অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

২০১৮ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪,৪৩৯

0
.

২০১৮ সালে বাংলাদেশে ৩ হাজার ১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৪৩৯ জন নিহত এবং ৭ হাজার ৪২৫ জন আহত হয়েছেন।

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে গঠিত সামাজিক আন্দোলন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) এর এক পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার ২০১৮ সালে সড়ক ‍দুর্ঘটনার ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিসংখ্যানের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে মোট ৩ হাজার ১০৩ টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৪ হাজার ৪৩৯। ২০১৭ সালে যে সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৬৪৫। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ২০৬ জন কম ছিল। ২০১৮ সালে মৃত্যুর হার ২০১৭ সালের তুলনায় শতকরা ২১.৩৬ শতাংশ কম হয়েছে।

অন্যদিকে ২০১৮ সালে মোট ৩ হাজার ১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৪২৫ জন লোক আহত হয়েছেন। ২০১৭ সালে ২ হাজার ৩৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিল ৭ হাজার ৯০৮ জন, গত বছর আহতের সংখ্যা ৪৮৩ জন কম হয়েছে। অনেক ছোট ছোট দুর্ঘটনায় আহতদেরকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করা হয়, যা পত্রিকায় প্রকাশ হয় না। এদের মধ্যে অনেকেই আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেন, যা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৮ সালে বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে বড় বড় শহর ও মহাসড়কে। ছোট ছোট অবৈধ যানবাহন যেমন- ভ্যান, রিকশা, নসিমন, অটো রিকশা ইত্যাদিকে এজন্য বেশি দায়ী বলে মনে করা হয়। আইনকে অমান্য করে ধীর গতির বাহন মহাসড়কে এখনও চলাচল করে যা দূরপাল্লার বড় গাড়িগুলোর চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। স্থানীয় প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশকে এ ব্যাপারে তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না। অবৈধ যানবাহনের চলাচলে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতাও আছে বলে প্রতীয়মান হয়। তাছাড়াও এ সমস্ত ধীর গতির গাড়ির হেডলাইট না থাকার কারণে ঘন কুয়াশা ও বৃষ্টিতে দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে। যেখানে ঘন কুয়াশায় লঞ্চ, স্টিমার, নৌকা এমনকি উড়োজাহাজ চলাচলকে বন্ধ করে দেয়া হয় সেখানে কুয়াশায় গাড়ি চালনোর জন্য নির্দিষ্ট গতি নির্ধারণ করা সত্ত্বেও তা মানা হয় না। ২০১৭ সালে বাস দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি থাকলেও ২০১৮ সালে ট্রাক ও কার্ভাড ভ্যান মিলিয়ে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫%।

জেলা ভিত্তিক সড়ক দুর্ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮ সালে ঢাকা ও তার আশপাশে ৩৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৩৪৬, চট্টগ্রামে ১৬৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১৯৯, গাজীপুরে ১২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১০৫, ময়মনসিংহে ১০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১৪৮, বগুড়ায় ১০২টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২৬৩। অতিরিক্ত লোক সংখ্যা, অপর্যাপ্ত রাস্তা, মোটরসাইকেল ও রিকশার আলাদা কোনো লেন না থাকা, শহরের মধ্যে পোশাক কারখানা এবং পথচারীদের নিয়ম না মানার প্রবণতাকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে।

জেব্রা ক্রসিং, ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস থাকা সত্ত্বেও এগুলো দিয়ে পারাপার না হয়ে যত্রতত্র পারাপার, রাস্তায় চলা ও পারাপারের সময় মোবাইল ফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়া সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এছাড়া বড় বড় শহরগুলোতে উল্টোপথে চলাচল একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ঢাকা শহরে সরকারি আমলাদেরকেও নিয়ম বহির্ভূত উল্টোপথে যাতায়াতের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আইন প্রযোগকারী সংস্থাগুলো মাঝে মাঝে উল্টোপথে চলার প্রবণতাকে থামানোর জন্য কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করলেও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োগের অভাবে তা কার্যকরী হয় না।

ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, নিসচা এর উদ্যোগে গাড়ি চালকদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করার কারণে কিছু গাড়ির চালক অতিরিক্ত গতিতে চালানোর প্রবণতা অনেকাংশে কমালেও, ব্যাপকভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান না করার কারণে সকল গাড়ি চালকদের মধ্যে এখনও সচেতনতা বৃদ্ধি পায়নি।