অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

আওয়ামী লীগ নেতা বললেন “আমাদের সাঈদী সাহেব অনেক মুসলমান বানাইছেন” (ভিডিওসহ)

4
02
তাবলীগ জামায়াতের লোকজনের সাথে কথা বলছেন ফটিকছড়ি নারায়ণ হাট ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামলীগের সভাপতি হারুন অর রশীদ। ছবি: ভিডিও থেকে সংগ্রহ করা।

‘আপনি দেশে দেশে আসতেছেন, দৌঁড়তেছেন। ভাল করতেছেন। ঠিক আছে। কিন্তু আপনাদের তাবলীগ থেকে আমাদের সাঈদী সাহেব জামায়াতে ইসলামীর হলেও উনি অনেক হিন্দুকে মুসলমান বানাইছেন। এটা সত্যি। কিন্তু আপনারা কোন তাবলীগ জামাতে একটা হিন্দুকেও মুসলমান বানাইতে পারেন নাই এখনও। বানান, এগুলো করতে হবে। আমাদের নারায়ণহাটে সার্বিক সহযোগিতা করবো ২-৪টা হিন্দুকে মুসলমান বানান।’

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নারায়ণহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামলীগের সভাপতি হারুন অর রশীদের দেয়া এ আপত্তিকর বক্তব্যে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়েছে।

তাঁর বক্তব্যের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ হওয়ার পর মূলত এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। এতে সনাতন ধর্মাবলম্বিসহ সচেতন মহলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

01
তাবলীগ জামায়াতের লোকজনের সাথে কথা বলছেন ফটিকছড়ি নারায়ণ হাট ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামলীগের সভাপতি হারুন অর রশীদ।

বক্তব্যটিতে হারুনের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উস্কানির অভিযোগ এনেছে হিন্দু,বৌদ্ধ ,খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতারা। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে তাঁকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারনের দাবী জানিয়েছেন। শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংoqgIJKLyমেলনে এ দাবী জানান ঐক্য পরিষদ নেতারা।

স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানাযায়, সম্প্রতি নারায়ণহাট দারুস সালাম জামে মসজিদে আসা তাবলীগ জামাতের একটি প্রতিনিধি দলের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে গিয়ে নারায়ণহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ হিন্দুদের মুসলমান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার আপত্তিকর ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেন।

তাঁর ওই বক্তব্যে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ‘আমাদের সাঈদী সাহেব’ বলেও সম্বোধন করেছেন।

03
তাবলীগ জামায়াতের লোকজনের সাথে কথা বলছেন ফটিকছড়ি নারায়ণ হাট ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামলীগের সভাপতি হারুন অর রশীদ।

ইউপি চেয়ারম্যানের এমন আপত্তিকর বক্তব্যটি কেউ গোপনে ভিডিও করে তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়। সূত্র জানায়, প্রায় ৩৪ সেকেন্ডের এ ভিডিও ফুটেজটি প্রথমে মো: হারুন নামে একটি ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা হয়।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, মো: হারুন নারায়ণহাটের দক্ষিণ জুজখোলা ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি। ভিডিও ফুটেজটি ফেসবুকে পোস্ট করার সাথে সাথে অনেকে তা ডাউনলোড এবং শেয়ার করেছেন। ফলে তা দ্রুত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এনিয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃস্টি হলে মো: হারুণ ফেসবুক আইডি’র ওয়াল থেকে ভিডিও ফুটেজটি রিমোভ করে দেন।

এদিকে একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের নেতা হয়ে হারুনের এমন আপত্তিকর ও সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্যে সনাতন ধর্মাবলম্বিসহ সব সহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
এ ব্যাপারে ফটিকছড়ি উপজেলা পুঁজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণহাট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রতন কান্তি চৌধুরি বলেন,‘ আমি নিজেও ভিডিও ফুটেজটি দেখেছি।

Screenshot_6
তাবলীগ জামায়াতের লোকজনের সাথে কথা বলছেন ফটিকছড়ি নারায়ণ হাট ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামলীগের সভাপতি হারুন অর রশীদ।

একজন ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের নেতা হয়ে তিনি এ ধরণের আপত্তিকর ও সাম্প্রদায়িক উসকানীমূলক বক্তব্য দিতে পারেন না। এটা অত্যন্ত দু:খজনক। তাঁর এ বক্তব্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃস্টি হয়েছে। এ নিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ নিন্দা জানিয়েছে। তিনি আরও বলেন, হিন্দুদের মুসলমান বানানোর কথার চেয়ে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হয়ে যুদ্ধপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ‘আমাদের সাঈদী সাহেব’ সন্বোধন করে তিনি আও জঘণ্য অপরাধ করেছেন। এ ধরণের সম্বোধন জঙ্গিরা করতে পারে, আওয়ামীলীগের কেউ করতে পারে না।

তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের যেসব জেলা ও কেন্দ্রিয় নেতাদের কারণে এ ধরণের লোক দলের সভাপতি পদে মনোনীত হয়, ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় ঐসব নেতারাও এরজন্য দায়ী।

আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় নেতা ও ফটিকছড়ির সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন,‘ভিডিও ফুটেজটি আমাকেও একজন দেখিয়েছে। এ বিষয়ে আমি আরও খোঁজখবর নিয়ে দেখবো।’

এদিকে, আপত্তিকর ও সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্যের ব্যাপারে চেয়ারম্যান হারুন বলেন,‘ আমার বক্তব্যের খন্ডিত অংশ প্রচার করা হয়েছে। দলের কিছু লোক ও নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী আবু জাফর আমার বক্তব্যের খন্ডিত অংশের ভিডিওটি প্রচার করে রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয়পতিপন্ন করার চেস্টা করছে। তিনি আরও বলেন, ‘এ ব্যাপারে রাউজানের পৌরসভা চেয়ারম্যান দেবাশীষ দা, হিন্দু নেতা চন্দন তালুকদার, পুঁজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল পালিতসহ অনেকের সাথে আমার কথা হয়েছে।

তাঁরাও বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।’ তাঁর এ বক্তব্যের ব্যাপারে দৃস্টি আকর্ষণ করা হলে নারায়ণহাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু জাফর মাহমুদ বলেন,‘ হারুন সাহেবের আপত্তিকর ঐ বক্তব্য দেয়ার সময় সেখানে তিনি বা তার কোন সমর্থক ছিলেন না। চেয়ারম্যান সাহেবের লোকজনই তার সাথে ছিলেন। তারাই ঐ বক্তব্য ভিডিও করে তা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।
এদিকে শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক এ বক্তব্যের জন্য চেয়ারম্যান হারুনকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ, আওয়ামীলীগের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কারসহ তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এড. রানা দাশ গুপ্ত, ইন্দু নন্দন দত্তসহ ঐক্য পরিষদ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

৪ মন্তব্য
  1. Obaid Obee বলেছেন

    হৃদয়ে যাদের বিনদু মাএ ঈমান আছে,কিছুটা হলেও কোরআান হাদিসের তথা ইসলামের গেঞান আছে,তারা অন্তত আর যাই করুক সাঈদী সাহেবের বিরোধী তা করবে না

  2. এম ইউসুফ বলেছেন

    এখানে দোষের কি আছে বলেন! এইটা নিয়ে ও রাজনীথি!

  3. এম ইউসুফ বলেছেন

    দোষের কি আছে বুঝে আসলো না সত্যি কথা বলেছেন। একজন মুসলমান হিসাবে।