অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রামের ঘটনা মনে করিয়ে দিল ভারতের সেই ‘ভূপাল’ ট্রাজেডিকে

1
চট্টগ্রামের ঘটনা মনে করিয়ে দিল সেই 'ভূপাল' ট্রাজেডিকে

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ডিএমপি সার কারখানার অ্যামোনিয়া সংরক্ষণের ট্যাংক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাতের এই ঘটনায় অর্ধশতাধিক মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রাতেই জেলা প্রসাশক মেজবাহ উদ্দিন জানান, মানুষ মূলত শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসছিলেন। চট্টগ্রামের এই বিস্ফোরণের ঘটনা মনে করিয়ে দেয় ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বরে ভারতের ভূপালে ঘটা এক ভয়াবহ রাসায়নিক কারখানায় বিস্ফোরণের কথা। যে বিস্ফোরণের ক্ষতিকর মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ে ওই দিনই প্রাণ হারান সাড়ে ৩ হাজার মানুষ। পরবর্তীতে আরও কয়েক হাজার মানুষ গ্যাসের বিষক্রিয়ায় ধুঁকে ধুঁকে মারা যান। তবে হিসাবের বাইরে রয়ে যান ভূপালের আরও অনেক বাসিন্দা। যাদের শরীরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গ্যাসের বিষক্রিয়া থেকে যায়।

ভারতের মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভূপাল। ১৯৮৪ সালের ২ ডিসেম্বর দিবাগত রাত এবং ৩ ডিসেম্বরের প্রথম প্রহরে মার্কিন মালিকানাধীন ইউনিয়ন কার্বাইড কীটনাশক কারখানার ভূর্গভস্থ মজুত ট্যাংক ফেটে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৯ লক্ষাধিক বাসিন্দার ঘনবসতির শহর ভূপালের আকাশে ছড়িয়ে পড়ে মারণাত্মক রাসয়নিকের মেঘ। ২০০৬ সালের দিকে সরকারি এক হলফনামায় বলা হয়, প্রায় ৫ লক্ষ ৫৮ হাজার ১২৫ জন মানুষ এই বিপর্যয়ের শিকার হয়। প্রায় ৩৮ হাজার ৪৭৮ জন সাময়িকভাবে এবং ৩ হাজার ৯০০ জন স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যায়। তবে সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বলা হয়, ওই বির্পযয়ে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল।

কী ঘটেছিল ৩ ডিসেম্বর?

রাত ১২টার পর: ভূপালের বেশিরভাগ বাসিন্দা আর পাঁচটা রাতের মতই তখন গভীর ঘুমে। ১৯৬৯ সালে তৈরি কারখানাটি চরম বিপদজনক রাসয়নিক মিথাইল আইসোসায়ানেট ব্যবহার করে ওইদিনও কীটনাশক উৎপাদন করছে। ভূপালের ওই কারখানার গায়ে লাগোয়া বস্তিগুলোতে ছিল বহু মানুষের বাস। কাছেই ভূপাল শহরের পুরনো এলাকাতেও থাকে হাজার হাজার মানুষ।

রাত প্রায় একটার দিকে পার্শ্ববর্তী কিছু বস্তিবাসীর প্রথম নাকে আসে একটা দুর্গন্ধ- এরপর তাদের চোখ জ্বলতে শুরু করে। অবস্থা আরও খারাপের দিকে মোড় নেয় – গন্ধ আরও জোরালো হয়ে ওঠে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এদের অনেকে আবার বমি করতে শুরু করে।

এরপর দেখা যায় অনেক মানুষ মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে, কারও মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে শহর ও শহরতলিতে ভীতি ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে শুরু কর। ওই দিন বেঁচে যাওয়া অনেকে বলেছেন, মানুষের পাশাপাশি রাস্তার ওপর হাজার হাজার মরা বিড়াল, কুকুর, গরু এবং পাখির স্তুপ পড়ে ছিল।

৩১ বছর আগের ভয়াবহ সেই গ্যাস দুর্ঘটনার ক্ষতিকর প্রভাব এখনও বেঁচে যাওয়া স্থানীয়দের শরীরে। ভূপাল বিপর্যয় নিয়ে আন্দোলনকারী এবং ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে কাজ করছেন যারা তারা দাবি করছেন, ওই ঘটনার শিকার দেড় লাখ মানুষ ক্যান্সার, অন্ধত্ব, যকৃৎ ও কিডনির নানা অসুখে ভুগছেন। তাদের প্রকাশিত নানা প্রতিবেদনে তারা তুলে ধরেছেন ভূপালের শিশুরা নানাধরনের জন্মগত পঙ্গুত্বের শিকার- ওই বিপর্যয়ের পর জন্ম নেওয়া শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়নি- তাদের অনেকে ক্যান্সার ও নানা জটিল রোগে ভুগছে।

ভূপালের সেই ইউনিয়ন কার্বাইডের কারখানা এখন পরিত্যক্ত। ১৯৮৪ সালের ভয়াবহ সেই বিস্ফোরণের ১৪ বছর পর মধ্যপ্রদেশের সরকার ১৯৯৮ সালে ওই কারখানার নিয়ন্ত্রণ নেয়। সূত্র: বিডি প্রতিদিন/ইন্টারনেট

১ টি মন্তব্য
  1. Diluwara Haque বলেছেন

    কাল রাত থেকে শুধূ ওটাই মনে হচ্ছিল