অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

কর্ণফুলী নদীর পাড়, নোটিশ পেয়েও উচ্ছেদ হয়নি অবৈধ মৎস্য বাজার

0
.

চট্টগ্রামের কর্ণফুলির তীরে একদিকে উচ্ছেদ করা হলেও অন্যদিকে গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা। প্রশাসনে নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রভাবশালী চক্র একের পর এক অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানাগেছে, কর্ণফুলীর তীরে গড়ে উঠা মৎস্য অবতরণকেন্দ্রটি উচ্ছেদে গত ২০/২৫দিন আগে নোটিশ দিয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর আগে অবতরণকেন্দ্রটি অবৈধ এবং সরকারি জায়গায় গড়ে উঠেছে অভিযোগ করে আপত্তি দেয় জেলা প্রশাসক, হাইকোর্টেও রায়ও ছিল ওই এলাকার অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদে। কিন্তু অদৃশ্য এক শক্তির ইশারায় সেখানে গড়ে উঠছে নতুন নতুন স্থাপনা।

কর্ণফুলী নদী ও সংলগ্ন চাক্তাই এবং রাজাখালী খালের মধ্যবর্তী এক লাখ ৭৩ হাজার ২৬৩ বর্গফুট জায়গায় সোনালি যান্ত্রিক মৎস্যশিল্প সমবায় সমিতি মৎস্য অবতরণকেন্দ্র নির্মাণ হয়।

সেখানে গড়ে উঠেছে ১৮৮টি দোকান। মৎস্য অবতরণের কথা বলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইজারা নেয়া জায়গাটিতে সোনালি যান্ত্রিক মৎস্যশিল্প সমবায় সমিতি নিয়ম বহিভূতভাবে গড়ে তুলে মাছ বাজার। সম্প্রতি কর্ণফুলী নদীর পাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে পরিবেশবাদীদের দাবি উঠে অবতরণকেন্দ্রটিসহ সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে। কিন্তু সোনালি যান্ত্রিক মৎস্যশিল্প সমবায় সমিতি মৎস্য অবতরণকেন্দ্রটি বাঁচাতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তারা অবতরণকেন্দ্রের সামনে বড় আকারের একটি সাইন বোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ইজারাকৃত আধুনিক মৎস্য বাজার’ তার নিচে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। সাইনবোর্ডটি পেছনে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গড়ে তুলা হচ্ছে একটি মৎস্য মার্কেট।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি কক্ষ বিশিষ্ট মার্কেটটির দোকানগুলো ক্রয় করেছেন স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী মোহাম্মদ খলিল সওদাগর, ইব্রাহিম সওদাগর, হানিফ, ফজল, হাশেম, মোহাম্মদ দিলদার, দিলদার হোসেন, বাবুল ও হাসান সওদাগর। রাতারাতি মার্কেটটি তৈরি করে তাদের দখল প্রক্রিয়াকে আরো শক্ত করছে। তার পাশে অবতরণকেন্দ্রের আরেকটি মৎস্য মার্কেটের উপরে গড়ে তুলছে একটি মসজিদ। দখল ঠেকাতে মসজিদটি গড়ে তুলা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

উচ্চ আদালতের আদেশ ও জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদের নোটিশ দেয়ার পরও কর্ণফুলী দখলের এ মহাযঞ্জ থেমে থাকছেনা।

এদিকে ঢাক ঢোল পিটিয়ে কয়েকদিন বেশ কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও এখন অদৃশ্য ইশারায় বন্ধ হয়ে গেছে সে উচ্ছেদ অভিযান।

একাধিক সূত্র জানায়, বন্দরের লিজ দেওয়া কয়েকটি স্থাপনা নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে জেলা প্রশাসন। নদীর তীরে গড়ে ওঠা একাধিক বড় স্থাপনার বিষয়ে বন্দর ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে স্মায়ু লড়াই শুরু হয়েছে।  বন্দর নদীর তীরের জায়গা লিজ দেওয়ার পর তা অনেকটা বৈধ বলে দাবি করেন লিজ গ্রহীতারা। পতেঙ্গা ও বন্দর এলাকায় একটি কন্টেইনার ডিপো ও চাক্তাই-রাজাখালী খালের তীরে মৎস্য অবতরণকেন্দ্র নিয়ে বিব্রতবোধ অবস্থায় রয়েছে জেলা প্রশাসন। বন্দর থেকে লিজ নিয়ে বিশাল এলাকা দখল করে নিয়ে গড়ে উঠেছে এসব স্থাপনা। মৎস্য অবতরণকেন্দ্র নিয়ে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা রীতিমতো তদ্বির করে যাচ্ছেন। এই নিয়ে বেকায়দায় রয়েছেন জেলা প্রশাসক।

জেলা প্রশাসন সুত্রে জানাগেছে সরকারের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযানে টাকা বরাদ্দ দেয়ার কথা থাকলেও সে টাকা না আসায় উচ্ছেদ অভিযান মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে।  ১১ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম।  তবে জরিপ ও সীমানা চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে বলে দাবি জেলা প্রশাসনের।

একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, বন্দরের ইজারা দেওয়া জায়গায় একাধিক ভবন নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন জেলা প্রশাসক। এসব কারণে উচ্ছেদ অভিযানে ভাটা পড়েছে।

হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করে জেলা প্রশাসন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি টানা ৫ দিন অভিযান চালানো হয়। এতে ১০ একরেরও বেশি জায়গায় গড়ে ওঠা ২৩০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার পর ১১ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে উচ্ছেদ অভিযান। এতে জনমনে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও শঙ্কা বিরাজ করছে। কারণ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে নদীখেকোরা তা বন্ধ করার জন্য নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল বলে অভিযোগ ছিল।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, উচ্ছেদ অভিযানের বরাদ্দের টাকা আমি এখনো ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে পাইনি। মন্ত্রণালয় বলেছে, অর্থ মন্ত্রণালয় টাকা ছাড় দিলে আমি টাকা পাব।  তিনি বলেন, ‘এখন যতটুকু উচ্ছেদ করেছি, তাতে বাউন্ডারি, তার কাঁটার ঘেরা ও পিলার দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। এই কাজ করতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেল। তার উপর আরেকটি কাজে হাত দিলে অন্যদিকে আবার বেদখল হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।