অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কতদুর?

1
921448_1539933552992143_3703130331677893389_o
মুনীর ফারুক

অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে অবশেষে চট্টগ্রামে একটি স্বতন্ত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হতে যাচ্ছে এবং এই ব্যাপারে আইনও পাশ হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ সরকারেরই থাকছে আগের মতোই। চমেবি এর সুবাদে চট্টগ্রাম বিপুল সংখ্যক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পাচ্ছে। আইন পাশ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিল। সবাই আশা করেছিল সরকার মেডিকেল কলেজের জায়গায় হাত না দিয়ে স্বতন্ত্র স্থানে স্থাপনা নির্মাণের কাজে হাত দিবে।

পাশাপাশি মেডিকেল কলেজের অবকাঠামোকে ব্যবহার করে এখনই বিশ্ববিদ্যালয় তার একাডেমিক কাজ শুরু করবে। কিন্তু তা হচ্ছে না। গণপুর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাস থেকে ১৫ একর জায়গা নিয়ে ২০ তলা ভবন নির্মান করে সেখানে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করা হবে।

14080901_1663653087286855_1338198896_n
বর্তমান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

এই ২০ তলা ভবন নির্মাণ করতে কয় বছর লাগবে তার কোন সীমা নির্দিষ্ট করা হয়নি। তিনি মেডিকেল কলেজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও জানেন। প্রায় ১৩০০ রোগীর স্থলে রোগীর সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি হয় বলে তিনি স্বীকার করেছেন। এই সমস্যারও তিনি সমাধান করতে চান বর্তমান হাসপাতাল ভেঙ্গে ২০ তলা ভবন নির্মাণ করে।

বলা যায় মেডিকেল কলেজে ২০ তলা ভবনের সমাহার ঘটবে। বিশতলা কেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও দুইটি হাসপাতাল গড়ে উঠবে। এইসব কবে হবে তা জানা যায়নি। বিশতলা কেন্দ্রিক অসংখ্য ভবন গড়ে উঠার পর প্রশ্ন আসবে এত রোগী -ছাত্র-শিক্ষক- ডাক্তার কোন কোন পথে এই মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকবে। এখন পথতো মাত্র একটি। এই পথটি চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ পথও বটে। মেডিকেল কলেজের সামনে অসহনীয় যান জট নিত্যদিন লেগেই থাকে। এর সমস্যা সমাধানে এরপর হয়তো বলা হবে সরকার এখানে প্রচুর ফ্লাইওভার করে দেবে। ইঞ্জিনিয়াররা হয়তো কোন একটা পথ বের করে ফেলবেন।

তবে এই সবের জন্য প্রচুর সময়ের প্রয়োজন। আশঙ্কা হয় ততদিনে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবনাটা না আবার হিমঘরে চলে যায়। মেডিকেল কলেজের আসল জায়গা ছিল প্রায় ৮৪ একর। ১৯৫৩ সালে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য তৎকালীণ সরকার এই জায়গা বরাদ্ধ দিয়েছিল। গিয়ে থুয়ে এখন আছে ৫৬-৫৮ একর। এখান থেকে ১৫ একর নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে। চিন্তার দৈন্যতাই বটে! ১৫ একর জায়গার উপর একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়! এটি কার স্বার্থ রক্ষা করবে বুঝা দায়। আর চট্টগ্রামের নির্বাচিত প্রতিনিধি মুক্তিযোদ্ধা এবং দেশের গণপুর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কোন স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়টি মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে স্থাপন করছেন তাও বুঝা গেল না। অবশ্য সরকারের সিদ্ধান্ত এমন হলে তাঁর কিছু করার নেই।

মাননীয় মন্ত্রী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজকে পাহাড়-সমতল এবং নদীর মিলন ক্ষেত্র উল্লেখ করে বললেন জায়গাটি খুবই সুন্দর। সন্দেহ নেই মেডিকেল কলেজের জায়গাটি খুবই সুন্দর। তবে এখানে নদীর কোন ষ্পর্শ নেই আছে একটি বড় নালার ষ্পর্শ যা সামান্য বৃষ্টিতেই জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করে। এরপরও বলতে হয় সব দিক বিবেচনায় মেডিকেল কলেজটির অবস্থান একটি ভাল স্থানে। ভাল স্থানে একটি ভাল মেডিকেল কলেজতো আছেই। বিশ্ববিদ্যালয় এখানে কেন? এর চাইতেও ভাল স্থান রয়েছে। ফৌজদার হাট সমতল-পাহাড়ও সাগরের মিলন কেন্দ্র। স্বাস্থ্য বিভাগের জায়গা ছাড়াও রয়েছে পাহাড়ের উপর অবস্থিত কুমিরা রেলওয়ে হাসাপাতাল যা এখন পরিত্যক্ত।

কুমিরা হাসপাতালের জায়গাটিও সরকার নিতে পারে। সব মিলিয়ে বলা যায় ফৌজদারহাট হতে পারে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সবচাইতে উপযুক্ত স্থান। হাটহাজরীর ফতেয়াবাদে ওয়াসার ৫৬ একর জায়গা অব্যবহৃত রয়েছে। চার লেইনের রাস্তা, রেল যোগাযোগ রয়েছে। সেখানেও পাহাড় ও সমতল আছে। সেটাও হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপযুক্ত স্থান। আর মেডিকেল কলেজের স্থানেই যদি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হয় তবে প্রথমেই উচিত ৫৩ সালে রেকর্ড দেখে ৮৪ একর জায়গা উদ্ধার করা।

তাহলে মেডিকেল কলেজের বর্তমান জায়গা দখল না করেই বিশ্ববিদ্যালয়টি হতে পারে। আর ২০ তলা ভবনের চিন্তাও বাদ দেয়া উচিত। ২০ তলা ভবন মানেই বিরতিহীন বিদ্যুত, প্রচুর লিফট। এটা কি সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন? যাক সে সব কথা। এখনই যা প্রয়োজন, তা হলো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টি চালুর ব্যবস্থা করা। কোন ভবন ভাড়া করে, বা মেডিকেল কলেজের কোন অব্যবহৃত স্থাপনা ব্যবহার করে প্রশাসনিক কাজ শুরু করা যায়। এর মাঝে স্থাপনা নির্মাণের পাশাপাশি মেডিকেল কলেজেই একাডেমিক কাজ শুরু করা যায়। তবে মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে আশংকা থাকে বিশ্ববিদ্যালয় আবার মেডিকেল কলেজকে তার স্থান থেকে সরিয়ে দেয় কি না। মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনার কাজ শুরু করে মেডিকেল কলেজকে কেন্দ্র করেই আপাতত বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু যায় কি না তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা ভাবতে পারেন।

লেখক: মুনীর ফারুক, সাংবাদিক।

১ টি মন্তব্য
  1. Sagar Kamal বলেছেন

    কাছেই…..