অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

‘আল্লামা শফির বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে ইসলাম বিরুদ্ধ’

0
.

শুক্রবার এক মাহফিলে মেয়েদের স্কুল-কলেজে না পড়াতে এবং পড়ালেও সর্বোচ্চ ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ানোর জন্য উপস্থিত মুসল্লীদের ওয়াদা করান হেফাজত ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তারই প্রতিক্রিয়ায় আজ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেছেন, ‘আল্লামা শফির দেয়া বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে ইসলাম বিরুদ্ধ কথা। ইসলাম সকল নারী পুরুষের ওপর জ্ঞান শিক্ষা ফরজ করেছে। সেখানে বলেনি যে কাউকে ফোর পর্যন্ত বা কাউকে সিক্স পর্যন্ত পড়তে হবে।’

তিনি বলেন, ‘পরিবেশের জন্য যদি কোন ছেলে মেয়ের জীবন, চরিত্র নষ্ট হয়, সেগুলো হলো পরিবেশের কারণে। কিন্তু শিক্ষা করতে পারবে না এ কথাটা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরুদ্ধ কথা। ইসলাম প্রত্যেক নারী পুরুষকে জ্ঞান শিক্ষা ফরজ করেছে, যেটি নবীজী বলেছেন। কুরআনের প্রথম বাণীই ছিল ‘পড়’।

অধ্যাপক আব্দুর রশীদ বলেন, ‘আমাদেরকে পরিবেশ দিতে হবে। উনি যে কথাগুলো বললেন তাতে আমার মনে হয়েছে, মাথা ব্যাথা হলে মাথাটা কেটে ফেলতে হবে।

হ্যাঁ, আমাদের সমাজে দুই-একটা ঘটনা ঘটছে। তার সংখ্যা হয়তোবা ক্রমান্বয়ে বাড়ছেও। আমার প্রশ্ন, আল্লামা শফিরা এতো বড় জ্ঞানী গুণীরা এ সমাজে থাকতে এ সমাজে এসব হবে কেন? রাসূলতো বলেছেন, আমার প্রচারিত ইসলাম দ্বারা একজন যুবতী নারী দুনিয়ার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু তার সম্পদ ও সম্ভ্রম কোনটারই আশংকা থাকবে না এবং এটাই রাসূলের জীবন থেকে শুরু করে চার’শ বছর পর্যন্ত ইসলামী বিশ্বে নিশ্চিত ছিল।’

তিনি বলেন, ‘সমাজে এখন যে সমস্যা হচ্ছে এর জন্যতো আমরাই দায়ী। আমরাতো এদেরকে (নারী) সেভ করতে পারছি না। যে সমাজে আল্লাম শফিরা আছেন, সে সমাজে এমনটা কেন হবে যে একটা মেয়ের হাত ধরে টান দিবে, অসম্মান করবে। এ জন্য বলছি যে পরিবেশের কারণে আমরা তাদের শিক্ষা বন্ধ করে দিতে পারিনা। কারণ মাথা ব্যাথা হলে আমরা মাথাটাকে কেটে ফেলতে পারি না, মাথায় ব্যাথার ঔষধ দিতে হয়।’
এই ইসলামিক স্কলারের মতে, আল্লামা শফির বক্তব্য কোনভাবেই ঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের পড়াশোনা ইসলামিক শিক্ষায় কাউকে নিষেধ করেনি। সবাইকে শিখতে হবে। শিখলেই কেবল দ্বীন-ধর্ম শিখা যাবে। মানুষ সুন্দর হবে, সামাজিক হবে। আল্লাহকে আল্লাহর রাসূলকে জানতে পারবে। কিন্তু পরিবেশ আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। যে পরিবেশ এর কারণে আমাদের মেয়েরা লাঞ্ছিত হয়, নির্যাতিত হয়, নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয় সে পরিবেশ আমাদের তৈরি করতে হবে।’

এর আগে শুক্রবার জুমার নামাজের পর চট্টগ্রামের আল জমিআতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে মাদরাসার বার্ষিক মাহফিল ও দস্তারবন্দি সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ওয়াজ (বক্তব্য) করার সময় উপস্থিত লোকজনকে তাদের মেয়েদেরকে স্কুল-কলেজে না পড়াতে এবং পড়ালেও সর্বোচ্চ ক্লাস ফোর বা ফাইভ পর্যন্ত পড়ানোর জন্য ওয়াদা করিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফি।

এ সময় মাহফিলে উপস্থিত ১৫ হাজারের অধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ হাত তুলে ওয়াদা করেন।

শাহ আহমদ শফি বক্তব্যে বলেন, আপনাদের মেয়েদের স্কুল-কলেজে দেবেন না। ক্লাস ফোর বা ফাইভ পর্যন্ত পড়াতে পারবেন। আর বেশি যদি পড়ান…, পত্র-পত্রিকায় তো দেখতেছেন। মেয়েকে ক্লাস এইট, নাইন, টেন, এমএ, বিএ পর্যন্ত পড়ালে ওই মেয়ে কিছুদিন পর আপনার মেয়ে থাকবে না। বেশি পড়ালে আপনার মেয়েকে টানাটানি করে অন্য পুরুষ নিয়ে যাবে।