অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র গাছের তালিকায় রয়েছে গাঁজা

0
.

বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র বলে মনে হয় এরকম সাতটি গাছের তালিকা করেছেন জর্জ হ্যারিসন-কন্যা সঙ্গীত শিল্পী জাহ্নবী হ্যারিসন। সেই তালিকায় স্থান পেয়েছে পদ্মফুল থেকে শুরু করে পুদিনাপাতাও। পবিত্র গাছের তালিকায় রয়েছে গাঁজা গাছও!

১. পদ্ম ফুল

প্রাচ্যের ধর্মীয় শিক্ষা বা সংস্কারে পদ্ম ফুলের রয়েছে বিভিন্ন অর্থ। হিন্দুদের কাছে এই ফুলটি জীবন, উর্বরতা আর পবিত্রতার প্রতীক। বৌদ্ধরাও ফুলটিকে পবিত্র বলে মনে করে। কাদা ও ময়লার ওপর জন্ম নেয়া এই সুন্দর ফুলটি নির্লিপ্ততারও প্রতীক। গল্পগাঁথাও আছে, ভগবান বিষ্ণুর নাভির ভেতর থেকে পদ্মের জন্ম আর ব্রহ্মা’র কেন্দ্রে বসে থাকেন। অনেকের বিশ্বাস, ঈশ্বরের হাত আর পা পদ্ম ফুলের মতো এবং চোখ ফুলের পাপড়ির মতো। হিন্দু ধর্মে বলা হয়, প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই পদ্মের পবিত্র আত্মা রয়েছে।

২. মিসলটো

প্রাচীন সেল্টিক যাজকদের ধর্মীয় অনুসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ছিল মিসলটো। বর্তমান কালে মিসলটো ক্রিসমাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসাবে বিবেচিত হয়। কিন্তু প্রাচীন সেল্টিক ধর্মীয় নেতাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল এই উদ্ভিদ। তারা বিশ্বাস করতো, সূর্য দেবতা টারানিসের সংস্পর্শ রয়েছে মিসলটোর মধ্যে, ফলে যে গাছে মিসলটো জন্ম নেবে বা যে ডালে সেটি ছড়াবে, সেটিও পবিত্র বলে বিবেচিত হবে।

বিশ্বাস করা হতো এর জাদুকরী ক্ষমতা রয়েছে। মিসলটোর একটি অংশই রোগ সারাতে পারে, যেকোনো বিষের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে, মানব শরীরে উর্বরতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং ডাইনির ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।

তবে সত্য হল, এটা পুরোটাই ভুল ধারণা। উল্টা পেটে গেলে মিসলটো বিষাক্ত হয়ে ওঠে।

৩. পেয়টে

পেয়টে হলো ছোট, কাণ্ডহীন একপ্রকার ক্যাকটাস, যেটি টেক্সাস এবং মেক্সিকোর মরুভূমিতে জন্মে থাকে। সহস্রকাল ধরে প্রাচীন গোত্র বা আদিবাসী মানুষজন এই গাছটিতে তাদের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে আসছে। মেক্সিকোর হুইকোল ইন্ডিয়ান আর অনেক আদিবাসী আমেরিকান গোত্র বিশ্বাস করতো যে, পেয়টে একটি পবিত্র উদ্ভিদ যা তাদের ঈশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগে সাহায্য করবে।

৪. তুলসী

হিন্দু ধর্মে বলা হয়, কৃষ্ণ এবং তার ভক্তদের সেবা করার জন্য বৃন্দাবনের একজন অভিভাবক হিসাবে দেবী বিরিন্দাই তুলসী পাতা হিসাবে জন্ম নেন। আবার প্রাচীন গ্রন্থে বলা হয়, কৃষ্ণ নিজেই তাকে তুলসী আকারে গ্রহণ করেছেন। ফলে যেখানেই এই গাছটির জন্ম হোক না কেন, সেটিকে বৃন্দাবনের মাটি বলেই পবিত্র মনে করা হয়। সারা পৃথিবী জুড়ে হিন্দুরা তাদের প্রতিদিনের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে, মন্দিরে বা বাসায়, তুলসী গাছের পাতা ব্যবহার করেন।

৫. ইয়ু গাছ

সারা বছর ধরে সবুজ থাকে এমন একটি দেবদারু জাতের গাছ ইয়ু, যা বেঁচে থাকে হাজার বছর ধরে। এই গাছের ভেঙে বা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ডালপালা থেকে নতুন গাছের জন্ম হয়। এমনকি পুরনো গাছের গুঁড়ির ভেতর থেকেও নতুন একটি ইয়ু গাছের জন্ম হতে পারে, তাই অনেকে একে পুনর্জন্মের উদাহরণ হিসাবেও মনে করেন। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে ইয়ু একটি প্রতীকী গাছ- মারা যাওয়া স্বজনদের কফিনে ইয়ু গাছের অঙ্কুর দেয়া হয় এবং অনেক চার্চের পাশে এই গাছটি দেখা যায়।

খ্রিস্টান ধর্মেরও আগে থেকে অনেক আদিবাসী গোষ্ঠী এই গাছটিকে পূজা করে আসছে। তারা সেসব স্থানে তাদের প্রার্থনা কেন্দ্র নির্বাচন করতো, যেখানে আগে থেকেই ইয়ু গাছ রয়েছে।

৬. গাঁজা

রাস্তাফারি ধর্মীয় গোষ্ঠীর কাছে গাঁজার রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা বিশ্বাস করে, বাইবেলে যে জীবনের গাছের কথা বলা হয়েছে, গাঁজা গাছ হচ্ছে সেই গাছ, তাই এটি পবিত্র। এই ধর্মের লোকজন এটিকে তাই ‘পবিত্র ভেষজ’ বলে ডেকে থাকে। এই ভেষজ না কি তাদের ঈশ্বরের কাছাকাছি নিয়ে যায় আর তাদের ভেতরের আধ্যাত্মিক শক্তিকে বাড়িয়ে দেয়। তাদের ভাষায় এই জ্ঞান উদ্ভিদ অনেক রীতিনীতির সঙ্গে গ্রহণ করা হয়। সিগারেট বা পাইপের ভেতর ঢুকিয়ে এর ধোয়া নিতে নিতে পালন করা হয় নানা ধর্মীয় আচার।

৭. পুদিনা

অর্থোডক্স খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে এবং গ্রিক চার্চে পুদিনা একটি পবিত্র ভেষজ হিসেবে গণ্য করা হয়। পুদিনা ইংরেজি নাম ‘বাসিল’ এসেছে গ্রিক শব্দ ‘রাজকীয়’ থেকে।

অর্থোডক্স খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করেন, যেখানে যিশু খৃস্টের রক্ত পড়েছিল, সেখানেই এই গাছটির জন্ম হয়েছিল। এ কারণেই খৃষ্ট ধর্মের অনেক অনুষ্ঠানে পুদিনা পাতার উপস্থিতি দেখা যায়। পবিত্র পানি পরিশোধন করতে যাজকরা পুদিনা পাতার ব্যবহার করেন এবং ধর্মসভায় পুদিনা গাছ ভেজানো পানি ছিটানো হয়। চার্চের বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ক্রসের সঙ্গে পুদিনা গাছ থাকে এবং ছোট ছোট ডালপালা হাতে হাতে দিয়ে দেয়া হয়।

অনেকে এসব ডালপালা পানিতে ভিজিয়ে রাখেন, যাতে সেটি নতুন শেকড় ছাড়ে, যাতে পরে তারা সেগুলো আশীর্বাদ হিসাবে নিজেদের বাড়িতে লাগিয়ে রাখতে পারেন।