চট্টগ্রামের ৫ উপজেলায় ভোটার বিহীন ভোট চলছে
দ্বিতীয় ধাপে চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলায় আজ সোমবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। তবে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৫ উপজেলার বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নেই। অনেকটা ভোটার বিহীন ভোট গ্রহণ চলছে। বেলা বাড়ার পর কিছু কিছু কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিততি দেখা গেলেও সার্বিক অবস্থায় দেখা গেছে ভোট দেয়ার জন্য মানুষের মধ্যে তেমন কোন উৎসাহ বা আগ্রহ নেই।
চট্টগ্রামে শুধুমাত্র ফটিকছড়ি উপজেলায় প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী থাকায় চেয়ারম্যান পদে ভোট গ্রহণ চলছে। বাকী চার উপজেলার মধ্যে রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হওয়ায় ভোটগ্রহণ হচ্ছে না।
হাটহাজারী ও সন্দ্বীপ উপজেলায় শুধুমাত্র ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট গ্রহণ চলছে। এরমধ্যেও প্রার্থীরা একে অপরের এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশে বাধার অভিযোগ তুলেছেন। সেই সঙ্গে ভোট দেয়ার জন্য প্রার্থীর নিযুক্ত কর্মীরা ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে ধরে আনছে বলে জানিয়েছেন ভোটাররা। তবুও কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি কম।
হাটহাজারীর ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার নুরনাহার (৪৫) জানান, চেয়ারম্যান হয়ে গেছে। তবুও ভাইস চেয়ারম্যানরা বাড়িতে টিকতে দিচ্ছে না। জোর করে কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। তবে ভোটার কম হওয়ায় ভোট দিতে সময় লাগেনি।
সকাল থেকে উপজেলার অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম। সাড়ে ১০টা নাগাদ উপজেলার চারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই হাজারেরও বেশি ভোটারদের মধ্যে মাত্র ৭০-৭৫ জনে ভোট দিয়েছেন। চারিয়া সরকারি বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও একই অবস্থা। আর যারা ভোট দিয়েছেন তাদেরকে প্রার্থীর পক্ষ থেকে ধরে আনা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের পূর্ণ প্যানেলে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও ভোটারদের মাঝে এ নিয়ে তেমন তোড়জোড় নেই। সকাল থেকে প্রার্থীদের অনুসারী নেতাকর্মীরাই কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে ভোটারদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। ভোটারদের উপস্থিতি শূন্য শতাংশে চলে আসছে বলে জানান ফটিকছড়ি উপজেলার শাহনগর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং অফিসার মো. ইব্রাহিম।
মো. ইব্রাহিম বলেন, সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও ১১টা পর্যন্ত কোন ভোটার কেন্দ্রে আসেনি।
তবে বেলা বাড়ার পর দুপুর থেকে কিছু নারী ভোটার ভোট দিতে আসছে। কোন সমস্যা হয়নি, আশাকরি সুন্দর, সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ করতে পারবো।
উপজেলার জাহানপুর আমজাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শামীম হোসেন রেজা বলেন, সকাল থেকে শান্তিপুর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। ভোট শুরুর ২ ঘণ্টার মধ্যে কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। রাতেও সুষ্টু পরিবেশ ছিল।
তবে ফটিকছড়ি উপজেলায় নৌকা প্রতিকের মনোনীত প্রার্থী নাজিম উদ্দিন মুহুরী বলেন, কয়েকটি কেন্দ্রে আমার এজেন্টদের প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে। তার প্রতিদ্বন্ধী আনারস প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এইচএম আবু তৈয়ব বলেন, নৌকার প্রার্থী অনেক কেন্দ্রে এজেন্টও খুজে পায়নি। উনি এজেন্ট নিয়ে আসুক আমি ঢুকিয়ে দেব। বাগান বাজার ইউনিয়নে আমার কর্মীদেরও কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। সুষ্ঠু ভোট হলে দুই প্রার্থীই জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশা প্রকাশ করেন।
সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন কেন্দ্রেও তেমন ভোটার দেখা মেলেনি। নির্বাচনী কর্মকর্তা কর্মচারী এবং আইনশৃঙখলা বাহিনীর সদস্যদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান জানান, পাঁচ উপজেলায় ১৩ লাখ ৬২ হাজার ১২২ ভোটার ভোট দেবেন। এসব উপজেলায় ৪৯৫টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এসব উপজেলায় ৪৯৫ জন প্রিজাইডিং, তিন হাজার ৪৪১ জন সহকারি পিজাইডিং এবং ছয় হাজার ৮৮২ জন পোলিং কর্মকর্তা ভোটগ্রহণের দায়িত্বে আছেন।
এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে (ঝুঁকিপূর্ণ) দুজন করে পুলিশ সদস্য, সাধারণ কেন্দ্রে একজন পুলিশ সদস্য এবং প্রতিকেন্দ্রে ১২ জন করে আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরাও দায়িত্বে থাকবেন। পাশাপাশি র্যাব-পুলিশের একাধিক টিম নির্বাচনী এলাকায় টহলে থাকছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো থাকবে প্রশাসনের নজরদারিতে।