অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

আপনার সন্তানকে আয়ত্বে আনতে পারছেন না?

0
.

সাম্প্রতিক সময়ে এটা যেন অনেক বড় একটা সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে, প্রত্যেকটা শিশু কিশোরের বাবা-মায়ের মুখে একই সমস্যার কথা- “বাচ্চা দিন দিন আয়ত্বের বাইরে চলে যাচ্ছে”।

তাই আজকে এটা নিয়ে আলোচনা করবো।

যেহেতু এখনকার সময়ে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ হাতের মুঠোয় অনেক কিছু পেয়ে যাচ্ছে তাই আগেকার দিনের বাচ্চা আর এখনকার দিনের বাচ্চাদের মধ্যকার তফাৎটা চোখে পড়ার মতন। সময়ের আগেই আজকাল বাচ্চারা অনেক কিছু বুঝে ও জেনে ফেলেছে। আর এটাই আমাদের মানতে সমস্যা হয় যে, বাচ্চারা থাকবে বাচ্চাদের মতন, বড়দের মতন আচরণ করবে কেন? এখান থেকেই এইসব সমস্যার সৃষ্টি, বাচ্চারা অকারণেই বেশি জেদ করছে। বাচ্চা কোনো কথা লুকাচ্ছে না তো? বাচ্চা কি কোনো মিথ্যে বলছে!

এখন আসুন, এই সব সমস্যা থেকে বের হওয়ার কিছু সমাধান খুঁজি। যুগ যখন এগিয়ে যাবে তখন আমরা নিশ্চয়ই আমাদের সন্তানদের পিছিয়ে রাখতে রাজি নই। এজন্যেই সবকিছুর মধ্যেও যাতে কোনো সমস্যার বা জটিলতার সৃষ্টি না হয় সেই চেষ্টা করতে হবে।

সন্তানকে আয়ত্বে রাখতে নিচের টিপস মেনে চলুন-

(১) অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ক্ষমা চান
আমরা যদিও সন্তানের চেয়ে বয়সে এবং বিবেক-বুদ্ধিতে বড়, তবুও এটা মানতেই হবে যে কোনো মানুষই ভুলের বাইরে নয়। আপনি যখন বুঝতে পারছেন আপনার কোনো ভুল হয়ে গেছে এবং আপনি সেটার জন্য অনুতপ্ত, কোনো দ্বিধা না করে সরাসরি ক্ষমা চেয়ে নিন। এতে আপনি যেমন আপনার সন্তানের নিকট স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ থাকবেন তেমনি আপনার সন্তানও আপনার কাছ থেকে এই মহৎ শিক্ষাটি পেয়ে যাবে। তখন পিতামাতা ও সন্তানের মধ্যে অহেতুক দূরত্ব বা ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ থাকবে না।

(২) সব কিছু কে বয়স দিয়ে বিচার করা থেকে বিরত থাকুন
শুধু মাত্র বয়সে বড় বলে আপনি এটা অনুমান করবেন না যে আপনার সকল সিদ্ধান্ত বা কাজ সব সময় ঠিক এবং সন্তানের নিজের মতামত সব সময় ভুল। সন্তানকে সব সময় একজন আলাদা সত্ত্বার মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে তার নিজের পছন্দ-অপছন্দের গুরুত্ব দিন। তার সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন এবং তার মতামত যুক্তিসংগত হলে তা যদি আপনার মতের সাথে সাংঘর্ষিকও হয়, তবুও রিয়েক্ট না করে ঠান্ডা মাথায় মেনে নিন।

(৩) প্রশংসা করুন ধন্যবাদ দিন
আপনার সন্তান যখন কোনো ভালো কাজ করবে তখন তার প্রশংসা করে তাকে ভালো কাজে উৎসাহিত করুন। পজেটিভ কাজের জন্যে তাকে ধন্যবাদ দিন পারলে কাজের জন্যে পুরষ্কার দিন। এতে করে তার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়বে তেমনি আরো বেশি ভালো কাজ করতে উৎসাহ পাবে।

(৪) নিজের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার থাকতে শিক্ষা দিন
অনেক ছেলমেয়ে বেড়ে উঠার সাথে সাথে মিথ্যে বলার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বাবা মায়ের সাথে সম্পর্কের দূরত্ব। সন্তান যখন আপনাকে সরাসরি কোনো কিছু শেয়ার করতে ভয় পাবে তখনই তার মাঝে মিথ্যে বলে নিজের ভুলকে আড়াল করার প্রবণতা দেখা দেবে। এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার আগেই আপনার সন্তানকে নিজের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার থাকতে শিক্ষা দিন।

(৫) সঠিক-ভুল ও উপকার-অপকার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিন
সঠিক কাজের জন্যে যেমন তাকে পুরষ্কৃত করবেন তেমনি ভুল কোনো কাজ করলে কখনোই তাকে তিরষ্কার করবেন না। বরং অন্য সময় যেন এরকম ভুল না হয় সেটা সম্পর্কে বুঝিয়ে বলুন। এই ভুল থেকে বেরিয়ে আসতে তাকে সাহায্য করুন। দেখবেন যে কোনো ভুলে বা সমস্যায় পড়লে সে আপনাকেই সবার আগে বলবে এবং এর থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করবে। ফলে দ্বিতীয়বার একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না আর আপনিও থাকবেন নিশ্চিন্ত।

(৬) সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিন, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখুন
অনেক ক্ষেত্রে বাবা মায়ের ব্যস্ততার কারণে সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়ে উঠে না। ফলে সন্তান কি করছে না করছে, কার সাথে মেলামেশা করছে- কোনো কিছুর খেয়াল থাকে না। এই সুযোগে সন্তান খারাপ পথে যাওয়ার সুযোগ পায়। বাবা-মাকে এই বিষয়টাকে গুরুত্ব দিতে হবে যেন কোনো মতেই কমিউনিকেশন গ্যাপ না আসে। সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে তাদের পর্যাপ্ত সময় দিন। ছুটির দিনে বাইরে ঘুরতে যান, বাসায় নিজের হাতে রান্না করে খাওয়ান। তাদের কথা শুনুন, খেলাধুলা করুন। সন্তানকে আয়ত্বে আনতে হলে অবশ্যই সন্তানকে বুঝতে হবে, বকাঝকা করে কঠোর হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সন্তানকে পারতপক্ষে ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে রাখুন, নিজের সাথে সম্পর্ক সহজ করে নিন।

সন্তানের ভালোর জন্য অবশ্যই উপরের উল্লেখ্য বিষয় গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। সমস্যাকে কঠিন করলেই কঠিন, আবার সমস্যাকে আন্তরিক ভাবে মোকাবেলা করলে সব সমস্যারই একটা সমাধান আছে। ভালো থাকুক আপনার সন্তান, ভালো থাকুক প্রতিটি পরিবারের সকল সদস্য।