অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

“সোহেল চাঁদাবাজ ছিল না, পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে”

0
.

চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী বাজারে গণ পিটুনীতে নিহত মহিউদ্দিন সোহেল চাঁদাবাজ ছিলেন না। তিনি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার বলে দাবী করেছেন তার পরিবার।

আজ মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবী করে পরিবারের সদস্যরা বলেন, ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন সোহেল চাঁদাবাজ ছিলেন না। তার জন্মস্থান পাহাড়তলীকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত করতে গিয়ে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।’ অথচ উল্টো তাকে চাঁদাবাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছে মিডিয়া।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নিহত সোহেলের ছোট ভাই শাকিরুল ইসলাম শিশির ‘আমার ভাই চাঁদাবাজ না’ বলে বলে আহাজারি করেন। সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।

শাকিরুল ইসলাম শিশির বলেন, মহিউদ্দিন সোহেল দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতি এবং কেন্দ্রীয় রাজনীতির পাশাপাশি একজন ঠিকাদার ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি ঢাকায় ছিলেন। গত বছর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের পরামর্শে চট্টগ্রামে ফিরে আসেন। তার জন্মস্থান পাহাড়তলীকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত করার জন্য ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দিশারী ক্লাবকে পুনরায় সংগঠিত করেন। স্থানীয় কয়েকটি মাদকের আখড়া ভেঙে দেন। স্থানীয় কাউন্সিলর সাবের আহমদ সওদাগরের নেতৃত্বে ও স্থানীয় জাতীয় পার্টি নেতা ওসমান খানের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা অনৈতিক ব্যবসার আখড়া ভেঙে দিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর জন্য জানাযার নামাজের মাঠ নির্মাণ করে দেন। এমন অনেক উদ্যোগ নেওয়ার কারণে স্থানীয় ভূমিদস্যু, মাদক ব্যবসায়ী এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের রোষানলে পড়েন।

এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন মহিউদ্দিন সোহেলের বাবা, মা, স্ত্রী ও স্বজনরা। বারবার মায়ের অশ্রু মুছে দিচ্ছিলেন মহিউদ্দিন সোহেলের ছোট্ট শিশু ফাইয়াজ তাজওয়ার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহিউদ্দিন সোহেলের বাবা আবদুল বারেক, মা ফিরোজা বেগম ও স্ত্রী নিগার সুলতানা, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শওকত বাঙালি ও তার সহযোদ্ধা সাজ্জাদ হোসেন। এছাড়া ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মহিউদ্দিন সোহেলের নামে কোন থানায় মামলাতো দূরের কথা, জিডি পর্যন্ত নেই। সেই মহিউদ্দিন সোহেলকে পরিকল্পিতভাবে এক শ্রেণির ঘৃণ্য নরপশুরা শুধু হত্যা করেই শান্ত হননি, তাকে চাঁদাবাজ তকমা দিয়ে তার সারা জীবনের শুদ্ধ রাজনৈতিক চর্চাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। যেকোন সচেতন নাগরিক অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন, জিডি করেন, মামলা করেন। অথচ তার নামে কিছু না থাকার পরও তাকে চাঁদাবাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। গণপিটুনিতে যদি মহিউদ্দিন নিহত হয় তাহলে তার গায়ে ২৬টি ছুরির আঘাত কেন?

যে কক্ষগুলো দখল করে মহিউদ্দিন সোহেল কার্যালয় করেছেন, সেগুলো রেলওয়ের কাছ থেকে লিজ নিয়েছেন বলে দাবি পরিবারের।

এদিকে এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ডবলমুরিং থানায় মামলা দায়ের হয়নি। গ্রেফতার হয়নি কোন আসামিও।

তবে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে না বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

শিশির বলেন, মামলা করে তো ভাইকে ফিরে পাবো না। আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম। তবে আমার ভাই চাঁদাবাজ না।

ডবলমুরিং থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের জন্য অপেক্ষা করছি। তারা মামলা না করলে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করবে। কি কারণে এ হত্যাকাণ্ড তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এর আগে সোমবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী বাজার ও রেলওয়ে কলোনী এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং চাঁদাবাজির জের ধরে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মহিউদ্দিন সোহেলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। বাজারের ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, সোহেলের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে ব্যবসায়ীরা তাকে গণপিটুনি দিয়েছে। এতে তার মৃত্যু হয়েছে।