অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রামে চেক ঘষামাজা করে মিথ্যা মামলায় ব্যবসায়ীকে হয়রানী

0
প্রতারক আব্দুল আলীম। 

চেক ঘষামাজা করে প্রতারণার মাধ্যমে চট্টগ্রামে এস এম জসিম উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে আবদুল আলীম নামে প্রতারক চক্রের সদস্যের বিরুদ্ধে।

এই প্রতারণা চক্রের সাথে জড়িত রয়েছে এস এ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর ম্যানেজার (ল্যান্ড ও লিগ্যাল) মো: সাইফুদ্দিন।

জানাগেছে, এসএম জসিম উদ্দিনের দেয়া চেক ঘষামাজা করে ২০১৫ সালের স্থলে ২০১৬ বানিয়ে চেক প্রতারণা মামলায় তাকে জেল খাটায় প্রতারক চক্রটি।

পরে তদন্তে চেক জালিয়াতির বিষয়টি আদালতের কাছে ধরাপড়ে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ী ২০১৫ সালে নগরীর মাইলের মাথা এলাকায় এস এ গ্রুপের মালিকানাধীন একটি ঘর এক লক্ষ টাকা অগ্রিম প্রদান করে ভাড়া নেন ব্যবসায়ী এস এম জসিম উদ্দিন।

চুক্তি অনুযায়ী এস এ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর ম্যানেজার (ল্যান্ড ও লিগ্যাল) মো: সাইফুদ্দিনকে ২১.০৬.২০১৫ তারিখে এক লক্ষ টাকার একটি চেক প্রদান করেন জসিম। (ইসলামী ব্যাংক বন্দর টিলা শাখা, চেক নং এমসিসি ২৮১৯০৬২,তারিখ ৩০.০৬.২০১৫ ইং) শর্ত থাকে যে ৩০.০৬.২০১৫ তারিখে মধ্যে অগ্রিম বাবাদ এক লক্ষ টাকা নগদে প্রদান করে চেক প্রেরত নিবেন।

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নগদ এক লক্ষ টাকা প্রদান করে এসএ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর ম্যানেজার (ল্যান্ড ও লিগ্যাল) মো: সাইফুদ্দিন এর নিকট চেক ফেরত চাইলে সাইফুদ্দিন তা ফেরত না দিয়ে চেক পাওয়া যাচ্ছেনা বলে তালবাহানা করতে থাকে।

এরই মধ্যে ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন এস এ গ্রুপের সকল পাওনা পরিশোধ করে ১০.০৪.২০১৭ ইং তারিখে ভাড়াকৃত ঘরটি ছেড়ে দেন।

জসিম উদ্দিন পাঠক ডট নিউজকে জানান, ২০১৭ আমি জানতে পারি আমার বিরুদ্ধে আবদুল আলীম নামে এক ব্যক্তি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চেক ডিজঅনারের মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-১৯৮। আমি মামলার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি’ ২০১৫ সালে এস এ গ্রুপে (চেক নংএমসিসি ২৮১৯০৬২,তারিখ ৩০.০৬.২০১৫ ইং) আমার দেয়া সেই চেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ‘২০১৫’ স্থলে ‘২০১৬’ বানিয়ে ১৯.১০.২০১৬ তারিখে ডিজঅনার হয়েছে মর্মে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। একই সাথে ইসলামী ব্যাংকের যে কর্মকর্তার সাক্ষারে চেকটি ডিজঅনার হয়েছে বলে মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে সেই কর্মকর্তা ডিজঅনারের দিন তারিখে ছুটিতে ছিলেন। তার সাক্ষর জাল করা হয়েছে বলে আমি ব্যাংক সূত্রে জানতে পারি।

এই প্রতারণা ও জালিয়াতি চক্রের সাথে আবদুল আলীম, সাইফুদ্দিনসহ আরো অনেকে জড়িত বলে তিনি অভিযোগ করেন। এই চক্র আরো অনেক নিরীহ মানুষকে চেক জালিয়াতি ও প্রতারনার মাধ্যমে হয়রানি করছে।

