অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

সারাদেশে পালিত হচ্ছে বর্ণিল দোল উৎসব

0
.

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দোল পূর্ণিমা বা হোলি উৎসব আজ। দোলযাত্রা ও গৌর পূর্ণিমা উপলক্ষে আজ দেশের বিভিন্ন মন্দিরে পূজা, হোম যজ্ঞ, প্রসাদ বিতরণসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।

দোলযাত্রা হিন্দু বৈষ্ণবদের উৎসব। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী এ দিন শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে রাঁধিকা এবং তার সখীদের সঙ্গে আবির খেলেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি। এ কারণে দোলযাত্রার দিন এ মতের বিশ্বাসীরা রাঁধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ আবিরে রাঙিয়ে দোলায় চড়িয়ে নগর কীর্তনে বের হন। এ সময় তারা রঙ খেলার আনন্দে মেতে ওঠেন।

বিশ্বের অনেক দেশে উৎসবটি শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা নামে অধিক পরিচিত হলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মাদ্রাজ, উড়িষ্যা প্রভৃতি স্থানে দোল উৎসব এবং উত্তর, পশ্চিম ও মধ্য ভারত ও নেপালে ‘হোলি’ নামে পরিচিত। কোনো-কোনো স্থানে এ উৎসবকে বসন্ত উৎসবও বলা হয়। দ্বাপর যুগ থেকে পুষ্পরেণু ছিটিয়ে রাঁধা-কৃষ্ণ দোল উৎসব করতেন। সময়ের বিবর্তনে পুষ্পরেণুর জায়গায় এসেছে ‘আবির’। সারাদেশে সকাল থেকে শুরু হবে এ উৎসব। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পরস্পরকে আবির মাখিয়ে এ উৎসব উদযাপন করবেন।

.

চট্টগ্রামে দোল উৎসবঃ 

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ-চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে আজ বিকাল ৪:৩০ টায় জে এম সেন হলে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর ৫৩৪তম আবির্ভাব তিথি গৌরপূর্ণিমা যথাযথ মর্যাদায় উদ্‌যাপন করা হবে। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন সীতাকুন্ড শংকর মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ। অনুষ্ঠানসূচিতে রয়েছে- পদাবলী ও ভজন কির্ত্তন, গৌর আরতি, গৌর নিত্যানুষ্ঠান শেষে মহাপ্রসাদ বিতরণ। অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত ও সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার দেব অনুরোধ জানিয়েছেন।

রাজধানীতে চলছে দোল উৎসবঃ

রাজধানীর পুরান ঢাকায় চলছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দোল উৎসব।

আজ বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) ভোর থেকেই পূজা অর্চনার মধ্য দিয়ে চলছে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। দোল উৎসবে কীর্তন ও নানা সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের কথা বলেন ভক্তরা।

দোলযাত্রার সকালে ভক্তরা রাধা ও কৃষ্ণকে আবির ও গুলালে স্নাত করে দোলায় চড়িয়ে কীর্তন করেন। পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভক্তরা আবির নিয়ে মেতে উঠবেন রঙ খেলায়।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ফাল্গুনী পূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রী কৃষ্ণ আবির খেলায় মেতেছিলেন রাধিকা ও গোপীদের সাথে। ধারণা করা হ ‘ সে থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি। আর সেই ধরাণাকে লালন করেই রঙের খেলায় মাতেন সনাতন ধর্মালম্বীরা।

দোলের ইতিহাসঃ

হিন্দুধর্ম ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উৎসবের আনন্দে মানবতার বাণীকেই ধারণ করে আছে যুগ যুগ ধরে। বারো মাসে তেরো পার্বণের ন্যায় হিন্দুধর্মে লেগে আছে ঋতুভিত্তিক উৎসব। এই সকল উৎসব ধর্মের গণ্ডী অতিক্রম করে সর্বমানবীয়, উদার দার্শনিক তত্ত্বে ঋদ্ধ। প্রাচীন ঋষিরা তাই হিন্দু ধর্মকে ক্ষুদ্র গণ্ডীতে আবদ্ধ করেনি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর ইতিহাস হিন্দু ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে ওতপ্রোত জড়িত। হোলিও তেমনি অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভশক্তির উত্থানের ইতিহাস।

দৈত্যরাজ হিরণ্যকিশপুর কাহিনি আমরা সকলে জানি। ভক্ত প্রহ্লাদ অসুর বংশে জন্ম নিয়েও পরম ধার্মিক ছিলেন। তাকে যখন বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও হত্যা করা যাচ্ছিল না তখন হিরণ্যকিশপুর বোন হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ হোলিকা এই বর পেয়েছিল যে আগুনে তার কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু অন্যায় কাজে শক্তি প্রয়োগ করায় হোলিকা প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করলে প্রহ্লাদের কোনো ক্ষতি হয় না কিন্তু হোলিকা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বিষ্ণু ভক্ত প্রহ্লাদের এই অক্ষতের আনন্দ উৎসবে পরিণত হয়। এই দহনকে হোলিকা দহন বলা হয়।

অন্যদিক বসন্তের পূর্ণিমার এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেশি নামক অসুরকে বধ করেন। কোথাও কোথাও অরিষ্টাসুর নামক অসুর বধের কথাও আছে। অন্যায়কারী, অত্যাচারী এই অসুরকে বধ করার পর তার রক্ত ছিটিয়ে সকলে আনন্দ করে। এই অন্যায় শক্তিকে ধ্বংসের আনন্দ মহানন্দে পরিণত হয়।