অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

বোয়ালখালী থানা এখন সালিশ বিচারে ব্যস্ত!

0
পুলিশের সালিশ না মানায় পিতা-পুত্রকে থানা হাজতে একদিন আটকে রাখা হয়।

বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে প্রতিপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে নোটিশ দিয়ে থানায় ডেকে নিয়ে কথায় কথায় গায়ে হাত তুলে, হাজতে ঢোকায় পুলিশ। সালিশি বৈঠকের নামে থানায় বিচারে বসতে এক প্রকার বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আদালতের বিচারধীন বিষয়ও রেহায় পাচ্ছে না তাতে।

সম্প্রতি বোয়ালখালী থানা পুলিশের এ ধরণের বেপরোয়া আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী।

শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের বাসিন্দা লেবু চাষি মো. রমজান আলী জানান, তাদের মৈারশী সম্পত্তির ৪০শতকের একটি জমি নিয়ে চাচা মো. ফকিরের সাথে বিরোধ চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তাদের চার ফুফু ও চার চাচার ৪০শতকের একটি জমিতে রমজানে পিতা বড় ভাই হওয়ার সুবাদে ওই জমির দক্ষিণ অংশের ১৬শতক জমি ভোগ দখলে রয়েছেন। এর মধ্যে তার এক চাচা নিরুদ্দেশ ও আরেক চাচা অসুস্থ হওয়ার সুবাদের বিরোধীয় সম্পত্তির বাকি জায়গা ভোগ দখলে রয়েছেন রমজানের চাচা মো. ফকির। এতে তিনি নারাজ হয়ে দখলে থাকা দক্ষিণ অংশে যেতে চাইছেন তিনি।

রমজানদের দখলীয় অংশ রক্ষণাবেক্ষণে বাধা দিয়ে মো. ফকির আদালতের নিষেধাজ্ঞা চান। তবে আদালত নিষেধাজ্ঞার আবেদন খারিজ করে দেয়। পরবর্তীতে বল প্রয়োগের মাধ্যমে জায়গা দখলে নিতে চাইলে রমজানের পিতা দেওয়ানী আদালতে অংশনামা ও ভাগ বণ্ঠনের আবেদন জানায়।

মামলাটি চলমান অবস্থায় থানায় ওই বিরোধীয় সম্পত্তি নিয়ে অভিযোগ দেন মো. ফকির। এর প্রেক্ষিতে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. তাজ উদ্দিন অভিযোগের বিবাদী রমজানের পিতাকে নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশ পেয়ে গত ৯মার্চ থানায় হাজির হন রমজান। ওই জমি ভাগ বণ্ঠন নিয়ে আদালতে বিচারাধীন মামলার কথা জানালে তা আমলে নেননি এসআই তাজ উদ্দিন। বাদী পক্ষের লোকজনের সম্মুখে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে, রমজানে পিতাকে হাজির করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। রমজান তার পিতার অসুস্থতার কথা জানালে এসআই তাজ উদ্দিন পরদিন বিকেল ৫টায় হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।

পরদিন ১০ মার্চ রবিবার বিকেল ৫টায় যথারীতি হাজির হন রমজান। তবে পিতাকে থানায় নিতে পারেননি। এতে ক্ষিপ্ত এসআই তাজ উদ্দিন উপস্থিত বাদী পক্ষের লোকজনের সম্মুখে গালিগালাজ করেন রমজানের প্রতি। পরবর্তীতে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের উপস্থিতিতে সময় চায় রমজান। আগামী ১৩মার্চ বুধবার বিকেলে কাগজপত্র, পিতা, সালিশকারক নিয়ে থানায় সালিশে বসবেন। এ কথা বিশ্বাস করলেন না এসআই তাজ উদ্দিন। লিখিত চান তিনি।

লিখিত কাগজে স্বাক্ষর দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে রমজানের উপর চলে লাটিচার্জ। বলা হয় ১৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হবে। প্রয়োজনে চারটি মামলা দিয়ে লাইনে আনা হবে। এতে দমেনি রমজান, ঢোকানো হয় হাজতে। পরবর্তীতে বাদী পক্ষের কোনো একজনের অনুনয়ে ও স্থানীয় সাংবাদিকদের অনুরোধে রমজান আগামী বুধবার তার পিতাকে থানায় হাজির করে সালিশি বৈঠকে অংশ নেওয়ার শর্তে লিখিত অঙ্গীকারনামা দিয়ে আপাততঃ মুক্তি পান।

