায় যাব, আপ ডাউন সিএনজি টেক্সি নিলাম, রাস্তাঘাট…
Posted by Monjurul Hoque on Saturday, 20 August 2016
Vogoban buddher ekta bani ache oti lovey tati nosto otai
Yes
Np
.
Gd
আপনার কথাটা ভুল…
যারা সন্তুষ্ট থাকে
তারা গরিব হয়েও সন্তুষ্ট থাকে।
লেখাটাতে তাই লেখা ছিলো, আপনি পড়লে বুঝতে পারতেন
ভাইয়া আপনি কথাটা মনে হয় ভালোভাবে বুঝতে পারেন নি।
যারা সন্তুষ্ট হতে পারে না তারা কখনো মনের দিক থেকে বড়লোক হতে পারে না
যেই ব্যাক্তি পাখা আবিস্কার করছে
সেই ব্যাক্তি যদি গরমে সন্তুষ্ট থাকতো
তাহলে আর পাখা আবিস্কার হতো না।
তার কাছে গরম ভাললাগেনি বলেই
গরম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই পাখা আবিস্কার করছে
শিরোনাম দেখেই মন্তব্য! পুরো লেখা পড়েন আগে
Right.
Right