জসিম বলেন, আমার চেক ঘষামাজা করে জালিয়াতি করে তারা আমার বিরুদ্ধে প্রতারণা করে মামলা দায়ের করা হয়েছে মর্মে আমি ০৬.০৫.২০১৮ ইং তারিখে চট্টগ্রাম ৫ম যুগ্ন মহানগর জজ আদালতে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করি। আদালত আমার আবেদন গ্রহণ করে চেকটি ডিজঅনার কিভাবে হয়েছে তা জনাতে সংশ্লিষ্ট এবং ‘৫’ এর স্থলে ‘৬’ হয়েছে কিনা পরীক্ষা করতে সিআইডি হস্তলিপি শাখাকে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ প্রদান করেন। সেই সাথে আদালতে এস.এ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর ম্যানেজার (ল্যান্ড ও লিগ্যাল) মো: সাইফুদ্দিন এর চাকরির আবেদন ফরম, তার নমুনা সাক্ষরের কপি আদালতে পাঠাতে এস এ গ্রুপের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজার/চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন।

আদালতের আদেশে ইসলামী ব্যাংক যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯.১০.২০১৬ ইং তারিখের চেক ডিজঅনার স্লিপে সাক্ষর থাকা ব্যাংক কর্মকর্তা মো: মেছবাহুর করিম সেই দিন ছুটিতে ছিলেন।তার সাক্ষর জাল করে চেক ডিজঅনার স্লিপ বানানো হয়েছে।

অন্যদিকে সিআইডির হস্তলিপি শাখা আদালতের আদেশে যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, চেকটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে পাওয়া যায় ‘ ৫’ স্থলে ‘৬’ বানানো হয়েছে।আদালত প্রেরিত প্রতিবেদনে সাক্ষর করেছেন সিআইডির হস্তলিপি বিশারদ ও সহকারি পুলিশ কমিশনার মো: সামসুল আলম।

আদালতের আদেশে ব্যাংক ও সিআইডি তাদের প্রতিবেদন জমা দিলেও এস এ গ্রুপ আদালতের আদেশ অমান্য করে কোন প্রতিবেদন না দেয়ায় এঘটনায় আদালত ক্ষুব্দ হয়ে ডবলমুরিং থানার ওসি নির্দেশ দেন ২১ মার্চ এর মধ্যে এস.এ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর ম্যানেজার (ল্যান্ড ও লিগ্যাল) মো: সাইফুদ্দিন এর চাকুরির আবেদন ফরম,তার নমুনা সাক্ষর সংগ্রহ করে আদালতে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য এবং এ ব্যাপারে অসহযোগিতা করলে তাকে গ্রেফতার করতেও নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু আদালতের এই আদেশ যথাসময়ে পালন করেনি ওসি ডবলমুরিং। পরে গত ২১ মার্চ এই মামলার শুনানিতে আদালত আগামী ০২ এপ্রিল ওসি ডবলমুরিংকে এই বিষয়ে সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে জবাব দিতে বলেছেন।

খবর নিয়ে জানা যায়, আবদুল আলীম একটি প্রতারক চক্রের মুল হোতা। এস এ গ্রুপের লবনের ব্রোকারীর করার মাধ্যমে এস.এস গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর ম্যানেজার (ল্যান্ড ও লিগ্যাল) মো: সাইফুদ্দিন এর তার সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। সাইফুদ্দিনের যোগসাজসে আবদুল আলীম ব্যবসায়ী জসিমকে ফাঁসাতে চেক জালিয়াতি করে এ প্রতারণামূলক মিথ্যা মামলাটি দায়ের করেন।

ব্যবসাযী জসিম উদ্দিনের আইনজীবি জুয়েল দাশ পাঠক ডট নিউজকে বলেন, আদালতের আদেশে ব্যাংক ও হস্ত বিশারদ যে প্রতিবদেন দিয়েছেন তাতে স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে আবদুল আলীম প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে জসিম উদ্দিনকে চেক ডিজঅনার মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা করেছেন। আদালতে সকল প্রতিবেদেন বিবেচনা করে মামলাটি নিষ্পত্তি করবেন। মামলা চলাকালীন সময়ে এস এ গ্রুপ ও ওসি ডবলমুরিং থানার অসহযোগিতা করেছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এছাড়া মিথ্যা মামলা করে আদালতকে বিভ্রান্ত ও হয়রানীর অভিযোগে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আদালত স্ব-প্রণোদিত মামলা করার বিধান রয়েছে।