রমজান স্বাক্ষর না করার বিষয়ে বলেন, পড়ালেখা বেশিদূর করিনি, তাছাড়া আমি বুঝিও না এসব কাজ কারবার। পিতাকে থানায় হাজির না করার প্রসঙ্গে বলেন, আমার পিতাকেও মারধর ও ভয় দেখিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে নিতে পারে আশঙ্কায় তিনি হাজির হননি।

পুলিশের এ ধরণের আচরণের বিষয়ে রমজান বলেন, লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে, হাজতে ঢুকিয়েছে।

এতে উপরওয়ালা ছাড়া কার কাছে বিচার চাইবো? জায়গা ওরা দখলে নিয়ে নিক, সমস্যা নেই।

আগামী বুধবার এ সালিশি বৈঠকে অপ্রীতিকর ঘটনার শঙ্কায় সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চাইছেন তিনি।

এ ব্যাপারে এসআই তাজ উদ্দিন জানান, রমজান আজকাল করায় মাথা ঠিক ছিলো না। যা হয় বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে। এতে আর কোনো ঝামেলা নেই।

গত ৯ মার্চ শনিবার মামলা বা গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়াই বৈঠকের নোটিশ দিয়ে থানায় ডেকে এনে উত্তর গোমদন্ডী ফুলচাঁন্দ চৌধুরী বাড়ীর বাসিন্দা বৃদ্ধ মো. এনামুল হক চৌধুরী (৭০) ও তার ছেলে মো.বোরহান উদ্দিনকে (৩২) একদিন হাজতবাস করিয়েছে পুলিশ।

বৃদ্ধের ভাতিজা মো. রবিউল হোসেন জানায়, বৃদ্ধের বড় ছেলে মো. হোসেনের স্ত্রীর অভিযোগে এসআই মো. তাজ উদ্দিনের নোটিশ পেয়ে থানায় যান এনামুল হক ও তার ছেলে। শনিবার সকালে বৈঠকে বসে প্রতিপক্ষের সিদ্ধান্ত মেনে না নেওয়ায় মামলায় জড়ানোর হুমকী দিয়ে তাদেরকে হাজতে ঢোকানো হয়। পরে মধ্য রাতে বিষয়টি মিমাংসা করার শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের।

এ বিষয়ে থানার উপ-পরিদর্শক তাজ উদ্দিন বলেন, যৌতুকের জন্য গৃহবধুকে নির্যাতনের অভিযোগ পেয়ে তাদের আটক করা হয়েছে। গৃহবধুকে ঘরে তুলে নিলে আপোষ হয়ে যাবে, না হয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে মামলা হবে।

স্থানীয়রা জানান, প্রায়শঃ বোয়ালাখালী থানায় এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। প্রতিপক্ষকে খুশি করতে গায়ে হাত তোলা, গালিগালাজ ও হাজতবাস করানো পুলিশ অফিসারের জন্য কোনো বিষয়ই না। থানার নির্ধারিত প্রতিজন সালিশকারকেরও জন্য দিতে হয় হাজার টাকা ফি। এ ফি প্রতিবার সালিশি বৈঠকে প্রদান করতে হয় পক্ষ ও উভয় পক্ষকে।

সকল অভিযোগ অস্বিকার করেছেন বোয়ালখালী থানার ওসি সাইরুল ইসলাম। তিনি পাঠক ডট নিউজকে বলেন, বাপ ছেলেকে ধরে আনা হয়েছে তারা নারী নির্যাতন মামলার আাসামী হিসেবে। তবে থানায় দুপক্ষের মধ্যে আপোষ মিমাংসা হয়ে যাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমার থানায় কোন অন্যায় কাজ আমি করতে দিই না। কেউ যদি আপনাদের এমন অভিযোগ করে তাহলে সেটা মিথ্যা অভিযোগ করেছে।