অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

কারাগারে শামশুল, মাঠে চষে বেড়াচ্ছে নদভী

0
.

আর একা নয় নদভী। শেষ মহূর্তের প্রচারণায় শ্লোগানে ভাসছে চট্টগ্রাম -১৫ আসনের এলাকা লোহাগড়া ও সাতকানিয়া। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত কয়েক বছর ধরে চলে আসা বিরোধ অবসান হয়েছে সাতকানিয়া লোহাগাড়া দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের সাথে সাংসদ প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর। নৌকার প্রার্থী নদভীকে জেতাতে একাট্টা হয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে ২০ দলীয় জোট থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির আ ন ম শামসুল ইসলাম। শামসুল ইসলাম ভাংচুর ও নাশকতা মামলায় আসামি হয়ে গত কয়েক মাস ধরে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি আছেন।

জানা গেছে, একাধিক গ্রুপে বিভক্ত ছিলো সাতকানিয়া লোহাগাড়া আওয়ামী লীগ। সাংসদ নদভীর সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দৌরাত্ম শুরু হয় ২০১৬ সাল থেকেই। এরপর নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়ে। তখন থেকেই দলের কর্মসূচীও আলাদা ভাবে পালিত হয়ে আসছিল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেতে ফরম কিনে ছিলেন ১৮ জন প্রার্থী। তার মধ্যে প্রচারণায় ছিলেন সাতজন। শেষ পর্যন্ত দল থেকে বর্তমান সাংসদ প্রফেসর ড. আবু রেজা নদভীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাদশ নির্বাচনে নৌকা প্র্রতীকের প্রার্থী হিসাবে নদভীকে মনোনয়ন দেয়ার পর বদলে যায় এখানকার পরিস্থিতি। সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এক কাতারে এসে মিলিত হয়েছে নদভীর সাথে।

সম্প্রতি আবু রেজা নদভী স্থানীয় আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের জামালখানে দাওয়াত রেষ্টুরেন্টে একটি মতবিনিময় সভা করেন। সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী সভায় বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী আবু রেজা নদভীকে বিজয় করার জন্য আমরা সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। তৃণমূল নেতাকর্মীরাও নদভীর পক্ষে কাজ করবে। এখন নৌকা প্রতীকের পক্ষে সবাই। দলের ভেতরে কোন বিরোধ নেই। আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিজয় করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে দলের সকল নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে ২০ দলীয় জোট থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির আ ন ম শামসুল ইসলাম। শামসুল ইসলাম ভাংচুর ও নাশকতা মামলায় আসামি হয়ে গত কয়েক মাস ধরে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি আছেন। জানা যায়, এই আসনটি জামায়াতের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিতি হওয়ায় এখানে রয়েছে কর্মী-সমর্থক।

তবে বর্তমান সাংসদ প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর উন্নয়ন কর্মকান্ডে নদভীর জনসমর্থনও বেশি। তিনি সরকারি উন্নয়নের বাইরে নিজের পরিচালিত আল্লামা ফজুলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেও এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। পাশাপাশি তার সহধর্মিনী কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য রিজিয়া রেজা চৌধুরী নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে দলে কর্মী-সমর্থক বাড়িয়েছেন। স্বামীকে আবারও নির্বাচিত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বিগত ২০১৩-১৪ সালে সাতকানিয়া লোহাগাড়ায় মহাসড়কসহ একাধিক স্থানে ব্যাপক নাশকতা চালিয়েছিল জামায়াত-শিবিরের কর্মী-সমর্থকরা। ওই সময় পুলিশের দায়ের করা মামলায় বেশ কিছু জামায়াত বিএনপির লোক গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। পরবর্তীতে তারা জামিনে বেরিয়ে গা ঢাকা দেন। এতে গত কয়েক বছর ধরে জামায়াত-শিবিরের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এ আসনটি নিজেদের দখলে রাখতে প্রতিবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দল জামায়াতের উপর বেশি নির্ভরশীল। জামায়াতের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মনে করেন শত প্রতিকুলতার মাঝেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন এবং শেষ পর্যন্ত লড়াই করে তাদের প্রার্থীকে বিজয় করবেন। অন্যদিকে আওয়ামী লাগের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, বিগত ৫ বছরে ব্যাপক উন্নয়নের ফলে জনগন নৌকা প্রতীককে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন।

এছাড়াও এ আসনে আরও প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নুরুল আলম (হাতপাখা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফজলুল হক (আম) ও গণফোরামের আব্দুল মোমেন (উদীয়মান সূর্য)।

প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনের মোট ভোটার ৪,৬৬,১৭২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২,৩২,৭৭৫ জন এবং নারী ভোটার ২,৩৩,৩৯৭ জন।

১৯৭৩ সালের পর ২০১৪ সালে প্রথমবার এ আসনে জয় পায় আওয়ামী লীগ। ১৯৯১ সালের ভোটে চট্টগ্রাম-১৫ আসনে তৎকালীন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আখতারুজ্জিামান চৌধুরী বাবুকে হারিয়ে জয়লাভ করেন জামায়াতের শাহজাহান চৌধুরী। তবে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে শাহজাহান চৌধুরীকে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে নেন বিএনপির কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। ২০০১ সালে কর্নেল অলি ও শাহজাহান চৌধুরী দু’জনই চারদলীয় জোটের মনোনয়ন চান। শেষ পর্যন্ত দু’জনই ভোটের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। অলি ও আওয়ামী লীগের জাফর আহমদকে হারিয়ে শেষ হাসি হাসেন শাহজাহান চৌধুরী।

২০০৮ সালের নির্বাচনে অলিকে হারিয়ে জয়লাভ করেন জামায়াতের আ ন ম সামশুল ইসলাম। ওই নির্বাচনে সামশুল ইসলাম পান ১ লাখ ২০ হাজার ৩৩৯ ভোট ও এলডিপির কর্নেল অলি পান ৬৩ হাজার ৪১২ ভোট। আওয়ামী লীগ হয় তৃতীয়।

২০১৪ সালের ৫ জানুযারির নির্বাচনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী বলেন, নৌকার বিজয় হবে ইনশাল্লাহ। স্থানয়ি আওয়ামীলীগ একাট্টা হয়ে নৌকার হয়ে কাজ করছে। আর ভোটাররা আমার বিগত দিনের উন্নয়ূন কর্মকান্ড মূল্যৗায়ন করে আমাকে ভোট দিবে,ন এটি আশা করছি। নির্বাচনে নৌকারই বিজয় হবে জানান নদভী।