অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

এবার এলআরবির নাম পরিবর্তন নিয়ে মুখ খুললেন আইয়ুব বাচ্চুর ছেলে

0
.

নাম পরিবর্তন হয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ডদল এলআরবির। বর্তমানে এর নাম ‘বালাম অ্যান্ড দ্য লিগ্যাসি’।

পহেলা বৈশাখে বালাম অ্যান্ড দ্য লিগ্যাসি নামে ব্যান্ডদলটি প্রথম কনসার্টও করেছে।

এনিয়ে সারাদেশে প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চুর ভক্তদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ চলছে। বাচ্চুর মেয়েও এই নাম পরিকর্তন নিয়ে ব্যান্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝেরেছেন।

এবার এ বিষয়ে মুখ খুলেছে দেশের বাইরে থাকা বাচ্চুর ছেলে আহনাফ তাজোয়ার আইয়ুব।

গত ৫ এপ্রিল ‘এলআরবি’র সঙ্গে যুক্ত হন সংগীতশিল্পী বালাম। এর পরই ২৮ বছর ধরে শ্রোতাদের হৃদয়ে গেঁথে থাকা ‘এলআরবি’ নামটির প্রায় মৃত্যু হয়।

.

বিষয়টিতে সঙ্গীতপ্রেমীদের মাঝে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই এলআরবিতে জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ও কম্পোজার বালামের অর্ন্তভূক্তি ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন। তবে বেশিরভাই বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল ঝড় বইছে এ ব্যাপারটি নিয়ে। আইয়ুব বাচ্চু ভক্তদের অনেকেই জানিয়েছেন, বাচ্চুর জায়গায় যেখানে কোনো শিল্পীকে তারা স্থান দিতে রাজি নন, সেখানে কিংবদন্তির হাতে গড়া দলটির নামই পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে! এটা অগ্রহণযোগ্য।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই এজন্য আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে দোষারোপ করেছেন।

যে কারণে আইয়ুব বাচ্চুর একমাত্র ছেলে আহনাফ তাজোয়ার আইয়ুব মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে আইয়ুব বাচ্চুর ভক্ত-অনুরাগীদের উদ্দেশে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানালেন, এলআরবি নাম নিয়ে তার ও তার পরিবারের কোনো আপত্তি নেই। এ নামেই দলটি সামনের দিকে এগুতে পারে। দলটির ভোকালে বালামের সংযুক্তি নিয়েও কোনো আপত্তি নেই তাদের।

গত ৫ এপ্রিল ২০১৯ দলটির ২৮তম জন্মদিনে প্রধান ভোকাল হিসাবে যুক্ত হয়ে বালাম জানিয়েছিলেন, তিনি কখনই আইয়ুব বাচ্চুর আসন গ্রহণ করতে পারবেন না। তার রিপ্লেসমেন্ট নেই। হতেও পারে না। তিনি শুধু দলটিকে ভালোবেসে যুক্ত হতে এসেছেন।

এরপর ব্যান্ডটির নাম পরিবর্তন করে ‘বালাম অ্যান্ড দ্য লিগ্যাসি’ রাখা হয়।

এর কারণ হিসাবে দলটির অন্যতম সদস্য গিটারিস্ট মাসুদ গণমাধ্যমে জানান, ‘বাচ্চুর পরিবারের সদস্যরা চান না, এলআরবি নাম কেউ ব্যবহার করুক। বিষয়টি আমাদের কাছে অনেক আবেগপ্রবণ। আমরা আইয়ুব বাচ্চুকে এবং এলআরবিকে অনেক বেশি ভালোবাসি। তার সম্মান রক্ষার্থে, আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এলআরবির সমর্থক ও শ্রোতার এখন থেকে বালাম অ্যান্ড দ্য লিগ্যাসি ব্যান্ডকে সমর্থন দিয়ে যাবে বলে আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করা হলেও ‘বালাম অ্যান্ড দ্য লিগ্যাসি’ আইয়ুব বাচ্চু ও এলআরবির গাওয়া গান চর্চা করবে। বিভিন্ন কনসার্ট আর অনুষ্ঠানে তা পরিবেশন করবে।

এ বিষয়ে তাজওয়ার আইয়ুব তার ওই ফেসবুস স্ট্যাটাসে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে (গত ৫ এপ্রিল) তারা যেভাবে এলআরবি নামে গান করতে চেয়েছিলেন, সেভাবেই গান-বাজনা চালিয়ে যেতে পারেন। তাদের জন্য শুভকামনা রইল। আশা করি তারা সফল হবেন ও বাবার সংগীতকে নিয়ে এগিয়ে যাবেন।’

তাজওয়ার আইয়ুব এই মুহুর্তে উচ্চতর শিক্ষার উদ্দেশ্যে কানাডায় রয়েছেন। সেখান থেকেই এলআরবি ব্যান্ডটি নিয়ে চলমান বির্তক বিষয়ে ফেসবুকে এসব কথা লেখেন।

.

আইয়ুব বাচ্চুর পরিবারের আপত্তির কারণে ‘এলআরবি’ নাম পাল্টে ‘বালাম অ্যান্ড দ্য লিগ্যাসি’ হয়ে গেছে এমন অভিযোগের জবাবে তাজোয়ার বলেন, ‘এক হাতে বাবা (আইয়ুব বাচ্চু) ব্যান্ডটি গড়ে তুলেছিলেন। শিল্পী হিসেবে তার কোনো বিকল্প নেই। তার জায়গায় কাউকে বসানো আমার পক্ষে খুব কঠিন। আমরা সবাই এটাই বলতে চেয়েছি। কিন্তু আমাদের এই কথাগুলো পুরোপুরি অন্যকিছুতে রূপ নিয়েছে।’

ব্যান্ডের দুই সদস্য ড্রামার রোমেল ও গিটারিস্ট মাসুদকে ট্যাগ করে তিনি এসব কথা বিস্তারিত লিখে আরও জানিয়েছেন, আমার পরিবার ও আমি এলআরবি সদস্যদের শুধু বলেছিলাম, তারা চাইলে অন্য ব্যান্ডের হয়ে গান করে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে বাবার সারা জীবনের কাজগুলো বেঁচে থাকবে। তিনি এ পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার দিন থেকে আমার কাছে এলআরবি বলে কিছু নেই। তার মানে এই নয় যে, তার সঙ্গীতের গুরুত্বও আমার কাছে ফুরিয়ে গেছে।’

আইয়ুব বাচ্চুর ভক্তদের উদ্দেশে তাজোওয়ার বললেন, ‘মানুষ আমার মা ও বোনকে মৃত্যুর হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছেন। মানুষেরা আইয়ুব বাচ্চুকে আমার নয় দেশের সম্পদ বলছেন। আর আমি বলব অবশ্যই এ কথা সঠিক। কিন্তু দিনশেষে তিনি আমার বাবা। তারা যদি তা মানতে নাও চান, তবুও এটাই সত্যি। আমি তারই রক্ত।’

তাজোয়ারের এই ফেসবুক স্ট্যাটসের পর এক প্রতিক্রিয়ায় এলআরবি’র সবচেয়ে পুরনো সদস্য সাইদুল হাসান স্বপন গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমার কিছুই বলার নেই। বাচ্চু ভাইয়ের মৃত্যুর দিন থেকে আমি দর্শকের ভূমিকা পালন করছি।’

এখন আইয়ুব বাচ্চুর ছেলের এমন স্পষ্ট বিবৃতির পর এলআরবি ব্যান্ডদলের ভক্ত-অনুরাগী ও সঙ্গীত ভূবনে এমন প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, ‘বালাম অ্যান্ড দ্য লিগ্যাসি’ নামটি থেকে সরে আসবেন কি দলটির সদস্যরা?